কৃষিতে কোম্পানিরাজ কায়েম করার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ কৃষক প্রতিরোধে সামিল হোন
eee

মোদী সরকারের নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ২৫ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস
পশ্চিমবাংলার জেলায় জেলায় ব্লকগুলিতে কৃষকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির ডাকে ২৫ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবসের আহ্বান জানানো হয়।

মোদী সরকারের নয়া কৃষি আইনে কৃষিপণ্যের সরকারী সংগ্রহ বা ফসল কেনার  ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। কৃষকদের ফসলের দাম সম্পর্কে যেটুকু নিরাপত্তার আশ্বাস ছিল তাও আর থাকবে না। এই আইনে বেসরকারী মান্ডি (ফসলের বাজার) গড়ে ওঠার রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এতদিন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসাবে যা ছিল এখন থেকে সেগুলির বিপণন এবং দাম ধার্য করবে বড় বড় ব্যবসায়ীদের চক্র এবং কর্পোরেটরা। বেড়ে যাবে কৃষকের অভাবী বিক্রি এবং ঋণগ্রস্ত কৃষকের আত্মহত্যা। পরিসংখ্যান বলছে দেশে প্রতি দু-ঘন্টায় এক জন কৃষক এই চরম পথ বেছে নিচ্ছেন।

ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) অব্যাহত থাকবে বলে সরকার প্রচার চালালেও তা আসলে মিথ্যা। কারণ এ জন্য কোনো আইন নেই। উল্টে বিজেপি সরকার দ্বারা গঠিত শান্তা কুমার কমিটি জানিয়ে দিয়েছে যে মাত্র ৬% কৃষক সহায়ক মূল্যের সুবিধা ভোগ করেন। সহায়ক মূল্য প্রত্যাহার ছাড়াও এই কমিটির সুপারিশে এফসিআই ও নাফেডের শস্য সংগ্রহ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে। গণবন্টন বা রেশনের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে। এভাবে কৃষিতে কোম্পানিরাজ কায়েম করতে চাইছে মোদী সরকার।

তাই নতুন করে স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ কৃষক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ২৫ সেপ্টেম্বর সারা দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবসের ডাক দেয় সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি।

মোদী সরকার চুক্তি চাষের মাধ্যমে কৃষকদের কর্পোরেটদের গোলামে পরিণত করতে চাইছে, ফিরিয়ে আনতে চাইছে নয়া জমিদারতন্ত্র। কর্পোরেটদের খাদ্য উৎপাদনের কোনো দায় নেই, মুনাফাই ওদের একমাত্র লক্ষ্য। তাই আগামীদিনে চুক্তি চাষের প্রভাবে খাদ্য উৎপাদন তথা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে। গ্রাম ভারতে দেখা দেবে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা! কেন্দ্র কৃষিকে পুরোপুরি কর্পোরেট জগতের হাতে তুলে দিতে চাইছে। সে জন্য খাদ্য শৃঙ্খলটিকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোদি সরকার। কৃষি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের যে ক্ষমতা ছিল তাও সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া হল।

নয়া নীতিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করে পণ্য মজুত করার ঊর্দ্ধসীমা তুলে দিয়ে যত খুশী মজুত করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বেড়ে যাবে মজুতদারী কালোবাজারি। ওরা মুনাফার স্বার্থে কৃত্রিম অভাব তৈরি করবে। মূল্যবৃদ্ধি চরম সীমায় পৌঁছাবে। বিজেপির আমলে কৃষকদের ঋণ বেড়ে গেছে। যেহেতু কাঁচা মাল, সেচের জন্যে বা যন্ত্রপাতিতে যা একান্ত প্রয়োজন যেমন বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দামও বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে, কৃষিতে ‘আত্মনির্ভরতা’র শ্লোগান কৃষকদের প্রতি চরম প্রতারণা।

যেসব মানুষ দেশকে ভালোবাসেন তাঁদের সবার কাছে এআইকেএসসিসি আবেদন করছে, এই বিল তথা আইনগুলির বিরোধিতা করুন। একই সঙ্গে ঋণ থেকে মুক্তি পেতে ও ফসলের পুরো দাম পাওয়ার জন্য গণমুখী সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হোন। আমরা দাবি জানাই এ রাজ্যে বিধানসভায় নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সর্বদলীয় প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে।

  • কর্পোরেট ও কোম্পানিরাজ হঠাও।
  • কৃষি ও কৃষক বাঁচাও।
  • কৃষি, কৃষক ও খাদ্য সুরক্ষা ধ্বংসকারী নয়া কৃষি আইন বাতিল কর।
  • চুক্তি চাষের নামে কৃষককে গোলাম বানিয়ে কর্পোরেট জমিদারী ফিরিয়ে আনা চলবে না।
  • রেল, খনি সহ জাতীয় সম্পদ বিক্রি করার পর এখন কৃষিকে কর্পোরেট পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।
  • কিষাণ বিরোধী মোদী হঠাও দেশ বাঁচাও।
খণ্ড-27
সংখ্যা-34