শব্দ : ভারাভারা রাও
seod

স্বার্থের পরতে পরতে পিষ্ট শব্দগুলোকে
জাগাতে হবে ঝাঁকুনি দিয়ে,
জোর করে হাঁটাতে হবে
পঙ্গু হাত পা নিয়ে স্রেফ ডানার জোরে
আবার উড়তে পারে কিনা দেখতে হবে।

দীর্ঘ খরার পরে প্রথম বৃষ্টি যেমন
আর কারো নয়, আমার দগ্ধ কানে
আমারই নিজস্ব ভুবনে আশ্চর্য সুধা বর্ষণ করে
যেভাবে আকাশ
হারানো মৌসুমীকে ফিরে পেয়ে আত্মহারা হয়
তেমন এক কোলাহলময় পৃথিবীর মাটিতে
আমি ফুটে উঠতে চাই।

বড় সাধ হয় আরো একবার
স্কুলে আর কমিউনে
শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষের কাছে
নতুন করে বলতে শিখি,
ইতিহাসের প্রত্যেক ক্ষেত থেকে
নতুন করে তুলে আনি অক্ষরের ফসল।

তেমন গর্জন ছাড়া
আমার ভিতরে এতকাল জমে থাকা নৈঃশব্দ্য
কী করে বিস্ফোরণ ঘটাবে?

প্রতিধ্বনি বিস্ফোরক না হলে
বহুকালের দুর্বোধ্য দৃশ্য
কেমন করে ঝকমকিয়ে উঠবে?

আমাকে আরো একবার বলতে শিখতে হবে
মানুষের কমিউনে মানুষের কথা শুনে;
আমাকে শব্দের কাছে বাঁধা পড়তে হবে
তার আদেশ মানতে হবে।
শব্দের সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করে
তার কোন উত্তরাধিকার থাকে না।

শব্দকে দুর্বল করতে পারে না কোন শক্তি।
কালের গনগনে ফার্নেসে
ভীম বেগে নেমে আসা হাতুড়ির আঘাতে আঘাতে
এখনই আমার ভাষা নির্মাণের সময়।

(ভারভারা রাওয়ের কবিতাটি অনুবাদ করেছেন প্রতীক, যিনি স্বনামে কবিতা ও হুতোম ছদ্মনামে গদ্য লেখেন। সমকালীন রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক বোধে অনুবাদকের সম্মতিতে কবিতাটি দেশব্রতীতে প্রকাশিত হল। সেই সাথে রাখা হল অনুবাদকের মন্তব্যটিও।)

var

 

“আর পাঁচটা কূপমণ্ডূক বাঙালির মতো আমারও ইংরেজি জানা আছে, হিন্দি ছবি দেখি অনেক, বলতেও পারি কাজ চালানোর মতো। ফরাসী, স্প্যানিশ, জার্মান শিখতেও ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে। কেবল অন্য কোনো ভারতীয় ভাষা শেখার প্রয়োজন অনুভব করি না। দক্ষিণের ভাষাগুলোর প্রতি অবজ্ঞা তো তামিলকে আন্ডু পান্ডু বলে ঠাট্টা করা আর তেলুগুকে আজীবন তেলেগু বলে আসা দিয়েই পরিষ্কার। ফলে ভারাভারা রাওয়ের কবিতা তাঁর ভাষায় হয়ত এজন্মে পড়া হয়ে উঠবে না। কিন্তু কবিদের প্রতি যে কোনো কারণেই হোক আমার বিশেষ পক্ষপাত। উপরন্তু ইনি বামপন্থী। এমন একজনকে বিনা বিচারে নির্দিষ্ট অভিযোগের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও রাষ্ট্র আটকে রেখেছে এতদিন — হজম করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। খবরে প্রকাশ কবির পরিবার আশঙ্কা করছেন তিনি আর বেশিদিন বাঁচবেন না। আর কিছু তো করতে পারছি না, তাই ইন্টারনেটে তাঁর ইংরেজিতে অনূদিত একটা কবিতা পড়ে বাংলায় অক্ষম অনুবাদের চেষ্টা করলাম।

কী আর করা যাবে? আমার ভাষার সক্ষম কবিদের তো এসব করার সময় নেই। তাঁরা কেউ রাষ্ট্রের পক্ষে, তো কেউ মিষ্টি মিষ্টি মিলের কবিতা লিখতে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয় না, এই ভাষায় কেবল সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মার্কামারা বামপন্থী কবি লেখেননি, রবীন্দ্রনাথের মতো লোক লিখেছেন, যিনি রাজনৈতিক নেতারা কী প্রতিক্রিয়া দেবেন ঠিক করতে পারার আগেই নিজের পুরস্কার ত্যাগ করেছিলেন।”

খণ্ড-27
সংখ্যা-26