কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে লকডাউন চলা কালে তামিলনাড়ুতে দলিত-বিরোধী অপরাধের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সিপিআই(এমএল) ৬ জুলাই সেখানে রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ সংগঠিত করে। লকডাউনের সময় দলিত-বিরোধী নিপীড়নের অন্ততপক্ষে ৭০টা ঘটনা সরকারের কাছে নথিবদ্ধ হয়েছে। অপরাধের ঘটনাকে বাড়িয়ে তোলার পিছনে সরকারের একটা অপরিণামদর্শী পদক্ষেপের ভূমিকা রয়েছে। মেলাভালাভুর হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৯৬ সালে। মাদুরাই জেলার মেলাভালাভু পঞ্চায়েতে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন মুরুগেসন। সমাজে আধিপত্য করা জাতগুলো এটা মেনে নিতে পারেনি। প্রকাশ্য দিবালোকে চলন্ত বাসে মুরুগেসনকে খুন করা হয়। খুনে জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা হয়। কিন্তু এআইডিএমকে প্রশাসন এ বছরের জানুয়ারি মাসে এমজি রামচচন্দ্রনের জন্মদিনে এদের মুক্তি দেয়, অজুহাত হল, জেলে এরা ভালো আচরণ করেছে। এই পদক্ষেপ দুর্বৃত্তদের স্পর্ধিত করেই তোলে।
দুর্বৃত্তদের উৎসাহ জোগানো আর একটা নজিরের কথা বিচার করা যাক। উচ্চবর্ণের মেয়ে কৌশল্যা দলিত যুবক উদুমালাই শঙ্করকে ভালোবেসে বিয়ে করে। কৌশল্যার অভিভাবকরা এটা মেনে নিতে না পেরে উদুমালাই শঙ্করের সম্মান হত্যাকে সংঘটিত করতে গুণ্ডা লাগায়, গুণ্ডারা শুধু তাকেই প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা করে না, কৌশল্যাকে হত্যারও চেষ্টা করে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য গোটা দেশকে আলোড়িত করে। এই হত্যাকাণ্ডে মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন কৌশল্যার বাবা চিনাস্বামী। কিন্তু মাদ্রাজ হাইকোর্ট একটা আবেদনের ভিত্তিতে এ বছরের ২২ জুনের একটা রায়ে তাকে বেকসুর খালাস দেয়। এইভাবে প্রশাসনের অবাঞ্ছিত পদক্ষেপ এবং ন্যায়বিচার দিতে আদালতের ব্যর্থতা উভয়ই দুর্বৃত্তদের মনোবল বাড়িয়ে তোলে। তামিলনাড়ুর রাজ্য সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করুক – প্রতিবাদীরা এই দাবি তুলেছেন।
উপাসনার অধিকার থেকে দলিতদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, সাধারণ কবরস্থানে তাদের কবর দেওয়ার অধিকার নেই, পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা জল সহ গ্ৰামের সম্পদে তাদের অধিকার নেই, দলিত নারী ও শিশুদের ওপর যৌন হিংসা ও আক্রমণ বেড়ে চলেছে এবং হাতে করে ময়লা সাফ করতে গিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্কে তাদের মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে সিপিআই(এমএল) ৬ জুলাই সারা রাজ্যে প্রতিবাদের ডাক দেয়। দলিতদের ওপর আক্রমণ বন্ধের এবং তাদের ওপর হিংসার সংঘটকদের শাস্তি সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে অনলাইনে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন সংগঠিত করছে ন্যায়বিচারের জন্য জনগণের আন্দোলন মঞ্চ। তামিলনাড়ুর বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোও এই আবেদনে আন্দোলনে অংশ নেয়। সেদিন, অর্থাৎ, ৬ জুলাই প্রতিবাদ সংগঠিত হয় চেন্নাই-চেংলাপাট্টু, কাঞ্চিপূরম, থিরিভাল্লুর, পুডুকোট্টাই, ভিল্লিপূরম এবং আরও বেশকিছু জেলায়। এই প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে যে দাবিগুলোকে সেদিন তুলে ধরা হয় সেগুলো হল – দলিতদের ওপর নিপীড়নের সংঘটকদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে, নির্যাতন নিবারণ আইনকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে, লকডাউনকালে চালানো অপরাধগুলোর বিচার ও দণ্ডদান প্রক্রিয়া তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।