ঋণ মুক্তির লড়াইয়ে মহিলারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, ছড়িয়ে পড়ছে লড়াই
loan

গত ১৯ জুলাই পুর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের মামুদপুর ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ গ্রামে শতাধিক গ্রামীণ গরিব মেহনতী মহিলা বৈঠকে সামিল হন। এই বৈঠকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এই পরিবারগুলো বন্ধন সহ আরও কিছু মহাজনী সংস্থার ঋণের দায়ে জর্জরিত। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও অংশগ্রহণ ছিল। বৈঠকে ১৭ জনের একটি ঋণ মুক্তি কমিটি তৈরি হল। অন্যান্য গ্রামে সংগঠন বিস্তার করার পরিকল্পনা হয়। আগামী ৩১ মার্চ ২০২১ সাল পর্যন্ত ঋণের কিস্তির টাকা শোধ না করার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিস্তির টাকা জোর করে আদায় করতে এলে সমস্ত মহিলারা জমায়েত হয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ঋণমুক্তির দাবিপত্র প্রচার করার সিদ্ধান্ত হয়। এলাকার মানুষের মধ্যে ভাল উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বৈঠকের পরিচালনা করেন আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমন মন্ডল। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা সম্পাদক কমরেড সলিল দত্ত।

২০ জুলাই বর্ধমান সদর ১নং ব্লকের বন্ডুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কামারকিতা গ্রামে ৫০ জন মহিলা বৈঠকে আসেন। মূলত বন্ধন ও আরও দু-একটি মহাজনী সংস্থার ঋণগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি ছিল। কমরেড চাঁপা হাজরার উদ্যোগে মহিলাদের এই জমায়েত। লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষের কাজ নেই। চরম অর্থনৈতিক সংকট, তার উপর ঋণের দায়ে গরিব মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিস্তির দায়ে অনেককে ১২০% সুদে নতুন ঋণ করতে হচ্ছে। সাধারণভাবেই এই ধরনের ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো যেভাবে ২৪% সুদে ঋণ দিয়ে থাকেন। ঋণ দেওয়ার পরের সপ্তাহ থেকেই কিস্তির টাকা শোধ করতে হয়। তাতে সাধারণ ভাবেই একসময় ঋণ ফাঁদে পড়ে যাওয়ার অনিবার্যতা আছে। কর্পোরেটদের পুঁজি মুনাফার স্বার্থেই গ্রামের গরিব মানুষের শ্রমের অংশই সুদ হিসাবে নিংড়ে নিচ্ছে। এই সরকারেরও কোন মাথা ব্যথা নেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রতিনিয়ত সুদ কমাচ্ছে। কিন্ত এদের সুদ আদায়ের ক্ষেত্রে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বন্ধনকে দেখলেই বোঝা যায় কিভাবে ২০ বছরে ফুলে ফেঁপে উঠে ডানা বিস্তার করেছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে গ্রামের গরিব মেহনতীদের স্বনির্ভর করার কথা বললেও কার্যত সরকারের এই ব্যাপারে সেই রকম কোনো উদ্যোগ নেই। ১০/১৫ জনের একটা গোষ্ঠীর জন্য কয়েক লক্ষ টাকার ঋণ দিয়ে এবং একবার কিছু অনুদান দিয়েই দায়িত্ব পালন করেছেন বলে প্রচার করেন। আবার এই অনুদানের টাকার ক্ষেত্রেও চলে কাটমানি আদায়।

গত বছর পুর্বস্থলী ১নং ব্লকের নাদনঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর চার শত মহিলা বিডিও অফিসে বিক্ষোভ ডেপুটেশনে যায়। সেখানে তাঁদের প্রধান দাবি ছিল অনুদানের টাকা থেকে টিএমসি নেতাদের কাটমানি আদায়ের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য টিএমসি নেতারা গ্রামে সন্ত্রাস তৈরি করেন। মহিলাদের বাড়ির লোককে মারধর হুমকি এমনকি নেতৃত্বে থাকা একজন মহিলার শ্বশুর ও বাড়ীর লোককে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে মহিলাকে ঘরে আটকে রাখতে বাধ্য করেন। বর্তমানেও ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। কিন্ত বর্তমান লকডাউনের পরিস্থিতির কারনে মানুষের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। ভয় এবং টোপের সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই মানুষ প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই নিজেরা উদ্যোগ নিচ্ছেন। এখানে আয়ারলার জেলা কমিটির সদস্য কমরেড সমীর হাজরা ও পার্টির জেলা সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

হুগলি জেলার আন্দোলনের প্রভাবে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে ফোনে যোগাযোগ করেন। সেই সূত্রে ২১ জুলাই প্রবল বর্ষণের মধ্যে জামালপুর ব্লকের কয়েকটি গ্রামে বৈঠক করা হল। আয়রলার রাজ্য সম্পাদক সজল অধিকারী, পুর্ব বর্ধমান সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা কমিটির সদস্য কুনাল বক্সী ও জেলা সম্পাদক সলিল দত্ত এই বৈঠকগুলোতে উপস্থিত ছিলেন। জৌগ্রামে ৫০ জন মতো মহিলা জমায়েত হয়েছিলেন। ঋণ থেকে মুক্তি লাভের আন্দোলনে ভালো আগ্রহ দেখা গেল। নিজেদের মধ্যেই গ্রামে প্রচার করার উদ্যোগ নেবেন তাঁরা। কিছুদিনের মধ্যেই ব্লকের বিডিও অফিসে গণডেপুটেশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নবগ্রাম গ্রামেও বৈঠক হয়। এখানেও ভালো সংখ্যক মহিলাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। এই ধরনের আরও ২টি জায়গায় আলোচনা হয়েছে। জামালপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকাতেই এই আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে। নতুন নতুন যোগাযোগ আসছে, হুগলির কমরেডদের সহযোগিতায় এই ব্লক জুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

-- সজল পাল  

খণ্ড-27