স্বনিযুক্ত গোষ্ঠীগুলোর নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে তাদের সুরাহা করার দাবিতে আয়ারলা ১৬ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর একমাস ব্যাপী প্রচার আন্দোলন সংগঠিত করে। করোনা অতিমারী সৃষ্ট সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থাই সুরাহার এই দাবিকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। বিচার বিবেচনাহীনভাবে চালু করা লকডাউন জনগণের মধ্যে অনাহার ও প্রায়-অনাহারের ঘটনাগুলোকে বাড়িয়ে তুলেছে। জীবিকা ও কর্মসংস্থানের অভাব গ্ৰামীণ অর্থনীতিতে ধস নামিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লুটেরা মাইক্রোফিনান্স সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করে তাদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করাটা সরকারের কর্তব্য।
নারী ও গ্রামীণ দরিদ্ররা যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন তাকে সামনে আনতে আয়ারলা, এআইপিডব্লিউএ এবং সিপিআই(এমএল) গত ১৫ সেপ্টেম্বর বড় আকারে ও উদ্দীপিত প্রতিবাদ সংগঠিত করে। হাজার-হাজার মহিলা ও পরিযায়ী শ্রমিক এই প্রতিবাদগুলোয় অংশ নেন। ব্যাপক সংখ্যক মানুষের অংশগ্ৰহণ এবং প্রতিবাদগুলো যে সাড়া পেয়েছে তার থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার : গ্রামীণ জনগণ কোভিড-১৯-এর চেয়েও বেশি ভয় পাচ্ছেন ঋণদাতাদের হাতে শোষিত হওয়া ও হেনস্থার সম্ভাবনাকে। কর্মহীনতা ও অর্থনৈতিক বিপন্নতা গ্রামীণ দরিদ্র ও নারীদের কাছে একটা অতিমারী রূপেই দেখা দিয়েছে।
এই প্রতিবাদগুলো বিহারে একটা আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। পাটনা, সিওয়ান, মধুবনি, দ্বারভাঙ্গা, সমস্তিপুর ও অন্যান্য স্থানে সংগঠিত হয়েছে বড়-বড় প্রতিবাদ। এই প্রচার আন্দোলনের ফলে আগামী নির্বাচনে ঋণভার থেকে সুরাহা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠবে এবং জেডিইউ ও বিজেপিকে এই প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট সমাধানের কথা বলতে হবে। প্রতিবাদে অংশ নেওয়া জনগণ ক্রোধের সঙ্গে প্রশ্ন তুলছেন – শুধু অতি ধনীদের সুবিধা দিতেই ‘মকুব’ ও ‘স্থগিতাদেশের’ ঘোষণা হচ্ছে কেন, সর্বনাশের কবলে পড়া নারী ও গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য এই ধরনের ঘোষণা হচ্ছে না কেন? কর্মহীনতা, ক্ষুধা ও পরিবারকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখবে তা নিয়ে গ্ৰামীণ জনগণ যখন ভেবে কূল পাচ্ছেন না, তখন ঋণদাতা রক্তচোষারা তাদের নির্যাতন করছে। এই পরিস্থিতিতে জনগণ দাবি জানাচ্ছেন বিহারে নীতিশ সরকার এবং কেন্দ্রে মোদী সরকার ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত ঋণ আদায় স্থগিত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
সংগঠিত প্রতিবাদগুলো থেকে দাবি ওঠে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অবিলম্বে এই সমস্ত বিষয়ে সুরাহা প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে – ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত রাখতে হবে, নেওয়া ঋণের ওপর সুদ প্রদান থেকে রেহাই দিতে হবে এবং গোষ্ঠীর নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার কমাতে হবে। আর প্যাকেজ ঘোষণা করা না হলে লাগাতার আন্দোলন চলতেই থাকবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের ব্যাঙ্কগুলো থেকে ঋণ পায় না বলেই নারী ও গ্ৰামীণ দরিদ্ররা মাইক্রো ফিনান্স সংস্থাগুলো থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। আয়ারলা ও এআইপিডব্লিউএ লাগাতার এই বিষয়টাকেই তুলে ধরছে যে – স্বল্প মেয়াদে সরকারকে এই মাইক্রো ফিনান্স সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে, এবং দীর্ঘ মেয়াদে সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে আর্থিক সহায়তা জোগাতে হবে।