বিবৃতি
জনদরদী ডাক্তার কাফিল খানকে মুক্ত কর -- প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও
kaf

"মোটা ভাই আমাদের মানুষ হতে বলছে না, বলছে হয় হিন্দু হও অথবা মুসলমান"

২৭ জুলাই এলাহাবাদ হাই কোর্টে ডাক্তার কাফিল খানের শুনানি ছিল। কিন্তু তারিখ আবারও পিছিয়ে দেওয়া হল। এই নিয়ে গত পাঁচ মাসে এলাহাবাদ হাই কোর্ট মোট ১২ বার কফিল খানের মামলার শুনানি পিছলো। ১৩ ডিসেম্বর সিএএ বিরোধী এক সভায় বক্তব্য রাখার পর তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করে ইউপি পুলিশ, ২৯ জানুয়ারী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় মহারাষ্ট্রে একটি সিএএ-বিরোধী সভায় যোগদান করার সময়, ১০ ফেব্রুয়ারী আলীগড় আদালত তাঁর জামীন মঞ্জুর করে। কিন্তু আদালতের রায় অমান্য করে সরকার তাঁকে বেআইনিভাবে জেলে আটকে রাখে। আদালতের রায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আলিগড়ের ম্যাজিস্ট্রেট মথুরা জেলের কর্তৃপক্ষের কাছে কাফিল খানের জামীন কার্যকর করার নির্দেশ পাঠানোর পরও তাঁকে ছাড়া হয় না। তিনদিন পর তাঁর বিরুদ্ধে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করে রাজ্য সরকার এবং আলিগড় থেকে সরিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় মামলাটি। তারপর থেকে ১২ বার শুনানি পেছানো হল।

২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে গোরখপুরের এক হাসপাতালে অক্সিজেন সাপ্লায়ের অভাবে ৭০ জন শিশুর মৃত্যু হয়। ডাক্তার কাফিল খান নিজের প্রচেষ্টায় অক্সিজেন জোগাড় করে কিছু শিশুকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। একদিকে গণ হারে শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ি মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথের প্রতি মানুষের ধিক্কার, অন্যদিকে কাফিল খানের জনদরদী কাজের খবর – এই পরিস্থিতিতে যোগির সরকার কাফিল খানের বিরুদ্ধেই চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে মামলা করে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে। দেশ জুড়ে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় যোগি সরকার একটি ওয়ান-ম্যান কমিশন বসায়। এই কমিশন কাফিলের কোনও দোষ খুঁজে পায়নি, বরং তাঁর প্রশংসা করা হয়, বলা হয় যে শিশুদের এই মারণ রোগএর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগেই ওই হসপিটালটির শিশু রোগ বিভাগের দায়িত্ব থেকে ডাক্তার কাফিল খান পদত্যাগ করেছিলেন, রোগ ছড়ানোর খবর হতেই তিনি নিজে এসে আবার পদে যোগ দেন, অক্সিজেন সরবরাহ বা পেমেন্ট সংক্রান্ত দায়িত্ব তাঁর ছিল না, নিজের চেষ্টায় বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ৫০০ বড়ো সিলিন্ডার অক্সিজেন জোগাড় করে অনেক শিশুর প্রাণ রক্ষা করেন। ২০১৯-এর এপ্রিলে কমিশনের এই রিপোর্ট জমা পড়ার পর কাফিল জামিন পান দীর্ঘ ন’মাস জেলে থাকার পর। সেপ্টেম্বরে আদালত তাঁকে সমস্ত অভিযোগ থেকে করে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করে। সাধারণ মানুষ এই জনদরদী ডাক্তারকে বিপুল সম্বর্ধনা দেয়, কিন্তু যোগি আদিত্যনাথ সমগ্র বিষয়টিকে “ড্রামা” বলে বিষোদ্গার করে এবং সরকারের বদনাম করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আবার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে। জুন মাসে কাফিলের ভাই কাসিফ জামিলের ওপর প্রাণঘাতী হামলা হয়, দেহে তিনটি বুলেট নিয়েও কোনোমতে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

এবছর ২৭ জুলাই আরেকবার তাঁর মামলার শুনানি পেছানো হল। জামিন পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে এনএসএ আরোপ করা হয়। এই আইনে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয় তার কোনও ব্যাখ্যা নাই। কাফিল খান ঠিক কীভাবে জাতীয় সুরক্ষা বিঘ্নিত করেছেন তা জানতে চাইলে জানানো হয় যে সিএএ বিরোধী সভায় ডাক্তার কাফিল খান বলেছিলেন, “মোটা ভাই আমাদের মানুষ হতে বলছে না, বলছে হয় হিন্দু হও অথবা মুসলমান”। বলা বাহুল্য, ‘মোটা ভাই’ বলতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে বোঝানো হচ্ছে, এবং আমরা সকলেই জানি যে কাফিল সাধারণ একটি সত্য কথাই বলেছেন। দেশ ও জাতির সুরক্ষা ও সুস্থতার সামনে সবচেয়ে বড়ো বিপদ তো অমিত শাহ ও তার দলবল।

খণ্ড-27
সংখ্যা-26