গত ৩ জুলাই পূর্ব বর্ধমান জেলার পুর্বস্থলী-২ ব্লকে এআইসিসিটিইউ, আয়ারলা ও আরওয়াইএ-র পক্ষ থেকে বেলা ২টায় ডেপুটেশন সংগঠিত করা হল। দাবি ছিল, ১) পরিযায়ী শ্রমিক সহ সমস্ত গ্রামীণ গরিবদের দ্রুত কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের জবকার্ড নেই জবকার্ড দিতে হবে। পরিবার পিছু ১০ হাজার টাকার লকডাউন ভাতা দিতে হবে। ২) লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতীদের কাজ, মজুরি ও অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩) আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ৪) চরের খাস জমির জরিপ করে গরিব মানুষের মধ্যে বণ্টন ও পাট্টা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ৫) স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও বন্ধন সহ সমস্ত ধরনের মহাজনী সংস্থার ঋণ থেকে গ্রামীণ গরিব মেহনতিদের মুক্তি দিতে হবে।
ডেপুটেশনের প্রস্তুতি হিসাবে গ্রামে গ্রামে তাঁতীদের দাবি রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে পাঠানোর জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৪৫২ জন তাঁত শ্রমিকের স্বাক্ষর সহ স্মারকপত্র বিডিও মারফত মন্ত্রীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হল। যাদের জবকার্ড নেই, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের, জবকার্ড পাওয়ার জন্য প্রধানের কাছে আবেদন জমা দিয়ে জবকার্ড পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। ৪(ক) ফর্ম পূরণ করে কাজের আবেদন প্রধানের কাছে জমা দেওয়ার মাধ্যমে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করা হল। প্রধানগুলো কোনো আবেদন জমা নিতেই ইচ্ছুক নয়। কিছু ক্ষেত্রে চাপে পড়ে জমা নিলেও রিসিভ দিতে রাজি হল না। ২৯ জুন মেড়তলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সাইকেল মিছিল করে প্রচার করা হয়। তাতে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়াল। এমনকি চরের খাস জমির প্রশ্নে পুলিশী তৎপরতা শুরু হল। ডিআইবি অফিসার চরের খাস জমির পরিদর্শন করে খোঁজ খবর নিতে লাগলেন। ডেপুটেশনের দিন সকাল পর্যন্ত গ্রামে তড়িঘড়ি কিছু কাজ দিতে শুরু করল। ডেপুটেশনের আলোচনায় বিডিও জবকার্ড দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হলেন। প্রধানগুলোকে আবেদন জমা নেওয়ার জন্য বলবেন বললেন। কাজ দেওয়ার জন্য সব পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে। কাজ দিচ্ছে সব পঞ্চায়েত, কিছু পঞ্চায়েত নিজেদের অপদার্থতা ও গোষ্ঠীকোন্দলের জন্য কাজ দিতে পারছে না।
আমরা বিশেষ করে মুকশিমপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে জোরালো দাবি করেছিলাম, কেননা এখানেই পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি আছে। বিডিও সাতদিনের মধ্যে কাজ দেওয়ার চেষ্টা করবে, ১৫ দিনের মধ্যে অবশ্যই কাজ দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। কৃষকদের জমি সমান করে চাষযোগ্য করা ও সারের গর্ত করা, পুকুর খনন, জঙ্গল পরিস্কার ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে কাজ দিতে চায়। কাজের মাপজোকের ক্ষেত্রে সমস্যার কথাও আলোচনা হয়। কেননা মাপজোক নিয়েও গরিবদের ঠকানো হচ্ছে। সাধারণত দুর্নীতিপরায়ন সুপারভাইজাররা যত লোক কাজ করে তার থেকে বেশি লোকের নামে মাষ্টার-রোল তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করে থাকে। কাজের ৮-১০ দিন পর মাপজোক হয়। মাটির মাপ পুরোটাই একসঙ্গে করে মাষ্টার-রোল দেখে সবাইকেই ভাগ করে মজুরি দেওয়া হয়। ফলে ভুয়ো নামগুলোও কাজের অংশীদার হয়ে যায়। প্রকৃতই কাজ করেছে এমন মজুরদের মজুরি কমে যায়। তাই দাবি করা হল কাজের দিনই মাপামাপি করতে হবে এবং প্রত্যেকের গ্রুপ ভিত্তিক আলাদা মাটির হিসাব দেখাতে হবে। তাহলে সবাই নিজের কাজ অনুযায়ী মজুরি পাবেন। বিডিও মহাশয় বিষয়টি মেনে নিলেন ও দেখবেন বললেন। আমফান ঝড়ের ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেন। অভিযোগ থাকলে জানাতে বলেন। ক্ষতিগ্রস্ত কোনো মৌজা ঘোষিত হয়নি। ৩৩ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্থ মৌজা না থাকাতে ক্ষতিগ্রস্ত মৌজা ঘোষিত হল না। ঋণমুক্তির প্রশ্নে দাবিগুলোর যুক্তিগ্রাহ্যতা স্বীকার করে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন বলেন। ডেপুটেশনে প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন সজল পাল, বিনয় মন্ডল, শিবু সাঁতরা, কাওসার আলী সেখ ও ফারুক সেখ। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন আরওয়াইএ-র রাজ্য নেতা রনজয় সেনগুপ্ত, অশোক চৌধুরী ও সজল পাল।