বিজেপি-আরএসএস-এর সাংস্কৃতিক জগতে ক্ষুদিরামের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ‘মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল’!
khu

জি নিউজ চ্যানেল সম্পর্কে কম-বেশি ধারণা আমাদের সবারই আছে। এসেল গোষ্ঠীর নামে পঞ্জীকৃত একটি সংস্থা জি চ্যানেলের মালিক। এসেল গোষ্ঠীর কর্ণধার হল সুভাষ চন্দ্র। এই সুভাষ চন্দ্র বিজেপির সদস্য, এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এসব হলো পোশাকি পরিচয়। আজ সারা দেশে জি নিউজ চ্যানেল বিজেপির মুখপত্র বলেই পরিচিত। সরকারের তাবেদারী করতে যাবতীয় ভুয়ো খবর, অপ্রাণিত তথ্য, এমনকি মনগড়া গল্পকেও খবরের নামে চালায় জি নিউজ। এক কথায় জি হলো তথাকথিত ‘গোদি মিডিয়ার’ পোস্টার বয়।

আজকাল, জি গোষ্ঠী, সেই একই এসেল গোষ্ঠির মালিকানায় নতুন ওয়েবস্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম (OTT) শুরু করেছে। তার নাম জি-ফাইভ। এই প্লাটফর্মে ‘অভয়’ নামে একটি সিরিজ চলছে কিছুদিন ধরে। এটা একটা ক্রাইম ড্রামা। সিরিজের গুণমান নিয়ে না হয় অন্য কোথাও মন্তব্য করা যাবে। কয়েকদিন আগে, এই সিরিজের দ্বিতীয় সিজন শুরু হয়। এই নতুন সিজনের দ্বিতীয় এপিসোডের একটি দৃশ্যে দেখা যায় যে সিরিজের প্রোটাগোনিস্ট পুলিশ অফিসার থানায় এক সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। দৃশ্যের এক কোণে সেই থানার ক্রিমিনাল ডিসপ্লে বোর্ড। সেই বোর্ডে সেই থানার আয়ত্তাধীন এলাকার নানাবিধ পলাতক অপরাধীদের ছবি। সেই ছবিগুলির মধ্যে একটি ছবি হলো শহীদ স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসুর। মানে, একজন শহীদকে ঠাঁই দেওয়া হল দাগি আসামিদের সাথে! এই দৃশ্য নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আপত্তি উঠতে শুরু করে। নেটনাগরিকরা জোরালো ভাষায় এর প্রতিবাদ জানান। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এক, একটা সিরিজ যখন তৈরি হয়, তখন কোনো একক ব্যক্তি সেটা করেন না। একটা বড়-সড় দল লাগে একটা প্রোডাকশন সামলাতে! সেই দলের কারুরই কি চোখে পলড়লো না বা মনে দাগ কাটলো না এই কাণ্ডটা!

বিক্ষোভ প্রবল হলে, চ্যানেলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়। ব্যাপারটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। নিজের বয়ানে চ্যানেলের তরফ থেকে বলা হয় যে ‘কোনো ব্যক্তি ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ কে আহত করার উদ্দেশ্য তার ছিল না দর্শকদের অভিমতকে মাথায় রেখে ওই বিশেষ দৃশ্যকে ঝাপসা করে দেওয়া হবে।’

ধৃষ্টতার মাত্রাটা ভেবে দেখুন। জি ফাইভ মনে করে যে ক্ষুদিরামের দৃশ্য ব্যবহার তা কোনো এক বিশেষ সম্প্রদায়ের (পড়ুন বাঙালি) ভাবাবেগ কে আহত করেছে। ক্ষুদিরাম কি কোনো সম্প্রদায় বিশেষের স্বাধীনতার জন্যে আত্মত্যাগ করেছিলেন! কতটা ইতিহাস বিদ্বেষী হলে কেউ এই কথাটা বলতে পারে। আসলে সমস্যাটা মানসিকতার। সম্প্রদায় আর সাম্রদায়িকতার বাইরে আমাদের দেশের কিছু লোক কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। আর জি চ্যানেল সেরকম লোকেই ভরা।

এবার আসা যাক ‘ভাবাবেগের’ প্রশ্নে। এটা আরো সমস্যাজনক। ক্ষুদিরাম তথা সকল শহীদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী আমাদের ইতিহাসের অংশ। কোনো পৌরাণিক কাহিনীর অলীক চরিত্র নন তাঁরা। তাঁদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অন্ধ ভক্তির নয়, শ্রদ্ধার, ভালোবাসার। আমরা তাদের কাছ থেকে শিখি, তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করি, অনেক সময়ে বিতর্কও করি। আর এটাই বোধ হয় ইতিহাস বোধ আর পৌরাণিক আস্থার মধ্যে সবচেয়ে বড় ফারাক। তাই বিজেপির চেলা আরএসএস এর টেনিয়া জি ফাইভ যেটা করেছে সেটা ইতিহাস বিকৃতি, ভাবাবেগে আঘাত নয়! আর ইতিহাস বিকৃতিতে ওদের যে জুড়ি নেই! আসলে কি বলুন তো? আরএসএস হলো এদেশের একমাত্র রাজনৈতিক ঘরানা, যাদের কোনো শহীদ নেই। এহেন লোকজনের দেশপ্রেমী শহীদকে চিনতে ভুল হওয়ার কারণটা অজানা নয়।

-- বিস্ময় বসু  

খণ্ড-27
সংখ্যা-29