৯ আগস্ট সারা দেশের কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত ৯টি দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে।
১। চাই ঋণমুক্তি
প্রাথমিকভাবে, এই বছর করোনা সংক্রমণ জনিত কারনে সমস্ত কৃষকের রবি ফসলের ঋণ মকুব করতে হবে এবং খরিফ ফসলের জন্য কেসিসি (কিষাণ ক্রেডিট কার্ড) দিতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ঋণের সুদ মকুব করতে হবে। এই সময়কালে ঋণ আদায় বন্ধ রাখতে হবে। এরপর সমস্ত কৃষকের সম্পূর্ণ ঋণমুক্তির জন্য সরকারকে আইন পাস করতে হবে।
২। ফসলের পুরো দাম দাও
সমস্ত ফসল, সবজি, ফলমূল এবং দুধের এমএসপি (ন্যূনতম সহায়ক মূল্য) কমপক্ষে সি-২ খরচের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ঘোষণা করতে হবে। এই দামে ফসল কেনার নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। এমএসপির চেয়ে কম দামে ফসল ক্রয়কে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে ঘোষণা করতে হবে।
৩। ০৩-০৬-২০২০ তারিখে জারি করা কৃষক বিরোধী তিনটি অধ্যাদেশ বাতিল করো
ক) কৃষিপণ্য ব্যবসা বাণিজ্য উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান অধ্যাদেশ
খ) কৃষকের (ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা) মূল্য সুনিশ্চিতকরণ ও কৃষি কাজের চুক্তি সংক্রান্ত অধ্যাদেশ
গ) অত্যাবশ্যক পণ্য অধিনিয়ম (সংশোধনী) ২০২০
এই তিনটি অধ্যাদেশ সরকারকে ফিরিয়ে নিতে হবে। এগুলো কৃষক-বিরোধী। এগুলোর জন্য ফসলের দাম কমে যাবে। চাষের খরচ বেড়ে যাবে। এবং বীজ সুরক্ষা শেষ হয়ে যাবে। খাদ্য সুরক্ষা এবং সরকারী হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে। এইগুলো পুরোদমে কর্পোরেট কোম্পানিগুলিকে উৎসাহ দেবে, এবং এগুলো খাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, মজুতদারী ও কালোবাজারি বাড়িয়ে দেবে। কৃষকরা “এক দেশ এক বাজার” চায় না। তারা চায় “এক দেশ এক ন্যূনতম সহায়ক মূল্য”।
৪। ডিজেলের দাম কমাও
ডিজেলের দাম অর্ধেক করতে হবে। কেননা ২০১৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৬০% কমেছে, কিন্তু ভারত সরকারের কর দ্বিগুণ বেড়েছে।
৫। ২০২০ সালের বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার করো
করোনা সংক্রমণের কারণে কৃষক, ছোট দোকানদার, ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক উদ্যোগী এবং সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ বিল মুকুব করতে হবে। ডিবিটি প্রকল্প অনুমোদন করা চলবে না (ডিবিটি-ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার – অর্থাৎ ভর্তুকি সরাসরি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পাঠানো)।
৬। এই বছর কৃষকদের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে শিলাবৃষ্টি, অসময়ের বৃষ্টিপাত এবং লকডাউনের কারণে সবজি, ফলমূল, ফসল এবং দুধের ক্ষয়ক্ষতির জন্য সরকারকে কৃষকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭। মনরেগার আওতাধীন কাজের গ্যারান্টি বাড়াও
এ বছর মনরেগার কাজ ২০০ দিন করতে হবে এবং ন্যূনতম মজুরির হারে মজুরি দিতে হবে যাতে ক্ষেতমজুর, ছোট কৃষক, কাজ ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসা মজুর এবং অনাবাসী কৃষকরা এই সংকটের সময় কাজ পেতে পারে।
৮। সকলের জন্য পূর্ণ রেশন চাই
করোনা সংক্রমণের পুরো সময়কালে, সরকারকে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পূর্ণ রেশন দিতে হবে যাতে কৃষকের কঠোর পরিশ্রমের ফলে তৈরি দেশের খাদ্যভাণ্ডার মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। রেশনে প্রতি মাসে ইউনিট পিছু ১৫ কেজি চাল/গম, ১ কেজি তেল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি দিতে হবে।
৯। কৃষিক্ষেত্র ও আদিবাসীদের জমি কোম্পানিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না
ক্যাম্পা (CAMPA) আইনের নামে বনের জমিতে জোর করে বৃক্ষ রোপণ বন্ধ করতে হবে (CAMPA কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন ফাণ্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাণ্ড প্ল্যানিং অথরিটি অ্যাক্ট। বিভিন্ন প্রকল্পে ধ্বংস হওয়া অরণ্যের ক্ষতি পূরণ করার জন্য বিকল্প জমিতে বনসৃজন করার কথা এই আইন অনুযায়ী। কিন্তু ‘বিকল্প’ জমির বদলে অরণ্যের অধিকার আইনে আদিবাসীদের প্রাপ্য জমি জবর দখল করে এই ক্ষতিপূরণমূলক বনসৃজন চলে)।
- জয়তু দেশমুখ