গত ১০ ও ১১ আগস্ট সিপিআই (এমএল)-এর মুজাফ্ফরপুর পার্টি অফিসের ওপর দুর্বৃত্তরা ভয়াবহ আক্রমণ চালালেও পুলিশ দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের কোন চেষ্টা তো করেই না, বিপরীতে তাদের মদত যোগায়। পার্টির বিহার রাজ্য সম্পাদক কুনাল পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তাকে ধিক্কার জানিয়েছেন। আক্রমণের এই ঘটনার তদন্তে পার্টির তরফে তিন সদস্যের এক কমিটি গঠন করা হয় -- দলে ছিলেন পলিটব্যুরো সদস্য ধীরেন ঝা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনা তেওয়ারি এবং দারাউলি কেন্দ্রের বিধায়ক সত্যদেও রাম। তদন্তকারীরা তাঁদের রিপোর্টে জানিয়েছেন, জল জমা সমস্যার সমাধান না হওয়ায় পার্টির নেতৃত্বে নগর উন্নয়ন মন্ত্রী এবং বিজেপি বিধায়ক সুরেশ শর্মার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ পরিচালিত হচ্ছিল। এছাড়া পার্টি অফিস সংলগ্ন স্থানে একটি রাস্তার দাবিতেও স্থানীয় জনগণ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ১০ আগস্ট পার্টি অফিসে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় জনগণের সমস্যা সমাধানে ৫ ফুট চওড়া একটা রাস্তা তৈরি হবে। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যাতেই ৩৫-৪০ জন বিজেপি সমর্থক ও গুণ্ডা মদ্যপ অবস্থায় অফিসে ঢুকে ভাঙচুর ও মারধর চালাতে থাকে। ওরা বলে রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত মানা হবে না, আর সেখানে সিপিআই (এমএল)-এর পতাকা না তুলে বিজেপির পতাকা ওড়াতে হবে। অফিসে উপস্থিত পার্টি নেতা ঋষি ঠাকুরের ১৫ বছরের ছেলে সুরেশ ঠাকুরের গলাটিপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে, ঋষি ঠাকুরকেও রড দিয়ে মারা হয়। অফিসে উপস্থিত অন্যরাও ওদের হামলা থেকে রেহাই পায় না। স্থানীয় মিঠনপুর থানায় অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ কোনো সক্রিয়তা দেখায় না। পরদিন ১১ আগস্ট মধ্যরাতে স্থানীয় মিঠনপুর থানার পুলিশ, বজরং দলের সদস্য এবং দুর্বৃত্তরা মিলে পার্টি সমর্থকদের বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে পরিবারের লোকজনদের মারধর করতে থাকে।
পুলিশি বর্বরতা থেকে রেহাই পায়নি মহিলারাও। মাঝরাতে পুলিশ লাইন কানহাউলির বিভিন্ন বাড়িতে ১০-১২ জন পুরুষ পুলিশ ঢুকে এআইপিডব্লিউএ-র সদস্যা এবং ছাত্রছাত্রী সংগঠন এআইএসএ-র সঙ্গে যুক্ত ছাত্রীদের মারধর করে, গালগালি দেয় ও দুর্ব্যবহার করে, ছাত্রীদের এবং তাদের বাড়ির লোকজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে।
এই পুলিশি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মুজাফ্ফরপুর জেলা শাসকের অফিসের সামনে আইপোয়া-র নেতৃত্বে ধর্ণা সংগঠিত হয়। আইপোয়া বিভিন্ন দাবি জানিয়ে জেলা শাসক এবং এসপির কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। ওই স্মারকলিপিতে মিঠনপাড়া থানার প্রধান অফিসার ভগীরথ প্রসাদকে সাসপেন্ড করা ও তার অপকর্মের জন্য তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, আহত মহিলাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, আইসার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগ তুলে নেওয়া এবং আইপোয়া-আইসা-সিপিআই(এমএল) অফিসে আক্রমণ চালানো দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্ৰেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
সিপিআই(এমএল)-এর ওপর এই আক্রমণের পিছনে যে বিজেপির রাজনৈতিক আক্রোশ কাজ করেছে তা নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। বিজেপি নেতা ও মন্ত্রী সুরেশ শর্মাই এই হামলার মূল চক্রী। নীতীশ কুমার দাবি করে থাকেন যে “বিহার মে বাহার হ্যায়”, অর্থাৎ, বিহারে সবকিছুই অত্যন্ত ভালোভাবে চলছে। কিন্তু তা যে সর্বৈব মিথ্যা তা পরের পর ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে। প্রশাসন-দুর্বৃত্ত গাঁটছড়া যে বিহারে এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সিপিআই(এমএল)-এর ওপর হামলা তাকে আরও একবার প্রকট করে তুলল।