রাজ্যের অন্যান্য জায়গার সাথে শিলিগুড়ি শক্তিগড় ব্রাঞ্চ কমিটির পক্ষ থেকে বৃষ্টির উপেক্ষা করেই যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করা হয় খাদ্য আন্দোলনের শহীদদের। দাবি করা হয় – খাদ্যের অধিকার প্রত্যেকের বুনিয়াদী অধিকার, গণবন্টনব্যবস্থা শক্তিশালী করে সবার খাদ্য-সুরক্ষা, খাদ্য-নিরাপত্তা সুনিশ্চিত কর। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, জেলা সম্পাদক অভিজিত মজুমদার এবং শাশ্বতী সেনগুপ্ত।
১৯৫১ সালের ৩১ আগস্ট যাদবপুর স্টেশনের কাছে সন্ধ্যাবাজার এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহিদ হন সন্ন্যাসী সর্দার। যাদবপুর স্টেশনের পাশে সর্দার পাড়ায় তাঁর বাড়ি। ‘শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটি’-র পক্ষ থেকে ৩১ আগস্ট সন্ধ্যাবাজারে সন্ন্যাসী সর্দারের শহিদ বেদিতে মাল্যদান করা হয়। বিগত দু’বছর ধরে ওই শহিদ বেদি ‘শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটি’র পক্ষ থেকে সংস্কার করে, রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। সাথে সাথে, গণআন্দোলনের শহিদদেরও স্মরণ করা হয়। যাদবপুর লোকাল কমিটির সংগঠকদের সাথে স্থানীয় আরএসপি’র প্রতিনিধিরা ও এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
লকডাউনের মধ্যেও নদীয়া জেলায় খাদ্য আন্দোলনের শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান সংগঠিত হয়। ধুবুলিয়া পার্টি অফিস সংলগ্ন শহীদ বেদীতে মাল্যদান করে পার্টির জেলা সম্পাদক সুবিমল সেনগুপ্ত, রাজ্য নেতা কাজল দত্তগুপ্ত সহ পার্টি কর্মীরা গ্রামীণ গরিবদের অধিকারের দাবি নিয়ে ব্লকে বিক্ষোভ কর্মসূচী নেওয়া এবং গ্রামীণ গরিবদের ঘরে ঘরে যাওয়ার কর্মসূচীকে সফল করে তোলার শপথ গ্রহণ করেন। বহু সংখ্যক গ্রামীণ গরিব মানুষ আজও রেশনকার্ড পায়নি। অনুরূপ কর্মসূচী সংগঠিত হয় কৃষ্ণনগর জেলা পার্টি অফিসে। অংশগ্রহণ করেন স্বপন দাস, নদে সাহা, নীহার ব্যানার্জী প্রমুখ শহর লোকাল কমিটির নেতাকর্মীরা।
বজবজে জেলা পার্টি অফিসের সামনে ও বাখরাহাটে বিষ্ণুপুর-সাতগাছিয়া লোকাল কমিটির পার্টি অফিসের সামনে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। রক্তপতাকা উত্তোলন করে পার্টি নেতৃত্ব বক্তব্যে তুলে ধরেন আজকের সময়ের খাদ্য অধিকার আন্দোলনের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি।
১ সেপ্টেম্বর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবসে কলকাতার চৌরঙ্গীতে মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১৭ বাম দলের এক বিক্ষোভ কর্মসূচী সংগঠিত হয়। ঐ স্থান থেকে শুরু করে হোচিমিন মূর্তি পর্যন্ত ফুটপাথে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে বামপন্থী নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা লাল পতাকা প্ল্যাকার্ডে সুসজ্জিত ভাবে স্লোগানের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। স্লোগান ওঠে – সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক। এশিয়া,আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা থেকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ হাত ওঠাও। ভারতীয় উপমহাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নজরদারি বন্ধ কর। আমেরিকা-ইজরায়েল-ভারত সামরিক অক্ষ বানানো চলবে না। দেশের জল, জঙ্গল, জমি, খনি ও প্রাকৃতিক সম্পদ দেশি বিদেশি কর্পোরেট কোম্পানিকে বিক্রি করা চলবে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দোসর ভারতীয় ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক।
৩১ আগস্ট সকালে ১৯৫৯ সালের খাদ্য আন্দোলন এবং ১৯৯০ সালের মূল্যবৃদ্ধি ও বাসভাড়া বৃদ্ধি বিরোধী আন্দোলনের শহীদ স্মরণে সিপিআই(এমএল) নেতৃবৃন্দ কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে উপস্থিত হন। এছাড়া ১৬টি বাম ও সহযোগী দলের বিভিন্ন রাজ্য নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত হলে সরকারি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একজন একজন করে ভেতরে ঢোকার নিয়মবিধির কথা জানানো হয়। বলা হয়, সাংবাদিকরা ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পাবেন না, গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বাম নেতৃবৃন্দ এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। তারা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে, দূরত্ব বজায় রেখে যদি প্রতিবারের মতো মাল্যদান ও শহীদ স্মরণ করা হয় তাতে আপত্তি করা হচ্ছে কেন? বিগত ২৮ আগষ্ট এ রাজ্যের শাসকরা তো দিব্যি কলকাতার মেয়ো রোডে তাদের দলীয় কর্মসূচী পালন করেছে, তাহলে বিরোধীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারী করা হচ্ছে কেন? পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানায়, উপরের নির্দেশ আছে। এর পর বামপন্থী নেতৃবৃন্দ গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর এ জাতীয় হামলার প্রতি ধিক্কার জানিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে বাইরে দাঁড়ান। সম্মিলিত স্লোগান সহকারে একজন একজন করে গিয়ে শহীদ বেদীতে মাল্যদান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন।
এছাড়া বেহালার কালিতলা পার্টি অফিসে, বাঘা যতীন মোড়ে, বাঁশদ্রোণির বেলতলায় খাদ্য আন্দোলনের শহিদদের প্রতি সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।