ট্রেড ইউনিয়নগুলির আহুত ৯ আগস্ট কর্মসূচীর রিপোর্ট
deerar

১ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত এআইসিসিটিইউ সারা ভারত জুড়ে “দেশ বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও” কর্মসূচী গ্রহণ করে, আর ৯ আগস্ট কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলো “ভারত ছাড়োর” ঐতিহাসিক দিনে দেশব্যাপী আইন অমান্য/সত্যাগ্রহের কর্মসূচী নেয়।

কলকাতায় সেই কর্মসূচী পালিত হয় ৬ আগস্ট ও ৯ আগস্ট তারিখে। ৬ আগস্ট এআইসিসিটিইউ’র নির্মাণ শ্রমিক, মিড-ডে-মিল কর্মচারি ও রিক্সাচালক ইউনিয়নের পাশাপাশি অ্যাপোয়া এবং পরিচারিকাদের সংগঠন সমবেতভাবে যাদবপুরের ৮বি-র সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। লকডাউন পর্যায়ে থেকে শুরু করে আগামী ৬ মাস সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের মাসিক ১০,০০০ টাকা প্রদানের দাবিতে, বিলগ্নিকরণ-বেসরকারীকরণ ও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলোকে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলে। ওই দিন বেহালার মুচিপাড়ায় এআইসিসিটিইউ ও আইসা সন্ধ্যেবেলায় সভা করে।

drad

 

৯ আগস্ট সকালে ঢাকুরিয়ায় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো যুক্তভাবে মিছিল ও সভা করে। সেখানে এআইসিসিটিইউ’র থেকে বক্তব্য রাখেন বাসুদেব বোস। কলকাতার বুকে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির দুটো বিক্ষোভ কর্মসূচী হয়, একটা ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে, আরেকটা রানু ছায়া মঞ্চের সামনে। ৬ ও ৯ আগষ্টের বিক্ষোভ সভাগুলিতে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ইন্দ্রাণী দত্ত, চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী, অতনু চক্রবর্তী, বাসুদেব বোস, শুক্লা সেন, মিথিলেশ সিং, শুভদীপ সরকার প্রমুখ।

উত্তর ২৪ পরগণা - এআইসিসিটিইউ কামারহাটি শাখা ৯ আগস্ট শপথ ‘শ্রমিক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ কর্মসূচী সংগঠিত করে। সকালে বাদাম তলা, পূর্ব বেলঘরিয়ায় সিআইটিইউ এবং এআইসিসিটিইউ-র যৌথ কর্মসূচী হয়। এছাড়া বিকেলে আগরপাড়া জুটমিল গেটের যৌথ কর্মসূচীতে আইএনটিইউসি এবং এআইইউটিইউসি সামিল ছিল।

পশ্চিম বর্ধমান - পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহরের প্রাণকেন্দ্র হটন রোডে যৌথ মিছিল হয় শ্রমিক সংগঠনগুলির। লকডাউন পরিস্থিতিতেও তাতে যোগদান করে কোলিয়ারী শ্রমিকরা এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিকরা, ও তাদের প্রতিনিধিরা। এই মিছিল আসানসোলের একটি বড় অংশ অতিক্রম করে।

asan

 

রেল শহর চিত্তরঞ্জনে মূলত বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি সংযুক্ত প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে আমলাদাহি বাজার অঞ্চলে। রেল সহ কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থাগুলিকে এক এক করে কর্পোরেটের হাতে বিক্রি করে দেওয়ার বিরুদ্ধে, শ্রমিক সংগঠন ও শ্রম আইন বিলুপ্তিকরণের বিরুদ্ধে এবং শ্রমিকদের ভাতা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।

পশ্চিম বর্ধমানের অন্তর্গত ‘জেমারি বাসস্ট্যান্ডের’ কাছেও পালিত হয় যৌথ কর্মসূচী। সবধরণের শ্রমিক, কৃষি ও নারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে। সর্বশেষে প্রতীকী রাস্তা অবরোধ করে শেষ হয় এই কর্মসূচী। দুর্গাপুর, আসানসোল, বার্ণপুর, হিন্দুস্তান কেবলস, চিত্তরঞ্জন সহ বিপুল শিল্পাঞ্চলকে এক এক করে মরুভূমিতে পরিণত করার যে চক্রান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে তার বিরুদ্ধে পশ্চিম বর্ধমানের সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষদের একত্রিত হয়ে লাগাতার প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয় এবং পরবর্তীকালে আরও বড় এবং লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে ‘এআইসিসিটিইউ’ লড়বে খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার ও স্বার্থের লড়াইয়ের অংশীদার হয়ে।

দার্জিলিং জেলা - ৯ আগস্ট শিলিগুড়ির সেবক মোড়ে এআইসিসিটিইউ সহ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলি যৌথভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে। শ্রম আইন পরিবর্তন করা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারীকরণ, বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধেও সোচ্চার বিক্ষোভ কর্মসূচী থেকে আওয়াজ ওঠে ফ্যাসিস্ট মোদি-শাহের থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করো, সাম্প্রদায়িক বিজেপি ভারত ছাড়ো। সংবিধান বাঁচাও, দেশ বাঁচাও, কাজ বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও। খড়িবাড়ি বিত্তান জোতে ভারত বাঁচাও দিবসের কর্মসূচী পালিত হয়ে এআইসিসিটিইউ-র পক্ষ থেকে।

gee

 

হুগলি - হুগলি জেলায় বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচী পালিত হয়, বিভিন্ন ছাত্র যুব সংগঠন এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন । সকালে কোন্নগর জিটি রোডের  বাটা বাস স্টপেজে অনুষ্ঠিত সভায় আরওয়াইএ-র  যুব সাথীরা প্ল্যাকার্ড, ঝান্ডা নিয়ে কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন বক্তারা বক্তব্য তুলে ধরেন এবং সভার শেষে জিটি রোধ অবরোধ করা হয়, রাজ্য পুলিশ অবরোধ তোলার নামে হুমকি দেয়, সেই হুমকিকে অগ্রাহ্য করেই, দাঙ্গাবাজ, শ্রমিক বিরোধী মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অবরোধ চলে। বিকেলে চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিটু, ইউটিইউসি, টিইউসিসি এবং এআইসিসিটিইউ সংগঠনের শ্রমিক সাথীরা অংশগ্রহণ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। এআইসিসিটিইউ-র নির্মাণ ও পরিবহন  শ্রমিকরা লাল ঝান্ডা নিয়ে সুসজ্জিতভাবে কর্মসূচীতে অংশ নেন ।

হাওড়া - কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহের ডাকে ৯ আগস্ট কেন্দ্র ও রাজ্যে সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী নীতিগুলির বিরূদ্ধে ভারত বাঁচাও কর্মসূচী পালন হয়! সভা শুরুর প্রথমে প্রয়াত বিশিষ্ট ট্ৰেড ইউনিয়ন নেতা কমঃ শ্যামল চক্রবর্তীর উদ্যেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়! সভায় এআইসিসিটিইউ-র হাওড়া জেলা সভাপতি দেবব্রত ভক্ত তাঁর বক্তব্যে বলেন যে ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ভারত ছাড়ো ডাক দেওয়া হয়েছিল, আজ বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো একটা একটা করে বেচে দিচ্ছে, দেশকে বেচে দিচ্ছে, দেশের সম্পদ বেচে দিচ্ছে, দেশের মানুষকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার প্রাথমিক শর্তকে ভেঙে কর্পোরেট অধীনতার দিকে নিয়ে চলেছে। ব্রিটিশ বিরোধী সেই ঐতিহাসিক স্লোগানই আজ নতুনভাবে সোচ্চারিত!

খণ্ড-27
সংখ্যা-28