২৯ তারিখে ক্যাবিনেট অনুমোদন করল নয়া শিক্ষা নীতির খসড়া। শিক্ষাক্ষেত্রে সকলের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যই নাকি রয়েছে এই শিক্ষানীতিতে। অন্তত এমনই দাবি সরকারের। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে ঠিক এর বিপরীতটাই উঠে আসছে। সমাজে আর্থিক ও সামাজিকভাবে যারা রয়েছেন প্রান্তসীমায়, এই খসড়া তাদের আরও বেশি কোনঠাসা করে দিল।
* যে কোনো সময়ে উচ্চশিক্ষায় ঢোকা ও বেরিয়ে আসার সুযোগটা একমাত্র অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী সামাজিক স্তরের জন্য তুলে রাখা হল, যাতে তারা তাদের ডিগ্রী সম্পূর্ণ করতে পারে। আর গরিব ছাত্রদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে ডিপ্লোমা নিয়ে। এর বিকল্প কী হতে পারতো? সকলের জন্য সরকার বৃত্তির সুযোগ দিতে পারতো, যাতে নিজেদের বা পরিবারের জন্য রোজগারের চিন্তায় না থেকে তারা তাদের ডিগ্রী সম্পূর্ণ করতে পারতো।
* উচ্চশিক্ষা ম্যাকডোনাল্ডের দোকানের মতো যেন “ক্রেডিট ব্যাঙ্কে” রূপান্তরিত হচ্ছে। যার দেদার পয়সা আছে, সে খরচ করতে পারবে অনেক বেশি। ঠিক যেমন, যার বেশি পয়সা আছে, সে ম্যাকডোনাল্ডের দোকান থেকে চিজ=এ ঠাসা বার্গার ও নরম পানীয় কিনবে, কিন্তু অন্যদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে সাদা মাটা এক বার্গারে।
* কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বশাসন হবে স্তরভিত্তিক। প্রতিষ্ঠানগুলোর মান-নির্ভর করবে স্বশাসনের মাত্রার উপর। যার মান যত উপরে, সে ততই বাড়াতে পারবে ফি। ফলে গরিব ছাত্ররা শিক্ষার গুণমান থেকে ছিটকে পড়বে।
*প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই নিজেদের শংসাপত্র দেবে। সেটা আর যাচাই করা হবে না। ফলে, এক একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষাপ্রদানের পদ্ধতি, পরিকাঠামো, ফি ও অন্যান্য সবকিছু নিজেদের মনমতো নির্দিষ্ট করবে।
* প্রথম ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর অনলাইন শিক্ষাপ্রদানের জোর পড়েছে। প্রান্তিক ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাঙ্গন থেকে দূরে রাখতে এটা একটা পদক্ষেপ। দূর শিক্ষার (ডিস্টান্স এডুকেশন) এর উপর গুরুত্ব আরোপ শিক্ষার মূল ভাবনার বিরুদ্ধেই যাচ্ছে।
* ইউজিসি ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অবসান ঘটিয়ে তৈরি হচ্ছে শিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যেটি অর্থকরী, সিলেবাস ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজকর্মগুলোকে দেখভাল করবে। গভর্নরদের বোর্ড নিয়ে পরিচালনা করার এই মডেল সব কিছুকে কেন্দ্রীভূত করে ধ্বংস করবে স্বায়ত্ততা ও শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষতাকে।
* নয়া শিক্ষানীতি ঘোষণা করেছে, বেসরকারী ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোনো ফারাক টানা হবে না। এর অর্থ, সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরকার নিজের আর্থিক সাহায্য বিরাট মাত্রায় কাটছাঁট করবে।
* অন্তর্ভুক্তির মুখোসের আড়ালে বিযুক্তির এক মারাত্বক বন্দোবস্ত করেছে এই নয়া শিক্ষানীতি। আইসা শীঘ্রই এ নিয়ে বিস্তারিতভাবে তার মূল্যায়ন রাখবে। এক ঝলকে দেখলে বোঝা যাবে, এই খসড়া হল শিক্ষার বেসরকারীকরণ, যার প্রধান মতলবই হল ব্যাপক সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীকে এর বৃত্তের বাইরে রাখা।
এই শিক্ষা বিরোধী খসড়াকে আইসা প্রত্যাখান করছে। দাবি জানাচ্ছে, এটা বাতিল করে আগে সংসদে তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হোক।