শ্রম মন্ত্রকের সামনে শ্রম বিধি বিলের কপি পোড়াল এআইসিসিটিইউ
gec

গত ১৬ সেপ্টেম্বর এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত বিভিন্ন ইউনিয়ন শ্রম শক্তি ভবনের সামনে প্রস্তাবিত শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম বিধি বিলগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করে। এই ভবনেই রয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক। মোদী সরকার ৪৪টা গুরুত্বপূর্ণ শ্রম আইন বাতিল করে শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। দীর্ঘদিন বাদে শুরু হয়েছে সংসদের অধিবেশন, আর এই বাদল অধিবেশন এমনভাবে “পরিকল্পিত” হয়েছে যাতে কোটি-কোটি শ্রমিক ও কৃষকের স্বার্থ জড়িত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন ও আলোচনাকে এড়িয়েই বিল পাশ করানো যায়। যেভাবে এইসব প্রশ্নে সমস্ত বিরোধিতাকে এবং শ্রমিক শ্রেণীর আকাঙ্খাকে অগ্ৰাহ্য করা হচ্ছে এবং সেই সমস্ত আইন প্রণয়নে তৎপরতা দেখানো হচ্ছে তা সরকারের শ্রমিক-বিরোধী ও কর্পোরেটপন্থী অবস্থানকেই দেখিয়ে দিচ্ছে। এবারের বাদল অধিবেশনে শ্রমিক স্বার্থের চরম বিরোধী তিনটি বিল পেশ হওয়ার কথা – বৃত্তিগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কাজের পরিবেশ সংক্রান্ত শ্রম বিধি বিল, সামাজিক নিরাপত্তা বিধি বিল এবং শ্রম বিধি বিল।

যে সাংসদরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন তাঁরা শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়ে ভাবিত নন বলেই মনে হয়। যেভাবে বেতন সংক্রান্ত বিলটি পাশ হয়ে গেল তাতে এই কথাটাই সুস্পষ্ট হচ্ছে। বাম দলগুলোর এবং অন্যান্য গুটিকয়েক সাংসদরা ছাড়া দল নির্বিশেষে ব্যাপক সংখ্যক সাংসদই বেতন সংক্রান্ত বিলের অবলীলায় পাশ হয়ে যাওয়ার পথকে প্রশস্ত করতেই ভোট দিলেন। মোদী সরকার বেহায়ার মত বলছে যে, লকডাউনের সময় কত শ্রমিক মারা গেছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, অথচ তারাই এখন আশা করছে যে বাকি তিনটে বিলকেও তারা বিনা বাধায় পাশ করিয়ে নিতে পারবে।

গত কয়েক বছর ধরে বড়-বড় কর্পোরেট সংস্থা এবং সরকারপন্থী পরামর্শদাতারা একটা বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরছেন-আর সেটা হল ব্যবসা করাকে সহজ করে তোলা। এটা ঘুরিয়ে সরকারের শ্রমিক বিরোধী নীতি চালুর ওকালতি ছাড়া অন্য কিছু নয়। এই সমস্ত নীতি যে কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে নিয়োজিত ও প্রান্তিক অংশগুলোর যন্ত্রণাকে বাড়িয়ে তোলে তা প্রশ্নাতীত। সরকার একদিকে অল্প সংখ্যক অতি ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির পথকে সহজসাধ্য করে তুলছে, অন্যদিকে শ্রমিকদের দাসত্ব ও নিঃস্বতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।

শ্রম আইনগুলোকে বাতিল করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ইউনিয়নের কর্মীরা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের সামনে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী বিধি বিলের কপিগুলো পোড়ান। দিল্লী পুলিশ এআইসিসিটিইউ-র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজিব ডিমরি, দিল্লী এআইসিসিটিইউ-র সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে সন্তোষ রায় ও শ্বেতা রাজ এবং অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের মন্দির মার্গ ও পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় আটক করে। সমবেত বিক্ষোভকারীদের সামনে তাঁর ভাষণে রাজিব ডিমরি বলেন, “মোদী সরকার মনে করছে যে তারা কোনো ধরনের প্রতিরোধের মুখোমুখি না হয়েই শ্রম আইনগুলোকে বাতিল করার পথে এগিয়ে যেতে পারবে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলছি, এআইসিসিটিইউ এবং অন্যান্য লড়াকু ইউনিয়ন রাস্তায় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। অতিমারী, বেকারি এবং মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতির মতো সমস্যাগুলোর সমাধানে এই অধিবেশন ডাকা হয়নি, তা ডাকা হয়েছে শ্রমিক-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী বিল ও অধ্যাদেশগুলো পাশ করানোর জন্যে।” তিনি আরও জানান, এআইসিসিটিইউ-র দেশব্যাপী প্রতিবাদের অংশ হিসাবে বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানী ও জেলাগুলোর শ্রম দপ্তরের সামনেও এই ধরনের প্রতিবাদ সংগঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাদল অধিবেশন চলার প্রত্যেক দিনই এই ধরনের প্রতিবাদ সংগঠিত হবে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো ২৩ সেপ্টেম্বর এক যৌথ প্রতিবাদ সংগঠিত করার ডাক দিয়েছে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-34