ভাগ্যের অন্বেষণে টিএমসির ২১ স্মরণ
dee

জানাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টিএমসির এবারের ২১ স্মরণে এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে শরণাপন্ন হবেন বাংলার জনগণের, কারণ ভাগ্য নির্ধারণের ’২১-এর বিধানসভা নির্বাচন আর বেশি দূরে নয়। ক্ষমতায় ফেরার জন্য টক্কর দিতে তৃণমূল নেত্রী বিজেপিকে বানিয়েছেন প্রধান প্রতিপক্ষ। ভীষণ বাস্তব প্রয়োজনবাদীর মতো। কারণ সারা দেশের মতোই বাংলার বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতেও বিপজ্জনক বিজেপি হয়ে উঠছে ক্রমবর্দ্ধমান এক শক্তি। যা কিনা শাসকশ্রেণীর পার্টিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল, এক ফ্যাসিস্ট প্রতিনিধি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যা কিছু ঐতিহ্য, পরম্পরা, উত্তরাধিকার ঊর্দ্ধে তুলে ধরার, বহন করে চলার; সাংবিধানিক গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয়তা ও বহুত্বের যত যা প্রবাহ রয়েছে, তার সবকিছু ধ্বংস করতে বিজেপি উন্মত্ত তাদের গন্তব্য কর্পোরেট পুঁজির দালালি করা হিন্দুত্বের স্বর্গরাজ্য কায়েম করার পথ সুগম করতে। এরাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির কামড়াকামড়ির সম্পর্ক ক্ষমতার স্বার্থকে কেন্দ্র করে, শাসকশ্রেণীর বিভিন্ন অনেক দল রয়েছে যাদের বিজেপির বিরোধ করার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা সমীকরণ। একমাত্র সংগ্রামী বামপন্থা ও প্রগতিপন্থার ধারাগুলোই বিজেপির মোকাবিলায় সবচেয়ে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গীর অধিকারী ও সবথেকে দৃঢ় শক্তির চাবিকাঠি। এইসব অবিচল শক্তিকে আরও সামনে আসতে হবে, তীব্র গতিতে জায়গা নিতে হবে, শক্তি বাড়াতে হবে, নির্দ্ধারক শক্তি হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।শান দিতে হবে দুদিক ধারওয়ালা হাতিয়ারে, রাজ্যের শাসক টিএমসি এবং কেন্দ্রের শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে।

দলনেত্রী তাঁর ভার্চুয়াল সমাবেশ থেকে বিজেপির আগাপাশতলা তুলোধনা করে মাস্টার স্ট্রোক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এই বলে যে, গুজরাট থেকে বাংলাকে চালানো যাবে না, বাংলার জনগণই বাংলাকে চালাবে। এইভাবে বিজেপিকে বহিরাগত বলে হিসাবের বাইরে পতিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। কথা হল, বিজেপির শুধু বাংলা কেন, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, কোনও রাজ্যকেই, কেন্দ্রের ক্ষমতায় থেকে দেশ চালানোর কোনও নৈতিক অধিকার নেই। বিজেপি যাবতীয় অসাধু উপায়ে কিভাবে রাজ্যে রাজ্যে ক্ষমতা দখল করছে, কত ছড়ি ঘুরিয়ে কেন্দ্র চালাচ্ছে, তা নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক-বিরোধিতাও উঠছে দেশজুড়ে। কিন্তু বাংলায় বিজেপির বাড়বৃদ্ধি হচ্ছে কী করে? তার বিস্তারের জমি তৈরি করে দিচ্ছে তৃণমূল রাজত্বের অপশাসন। তৃণমূলী দুর্নীতি-দলতন্ত্র-দমনতন্ত্রই কারণ। করোনার কামড় বসানো অবস্থায়ও এইসমস্ত অন্যায় রীতিনীতির কোনও পরিবর্তন নেই। টিএমসি সরকার বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে, আমপান ত্রাণ খাতে অর্থ বরাদ্দ করেছে, ভালো। কিন্তু সেসব নিয়ে দুর্নীতিও হয়েছে। দুর্নীতির হাত ছড়িয়ে গেছে জমি রক্ষার আন্দোলনের দেড় দশক আগের দুই দূর্গস্থান সিঙ্গুরে ও নন্দীগ্রামে পর্যন্ত, পঞ্চায়েত ক্ষমতার কারসাজিতে।

এইসব অভিযোগ অনেক দেরীতে হলেও মুখ্যমন্ত্রীকে স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার অপচেষ্টা চলে তিলকে তাল করা হয়েছে বলে নস্যাৎ করার। দুর্নীতির অভিযোগে বাম গণতান্ত্রিক শক্তি বিহিত চেয়ে পথে নামতে চাইলে ‘স্বাস্থ্য বিধি'র অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ-প্রশাসন অনুমতি দেয়নি, সরকারের আচরণ উপেক্ষা করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত সংখ্যায় সমাবেশিত হয়ে কর্মসূচী সংগঠিত করতে গেলে কোথাও করা হয়েছে গ্রেপ্তার, কোথাও লাঠিপেটা, জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মিথ্যা মামলায়। অথচ শাসকদল তৃণমূল দিব্যি রাজ্যজুড়ে বুথওয়ারী জমায়েত করে ভার্চুয়াল সভা করল। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অব্যবস্থা এতো চরমে পৌঁছেছে, তবু তার কণামাত্র সমালোচনা ও পরিবর্তনের পরামর্শ কোনোকিছুই মুখ্যমন্ত্রী শুনতে নারাজ। ডেপুটেশান, পিটিশান যায়, তার কোনও প্রতিকার মেলে না। তৃণমূল বাংলার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রের মোদী জমানার হাতে কর্তনের অভিযোগ তোলে, শাসকের অংশবিশেষের স্বাধিকার নিয়ে সরব, কিন্তু জনগণের গণতন্ত্রকে, সমালোচনা ও বিরোধিতার অধিকারকে গ্রাহ্য করে না। এইসব দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জোরদার ভূমিকা নেওয়ার ওপর নির্ভর করছে বিজেপির তৎপরতাকে প্রতিহত করতে পারার কার্যকারিতা।

খণ্ড-27