৫ আগস্ট ছিল কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সরোজ দত্তের শহীদ দিবস। প্রত্যেক বছর এই দিনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচী পালন করা হয়, তাঁর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষের মুক্তি সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অঙ্গীকার করা হয়।
কিন্তু এবারের ৫ আগস্টের দিনটি ছিল নজিরবিহীন অতিমারী ও সম্পূর্ণ লকডাউন কবলিত। তার ফলে ঐ দিনটি পালনের কর্মসূচী সংগঠিত করার পরিস্থিতি ছিল বিশেষ প্রতিকূল। তাই রাজ্য পার্টি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শহীদ সরোজ দত্তের স্মরণ কর্মসূচী পালন করা হয় তার আগের দিন ৪ আগস্ট। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের ৪-৫ তারিখের মাঝরাতে তদানীন্তন কংগ্রেসের সিদ্ধার্থ রায়ের পুলিশ সরোজ দত্তকে গ্রেপ্তার করে ভোর হওয়ার আগেই নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। তারপর থেকে পশ্চিমবাংলার রাজপাটে বারবার শাসকের বদল হয়েছে, কিন্তু সরোজ দত্তের হত্যাকান্ডকে আজ পর্যন্ত কোনও সরকার সরকারীভাবে স্বীকার করেনি। তাঁকে সিদ্ধার্থ রায়ের জমানায় উল্লেখ করা হোত ‘নিখোঁজ’ বলে। তারপরে পালা বদলের পরে বামফ্রন্ট আমলে বলা হোত, গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে সরোজ দত্তের ফাইলটাই পাওয়া যায়নি। আর, টিএমসি সরকার এব্যাপারে নীরবতার কৌশলই নিয়ে চলেছে। অবশ্য, বিগত বামফ্রন্ট সরকার কলকাতার কার্জন পার্কে সরোজ দত্তের আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠার সিপিআই(এমএল) লিবারেশানের দাবি মেনে নেয়। তারপর থেকে দু’দশকেরও বেশি সময় যাবত প্রতি বছর ৫ আগস্ট এমনকি ঝড়বৃষ্টির পরোয়া না করে ঐ মূর্তিস্থলের সামনে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের কর্মসূচী পালন হয়ে এসেছে। কেবল এবারই অতিমারী ও লকডাউনের চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে দিনটি পালনের ছন্দ বদল করে তার আগেরদিন নেওয়া হয় শহীদ স্মরণ কর্মসূচী। ঐদিন পার্টির রাজ্য সম্পাদক সহ রাজ্য কমিটির উপস্থিত সদস্যবৃন্দ, পার্টি অফিস ও পত্রিকা বিভাগের কর্মীরা তথা কলকাতা জেলার কমরেডরা কার্জন পার্কে সরোজ দত্তের আবক্ষ মূর্তিতে এবং পার্টির রাজ্য অফিস চত্বরে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া শহীদ স্মরণ কর্মসূচী পালন করা হয় জেলায় জেলায়। ধ্বনি-প্রতিধ্বনি ওঠে শহীদ কমরেড সরোজ দত্ত লাল সেলাম, শহীদের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ।