সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ শ্রমিক সমিতি (আয়ারলা) জাতীয় কার্যকরী কমিটির বৈঠক থেকে এক মাসব্যাপী লাগাতার আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, তামিলনাড়ু, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িষা ও উত্তরপ্রদেশের বিস্তারিত রিপোর্টের ভিত্তিতে এই কর্মসূচী ঘোশিত হয়েছে। জাতীয় কার্যকরী কমিটির প্রেরিত সার্কুলারে বলা হয়েছে, এক মাসব্যাপী এই প্রচার-আন্দোলন-অভিযানে মূল জোর থাকবে ‘গ্রাম থেকে গ্রামে, ঘর ঘর চলো’। গ্রামের প্রত্যেক পাড়ার প্রতিটি ঘরের সাথে দেখা করতে হবে। এই গণসংযোগ অভিযানই হবে সূচনাবিন্দু। ৩১ আগস্ট ব্লক-সদরে ব্লক স্তরের বিক্ষোভ সংগঠিত হবে। আর ১৫ সেপ্টেম্বর জেলাস্তরে সংগঠিত হয়ে জেলা-সদরে বিক্ষোভ সংগঠিত হবে। এই বিক্ষোভ প্রদর্শনগুলিরে নির্দিষ্ট রূপ বা ধরন কী হবে তা আয়ারলার রাজ্য কমিটিগুলি নিজ নিজ পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করবেন। সবরকম করোনা সতর্কতা বিধি সহ জমায়েতগুলি করতে হবে এবং অতি অবশ্যই সমস্ত বিক্ষোভের সময় আন্দোলনের শ্লোগান ও দাবিগুলিকে পোস্টার-প্ল্যাকার্ডে সুস্পষ্টভাবে তুলে-মেলে ধরতে হবে। নিম্নলিখিত পাঁচটি প্রশ্নে নজর কেন্দ্রীভূত করা হবে :
১) সমস্ত পরিযায়ি শ্রমিক ও জবকার্ড (মনরেগা) শ্রমিক সহ সব ধরনের গ্রামীণ শ্রমিকদের ১০,০০০ টাকা করোনা লকডাউন ভাতা দিতে হবে।
২) কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প(মনরেগা)-কে সব সীজনের প্রকল্প হিসেবে বিকাশ ঘটাতে হবে। প্রত্যেক পরিবারের প্রত্যেককে বছরে অন্তত ২০০ দিন কাজ ও ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি দিতে হবে। এই প্রকল্পকে শহর পঞ্চায়েত অবধি প্রসারিত করতে হবে এবং কৃষিকাজের সাথেও একে যুক্ত করতে হবে।
৩) সকলের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রেশন সরবরাহ করতে হবে, রেশনে যুক্ত করতে হবে বিভিন্ন ডাল, তেল, মসলা, সাবান ও মাস্ক।
৪) ‘স্বনির্ভর গোষ্ঠি’, ‘জীবিকা মিশন গ্রুপ’ ও কৃষকের সমস্ত ঋণ মকুব কর। কৃষকদের কিষান ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য ঋণ মকুব করতে হবে।
৫) ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শ্রেণী ঐক্যকে জোরালো কর। নয়া শিক্ষানীতির বিরোধিতা কর, এই নীতি গরিব প্রান্তিকদের প্রবঞ্চনার উদ্দেশ্যে প্রণয়ন হয়েছে। রেল, ব্যাঙ্ক, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি সরকারি সংস্থা ও দেশের সম্পদ উৎস বেচে দেওয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াও। কৃষক-বিরোধী কৃষি-বিরোধী অধ্যাদেশগুলি এবং পরিবেশ-বিরোধী ‘ইআইএ ২০২০’ প্রতিরোধ কর।
পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই আয়ারলার নেতৃত্বে ঋণমুক্তির প্রশ্ন সহ গ্রামীণ শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে আন্দোলন গতি পেতে শুরু করেছে। এই মাসব্যাপী অভিযান সেই লড়াইকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। জাতীয় কার্যকরী কমিটির বৈঠকের পর আয়ারলার রাজ্য সম্পাদক সজল অধিকারী জানিয়েছেন, প্যানডেমিক পর্যায়ে ভারত জুড়ে বেশ কিছু রাজ্যে আয়ারলার জোরালো উদ্যোগের ক্ষেত্রগুলি ছিল খাদ্য-নিরাপত্তা সংক্রান্ত (রিলিফ ও রেশন), করোনা সচেতনতায় উদ্যোগ, প্রবাসী মজুরদের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের সংগঠিত করা, এনআরইজিএ-তে জবকার্ড ও কাজ আদায়, সামন্তী অত্যাচার ও উচ্ছেদ বিরোধী এবং বনভূমি থেকে আদিবাসী উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলন ও প্রতিরোধ, সর্বোপরি ঋণ-মুক্তির আন্দোলন। এসত্ত্বেও প্যানডেমিকের এই সময়ে যে মাত্রায় ও বিস্তৃতিতে মানুষ বিপর্যস্ত, বিপন্ন এবং বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারগুলোর চরম ব্যর্থতার পাশাপাশি সরকার গৃহীত একের পর এক পদক্ষেপে শ্রেণীবৈষম্য দিনের আলোর স্পষ্টতা নিয়ে সামনে আসছে, সেসময় গ্রামীণ মেহনতিদের অগ্রণী সংগঠন হিসাবে দেশজুড়ে আয়ারলার উদ্যোগ আরও ব্যাপক হওয়া প্রত্যাশিত। গ্রাম ও আধাশহুরে এলাকার বিপন্ন মানুষ, মেহনতিদের সংগঠিত করতে, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে আমাদের দিক থেকে আরো অনেক বেশি উদ্যোগ প্রয়োজন।