সারা ভারত কিষাণ মহাসভা (এআইকেএম)-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ভার্চুয়াল মিটিং অনুষ্ঠিত হয় গত ৫ সেপ্টেম্বর। সমস্ত জেলা থেকে রাজ্য কমিটি সদস্যরা মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি ও আশু কাজ সম্পর্কে আলোচনা হয় এবং তার ভিত্তিতে কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
১) গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে যাওয়া ও প্রচার কর্মসূচী : আয়ারলা ও আদিবাসী সংগঠনের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন জেলায় ঘরে ঘরে যাওয়ার কর্মসূচী শুরু করতে হবে। লকডাউনে চাপিয়ে দেওয়া চরম সংকটের এই সময়কালে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কৃষক বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এবং কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পগুলি, যা অনেকটাই কাগজে কলমে রয়েছে, কার্যকরী করার দাবিগুলি তুলে ধরা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি ও কৃষক বিরোধী নীতিগুলি আড়াল করে এ রাজ্যে বিজেপির ‘কৃষক দরদী’ বা ‘বিরোধী দলে’র মুখোশ খুলে দিতে হবে। একইসাথে শাসক টিএমসি-র অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে তাকে জনগণের প্রতিবাদ প্রতিরোধের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ও উদ্যোগী কৃষিজীবী, যারা সবচেয়ে বঞ্চিত সেই অনথিভূক্ত ভাগচাষি, চুক্তিচাষি সহ গরিব চাষিদের দাবিগুলির উপর জোর দিতে হবে। এদের কৃষিঋণ তথা কেসিসি কার্ড দেওয়া ও ফসলবীমা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ঋণ মুক্তি সহ অন্যান্য জরুরি দাবিগুলিও তুলে ধরতে হবে। এটা সরকারের কর্পোরেটমুখী কৃষিনীতির পাল্টা কর্মনীতির প্রশ্ন, গ্রামাঞ্চলে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে। পাশাপাশি কৃষকদের কাছ থেকে উঠে আসা বিভিন্ন জ্বলন্ত দাবি ও বিষয়গুলি জানা বোঝার লক্ষ্যে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ঘরে ঘরে যাওয়ার কর্মসূচী সফল করে তুলতে হবে।
২) এলাকা স্তরে কর্মসূচী : বর্তমান লকডাউনের পরিস্থিতিতে উপরিস্তরে সম্ভব না হলেও নীচু তলায় এলাকা স্তরে আলোড়নমুখী কর্মসূচী গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। ইস্যুগুলি নিয়ে নিবিড় ভাবে ও লেগেপড়ে থেকে চেষ্টা চালালে এ প্রশ্নে সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য জনগণের প্রকৃত দাবিগুলি নির্দিষ্ট করতে হবে। যথা আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতি, আমফান ঘুর্ণিঝড়ে কৃষি ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, ব্যপক দুর্নীতি-দলবাজি সহ বিভিন্ন দাবি, ফসলের লাভজনক দাম, ডিজেল-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, জমির প্রশ্ন সহ গ্রামোন্নয়নের নানান দাবি প্রভৃতি। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিভিন্ন এলাকায় রাজ্যের শাসক দলের আধিপত্যর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর উঠে আসছে। একে তুলে ধরে প্রতিরোধ সংগঠিত করার দিশায় এগিয়ে যেতে হবে। কৃষিঋণ সম্পর্কে সার্বিকভাবে এক অনুসন্ধান কর্মসূচী হাতে নিতে হবে।
৩) আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঋণমুক্তির দাবিতে কর্মসূচী এবং ৫ অক্টোবর ব্লক কৃষি দপ্তরে বিক্ষোভ ডেপুটেশন কৃষকদের দাবিগুলি নিয়ে আগামী ৫ অক্টোবর ব্লকের কৃষি দপ্তরে (এডিও) বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচী সংগঠিত করতে হবে। এজন্য সাধারণ দাবিগুলি নিয়ে একটা প্রচারপত্র তৈরি করা হবে, যার সাথে জেলা বা এলাকার নির্দিষ্ট দাবি যুক্ত করা হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর কৃষিঋণ মুক্তির দাবিতে জেলা বা মহকুমা স্তরে বিক্ষোভ ডেপুটেশনে আয়ারলার সাথে এআইকেএম যুক্ত থাকবে। এজন্যও যৌথ প্রচারপত্র প্রকাশ করতে হবে। কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্স নিয়ে একটি সহজবোধ্য প্রচারপত্র / পুস্তিকা দ্রুতই প্রকাশ করা হবে।
করোনা সংক্রমনের কারণে এআইকেএম-এর রাজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি ও সদস্য সংগ্রহ স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে ঘরে ঘরে যাওয়ার সাথে সদস্য সংগ্রহ পুনরায় শুরু হবে। এ বিষয়ে জেলাগুলি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেবে।
৪) আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হবে, ঐ দিন দিল্লির বুকে এক কিষাণ সমাবেশের ডাক দিয়েছে এআইকেএসসিসি
দাবি – কৃষক বিরোধী অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার কর! সারা দেশ জুড়ে ঐ দিন প্রতিবাদ দিবস পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। জেলা স্তরে যৌথ বা নিজস্ব ব্যানারে এ নিয়ে কর্মসূচী গ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হবে।