নিজের ভাষণ সাজাতে জনসাধারণকে বিপন্ন করছে মোদি
ne

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ পুরো বিশ্বে চলছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সারা বিশ্বে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। দুই ধরনের জিনিস বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে -- এক হল ওষুধ আর আরেক হল প্রতিষেধক। ওষুধের কাজ কোনো রোগে কেউ সংক্রমিত হয়ে গেলে তা সারিয়ে তোলা। প্রতিষেধকের কাজ হল কোনো রোগের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা যার ফলে আমাদের রোগটা আর হবেই না বা খুব কম হয়ে সেরে যাবে। আমরা সবাই ছোটবেলায় পোলিও প্রতিষেধক নিয়েছি। ট্রিপিল এন্টিজেন নামে তিনটি অসুখের প্রতিষেধক শিশুদের একদম ছোটবেলায় দেওয়ার চল আছে।

ভারতীয় কোম্পানি ‘ভারত বায়োটেক’ আর সরকারী গবেষণা সংস্থা আইসিএমআর মিলে কোভিড১৯-এর একটি প্রতিষেধক বার করেছে। কিন্তু তা সত্যি কার্যকরী কিনা সেটা বুঝতে মানুষের ওপর সেই প্রতিষেধকের পরীক্ষা চালাতে হবে। ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই প্রতিষেধকের পরীক্ষা চালু করার নির্দেশ দিয়েছে।

এই পরীক্ষার জন্য চিহ্নিত হয়েছে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল যেখানে এই পরীক্ষা চালানো হবে। কিন্তু গোল বেঁধেছে আইসিএমআর-এর প্রধান এম ভার্গভের ২ জুলাইয়ের চিঠিতে। তিনি এই হাসপাতালগুলোকে লিখিত নির্দেশ দিয়ে বলেছেন যে যাদের ওপর ভ্যাক্সিনটি পরীক্ষা করা হব তাদের চিহ্নিত করার কাজ ৭ জুলাইয়ের মধ্যে হয়ে যাওয়া চাই। একথাও জানিয়ে দেওয়া হয় যে, প্রতিষেধকটি সর্বসাধারণের জন্য ১৫ আগস্ট ২০২০ থেকেই বাজারে ছাড়া হবে। মানে পরীক্ষা চালু হওয়ার দেড় মাসের মধ্যে বাজারে প্রতিষেধক চলে আসবে।

প্রশ্ন হল এই পরীক্ষা কি দেড় মাসে করা সম্ভব? এবং পরীক্ষা যদি ঠিক মতো না হয় তাহলে মানুষের কী কী ক্ষতি হতে পারে?

নতুন প্রতিষেধক পরীক্ষার ৩ টি আবশ্যিক ধাপ আছে। এক নম্বর ধাপে কয়েকশো লোককে বাছা হয়। তাদের দুটো টিম করা হয়। এক টিমকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়। আরেক টিমকে বলা হয় যে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে কিন্তু আসলে দেওয়া হয় না। এর পর দেখা হয় যে প্রতিষেধক পাওয়া টিমের লোকেরা প্রতিষেধক না পাওয়া টিমের থেকে ভাল থাকছে কি না। দ্বিতীয় ধাপে এই একই জিনিস কয়েক হাজার লোকের ওপর করা হয়। তৃতীয় ধাপে এই একই পদ্ধতিতে কয়েক লাখ লোকের ওপর পরীক্ষা করা হয়।

test

 

প্রথম পরীক্ষায় দেখা হয় যে এই প্রতিষেধক মানুষের জন্য নিরাপদ কিনা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় পরীক্ষায় দেখা হয় যে প্রতিষেধকের কোন ডোজটা সবচেয়ে কার্যকরী এবং তার সঙ্গে কোন ডোজটা কতটা নিরাপদ। তৃতীয় ধাপে দেখা হয় যে নির্দিষ্ট এই ডোজে প্রতিষেধকটি ব্যবহার করলে বড় সংখ্যক মানুষের ওপর তা কার্যকরী হচ্ছে কি না। এই প্রত্যেকটি ধাপে উত্তীর্ণ হলে তবেই জন সাধারণের জন্য এই প্রতিষেধক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

এই পুরো পরীক্ষাটি খুব তাড়াতাড়ি করলে লাগে ১ থেকে দেড় বছর। কিন্তু মোদী সরকার সেটা সেরে ফেলতে চাইছে দেড় মাসে। এরকম চাওয়ার কারণটা ন্যাক্বারজনক — স্বাধীনতা দিবসে মোদির ভাষণে ক্রেডিট নিয়ে রাজনৈতিক মুনাফা লোটার ইচ্ছে — বলে লোকে মনে করছে।

এই ধরনের প্রতিষেধককে যদি সঠিক ভাবে না পরীক্ষা করেই চালু করে দেওয়া হয় তাহলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক। সবচেয়ে খারাপ জিনিস যেটা হতে পারে সেটা হল শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা না বাড়িয়ে তা মানুষের শরীরকে আরও রোগ প্রবণ করে তুলতে পারে। আমেরিকায় ১৯৫৫ সালে পোলিও প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছিল বহু বাচ্চাকে। কিছুদিনের মধ্যেই জানা গেছিল যাদেরকে সেই প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকের পোলিও ধরা পরেছে। ৪০,০০০ বাচ্চা পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছিল।

ভারতের আকাদেমি অফ সাইন্স এই ধরনের সরকারী আদেশের নিন্দা করেছে এবং বলেছে দেড় মাসের সময়সীমা এই পরীক্ষার জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়।

এই পুরো ঘটনায় এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে মোদী সরকার নিজের রাজনৈতিক মুনাফা লোটার ধান্দায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বিপন্ন করতেও পিছপা হবে না। তারা আগে বহু অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পরিচয় দিয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার সময় তারা বলছিল যে গোমূত্র খেয়ে বা গঙ্গা জল খেয়ে নাকি করোনা ঠিক হয়ে যাবে। আজ পর্যন্ত কেউ এভাবে ঠিক হয়নি। এরপর সঠিক ভাবে পরীক্ষা না করে যদি মানুষকে এই প্রতিষেধক দেওয়া হয় তাহলে তা প্রচুর জীবন নষ্ট করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তার ওপর তাদের এই অবৈজ্ঞানিক কার্যকলাপের জন্য একটি প্রতিষেধক শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার হলেও মানুষ সেটি নিতে ভয় পাবে।

-- প্রত্যুষ নন্দী  

খণ্ড-27