করোনা নিয়ে জনগনের মধ্যে প্রচার সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত নোট
dde

কেন্দ্রের সরকার কোভিড১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এ বছরের জানুয়ারী মাসের শুরুতে ভারতে কেরলে প্রথম কোভিড১৯ সংক্রমণের খবর মেলে। জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস সরকার ব্যস্ত থাকল এনআরসি, সিএএ নিয়ে। দেশের নাগরিকদের নতুন করে নাগরিকত্বের প্রমাণ নিয়ে। তারপর ব্যস্ত হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্বর্ধনা নিয়ে। দিল্লীতে সুপরিকল্পিত ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দাঙ্গা করতে। তারপর মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা ফেলার কাজে। তখনও এদেশে কোভিড১৯ সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়নি। ১৪ মার্চ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু) গোটা বিশ্বকে যখন কোভিড প্যান্ডেমিকের বিপদ সংকেত দিচ্ছে, তখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক কোনো চিন্তার কারণ নেই বলে বিবৃতি দিচ্ছে।

তখনও অবাধে বিদেশী উড়ানে লক্ষ লক্ষ মানুষ মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই, কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে জনসমুদ্রে মিশছে। কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা বা কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা হল না। বিদেশ থেকে রোগ এলো, ছড়িয়ে পড়লো গোটা দেশে।

তারপর চারঘন্টার নোটিশে অপরিকল্পিত লকডাউন, প্রথমে ২১ দিন, আজ চার মাস হতে চললো।

কাজহারা পরিযায়ী শ্রমিকদের লং মার্চ - দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত – দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়লো, ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাতের ঘুম চলে গেল ....

না, দেশজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হল না, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিও হলো না। চললো জনগণকে দিয়ে কখনো থালা পেটানো, কখনো বা দীপ জ্বালানোর বুজরুকি ! সংখ্যালঘুদের মিথ্যে দায়ী করে ছড়ানো হলো ঘৃণার রাজনীতি। লকডাউনের নামে আপৎকালীন আইন অপব্যবহার করে চললো বিরোধীদের কন্ঠরোধ, গণতন্ত্র হরণ আর পুলিশী হুকুমদারী।

দেশের মানুষ যখন দাবি জানাচ্ছে রেশনের মাধ্যমে সাবান, মাস্ক, স্যানিটাইজার বন্টন করতে হবে, তখন এই জনবিরোধী সরকার আজকের দিনে এই অত্যাবশকীয় পণ্যের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি চাপিয়ে দিলো!

দেশজুড়ে সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই ভঙ্গুর দশার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে লুঠ চালাচ্ছে বেসরকারী হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলো। অবিলম্বে সরকারকে এদের উপর নিয়ন্ত্রণ জারী করা জরুরি। যখন এই দাবিতে সমাজ সচেতন মানুষ সোচ্চার তখন সুপ্রীম কোর্টের এই লুঠেরা স্বাস্থ্য কারবারীদের হয়ে রায় প্রদান দেশের পক্ষে অশনি সংকেত! বামপন্থী দল ও বিভিন্ন গণসংগঠনগুলির চাপে কিছু চাল-ডালের ব্যবস্থা হলেও মানুষের হাতে ন্যূনতম কোনো অর্থের (লকডাউন সময়কালে মাসে ৭,৫০০ টাকা করে ভাতা) জোগান দেওয়া হলো না। গোটা অর্থনীতি গভীরতম মন্দায় আক্রান্ত। অথচ এই সময়ে কর্পোরেট পুঁজিপতিদের ৬৮,০০০ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হলো। এদিকে চলছে কাজহারা গ্রামীণ গরিব মানুষের কাছ থেকে ঋণের টাকা উদ্ধারের নামে হুমকি ও হেনস্তা! আর্থিক সংকটের কারণে যদি বড় লোকের ঋণ মকুব হয় তবে লকডাউন আবহে গরিব মানুষদের কেন ঋণমুক্ত করা হবে না?

এখন চলছে তাক লাগিয়ে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কত কম সময়ে বাজারে ভ্যাকসিন আনা যায়! বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের সম্মেলিত প্রতিবাদে তা আজ প্রশ্নের মুখে।

hos

দিশাহীন রাজ্য সরকার ও বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

কোভিড১৯ নিয়ন্ত্রণের মূল চালিকা শক্তি টেষ্ট-আরও টেস্ট-রোগ নির্ণয়-আইসোলেশন-চিকিৎসা। অথচ রাজ্য সরকার শুরু থেকেই একে অমান্য করা, মিথ্যাচার করা, তথ্য গোপন করা এবং এমনকি মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে পর্যন্ত !

কোথায় টেষ্ট হবে, কোথায় ভর্তি হবে, আদৌ ভর্তি হতে হবে কিনা কেউ বলার নেই।

কোথায় গেলে বেড মিলবে, কিভাবে হাসপাতালে পৌঁছবে সব কিছুই অব্যবস্থার শিকার। কতসব সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হলো, কত কোভিড বেড হলো – এখন কোনো কিছুরই দেখা নাই।

মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় খড়ির গণ্ডি কাটছেন। ফটো উঠছে ক্লিক ক্লিক। তিনিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, তিনিই মুখ্যমন্ত্রী, তিনিই আমপান দুর্নীতি দেখছেন, আইন শৃঙ্খলার সমস্যা দেখছেন। আরও কত কী। অবসরে স্বাস্থ্যও দেখছেন। যা হবার তাই হচ্ছে। এই মহামারীর দিনে দলেরই অন্য কাউকে পূর্ণ সময়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া যেত না?

চিকিৎসা হওয়া বা না হওয়ার পর মৃতদেহের কি হবে, তা নিয়েও চলছে আর একপ্রস্ত নাটক! রাস্তায়, দোকানে, রেফ্রিজারেটরে দেহ পড়ে থাকবে। মৃত্যুর পরও শান্তি নেই।

ননকোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থাও তথৈবচ। নবান্ন থেকে সরকার জানাচ্ছে যে তারা নাকি কোভিডের চেয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে, অথচ জনগণের চিন্তায় রাতের ঘুম চলে গেছে।

kkj

রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দাবি

  • হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরানো ও হয়রানি বন্ধ কর।
  • তরুণ শুভ্রজিতের মতো যারা এই সময়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন সেই সব মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।
  • বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
  • কোভিড-ননকোভিড চিকিৎসার স্পষ্ট নির্দেশিকা রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে।
  • কোভিড-ননকোভিড সমস্ত রোগীকে জরুরি পরিষেবা দিতে হবে।
  • জরুরিভিত্তিতে ননকোভিড চিকিৎসার জন্য মেক-শিফট হাসপাতাল চালু কর।
  • রাজ্য সরকারের অধীন ইএসআই হাসপাতালে দ্রুত কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সমস্ত কোভিড হাসপাতালে যথেষ্ট বেড, ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • কোভিড হাসপাতালে ক্ষমতাশালীদের “বেড বুক” করা বন্ধ কর।
  • কোয়ারান্টিন সেন্টারে সর্বক্ষণের ডাক্তার নিয়োগ করে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • মহিলা কোয়ারান্টিন সেন্টারে মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

পৌরসভা ও পঞ্চায়েতের কাছে আমাদের দাবি

  • করোনা মোকাবিলায় পৌরসভা/পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া নয়, জনগণকে সচেতন ও আস্বস্ত করতে প্রচার করা।
  • প্রতিটি ওয়ার্ড/গ্রামে হেল্প ডেস্ক চালু করা।
  • প্রতিটি অঞ্চলে আইসোলেশন সেন্টার ও সেফ হোম গঠন।
  • পৌরসভা/পঞ্চায়েতকে ঐ অঞ্চলের বসবাসকারী ডাক্তারদের নিয়ে বিশেষ পরামর্শ/তদারকি কমিটি গঠন ও ঐ অঞ্চলে যে সমস্ত স্বল্প সংক্রমিত রোগী বাড়িতে বা সেফ হোমে আছেন তাদের নিয়মিত মনিটরিং করার দায়িত্ব দেওয়া।
  • পৌরসভা/পঞ্চায়েতকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে স্বল্পমূল্যে/বিনামূল্যে জনগনের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
dss

প্রতিটি অঞ্চলে প্রচারে আরো যে বিষয়গুলো নির্দিষ্ট করে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে

  • ১। প্রতিটি পৌরসভা ও ব্লকে যে নোডাল অফিসার বা এই ব্যাপারে দায়িত্বে আছেন তাদের নাম, ফোন নম্বর ও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জনগনকে অবহিত করা।
  • ২। জেলা CMOH-এর ফোন ও WhatsApp নম্বর (যাতে করোনা রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে সাহায্য চেয়ে লিখিত আবেদন করতে পারেন) জানানো।
  • ৩। অঞ্চলে কোথায় সরকারী ও বেসরকারী কোভিড টেস্ট কেন্দ্র আছে তার ঠিকানা, ফোন নং, খরচ ও পদ্ধতি জানানো।
  • ৪। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অঞ্চলের মানুষকে কোন কোন স্বাস্থ্যবিধি (মাস্ক, হাত ধোওয়া, দূরত্ব, বাজার-দোকানে ভিড় এড়ানো ...) মেনে চলা উচিত সে সম্পর্কে সচেতন করা।
  • ৫। কোনো ব্যক্তি করোনা রোগ জানতে পারলে তার করণীয় পদক্ষেপগুলো কী, বিস্তৃত ভাবে তাকে জানানো।
  • ৬। ঐ অঞ্চলের ননকোভিড চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর বা হাসপাতালের নাম জানানো।
  • ৭। অঞ্চলে এ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন কোথায় পাওয়া যায় তার ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর জানিয়ে দেওয়া।
  • ৮। অঞ্চলের যে সমস্ত ডাক্তাররা চেম্বার খুলছেন তাদের নাম ঠিকানা ফোন নং। যারা খুলছেন না অঞ্চলের মানুষদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে বিনীত আবেদন করে চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানানো।
  • ৯। এই সময় পাড়ায় কোনো ব্যক্তি করোনা বা অন্য রোগাক্রান্ত হলে সেই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সহ নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরা। এই লক্ষ্যে পাড়ায় পাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলার আবেদন করা।
  • ১০। অঞ্চলের বিশিষ্ট নাগরিক ও সামাজিক কর্মীদের নিয়ে এ ব্যাপারে জনগনকে সহযোগিতা করতে হেল্প ডেস্ক গঠন ও তার যোগাযোগ নম্বর অঞ্চলের মানুষকে জানানো।
  • ১১। উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে অঞ্চলে মাইকিং, প্রচারপত্র বিলি বা পোস্টারিং করা।

এই ব্যাপারে আঞ্চলিক প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধ করা, চাপ বাড়ানো ও তাদের সহযোগিতা নেওয়া।

- পার্থ ঘোষ  

খণ্ড-27