সিপিআই(এমএল) লিবারেশন রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে সম্পাদক পার্থ ঘোষ গত ১৩ জুলাই এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ ধুবড়ে পড়ার মুখে। ইছাপুরের তরুণ শুভ্রজিতের বস্তুত বিনা চিকিৎসায় বা অবহেলায় মৃত্যু তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আজও বারুইপুরের বছর ২৬-এর এক যুবক কোন হাসপাতালেই ভর্তি হতে না পেরে অকালে চলে গেলেন। এটা এখন রোজের ঘটনা। অসুস্থ হলে মানুষ কোথায় যাবেন তা কেউ বলতে পারছে না। এলাকায় এলাকায় চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারগুলি প্রায় বন্ধ, রাত বিরেতে অসুস্থ হলে কোন চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া যাবে না। সরকারী হাসপাতালে হয়রানি, হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। বেসরকারী হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলি রোগী দেখার আগে নন-কোভিড সার্টিফিকেট দাবি করছে। কোথায় গেলে ঐ সার্টিফিকেট মিলবে তাও অজানা। সরকার কোভিড পরীক্ষার দর বেঁধে দিয়েছে বলে শোনা যায়। কিন্তু বেসরকারী হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ডাক্তারবাবুর ফি ঐ বেঁধে দেওয়া দরের বাইরে। রাজ্যে এখন একটা রোগ নিয়েই সরকার কথা বলছে। কোভিড, কোভিড! এরাজ্যে যেন অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কোনো স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই, কোথায় গেলে কোন রোগের চিকিৎসা মিলবে, কোথায় গেলে হাসপাতালে বেড মিলবে। অসুস্থ একটিভ কোভিড রোগীও বাসে, ট্যাক্সি করে হাসপাতালে দৌড়চ্ছে। এমনকি কোভিড আক্রান্তের মৃতদেহ বাড়িতে, রেফ্রিজারেটরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকছে। এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে রাজ্য এগিয়ে চলেছে। কেন্দ্রের সরকারের নির্দেশ দেওয়া ছাড়া কোনো দায় নেই। ঐ সরকার এখন ব্যস্ত কত কম সময়ে, সবাইকে তাক লাগিয়ে ভ্যাকসিন বাজারে আনা যায়। উন্মাদের পাঠশালা চলছে।
এই কঠিন পরিস্থিতিতেও রাজ্যে কোনো পূর্ণ সময়ের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আইন শৃঙ্খলার সমস্যা থেকে ত্রাণ দুর্নীতি দেখার অবসরে রাজ্যের মুখ থুবড়ে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেখভাল করছেন। বাঁচার দাবিতে, স্বাস্থ্য পরিষেবার দাবিতে মানুষকে তাই পথে নামতেই হবে।
১৫ জুলাই বিক্ষোভ সভাগুলি যেসব দাবি তুলে ধরে
• হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরানো ও হয়রানি বন্ধ কর।
• তরুণ শুভ্রজিতের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।
• শুভ্রজিতের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
• কোভিড-নন কোভিড চিকিৎসার স্পষ্ট নির্দেশিকা রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে।
• কোভিড-নন কোভিড সমস্ত রোগীকে জরুরি পরিষেবা দিতে হবে।
• জরুরি ভিত্তিতে নন কোভিড চিকিৎসার জন্য মেক-শিফট হাসপাতাল চালু কর।
• রাজ্য সরকারের অধীন ইএসআই হাসপাতালে দ্রুত কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
• সমস্ত কোভিড হাসপাতালে যথেষ্ট বেড, ডাক্তার- স্বাস্থ্য কর্মী, অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতে হবে।
• কোভিড হাসপাতালে ক্ষমতাশালীদের “বেড বুক” করা বন্ধ কর।
• কোয়ারান্টিন সেন্টারে সর্বক্ষণের ডাক্তার নিয়োগ করে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
• মহিলা কোয়ারান্টিন সেন্টারে মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।