সিপিআই(এমএল)-এর বিহার রাজ্য সম্পাদক কুনাল গত ২ জুলাইয়ের এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিজেপি-জেডিইউ সরকার তাদের সমস্ত দায়িত্ব-কর্তব্যকে পরিত্যাগ করেছে। নীতীশ কুমার বলেছিলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের যাদের যেমন দক্ষতা ও সামর্থ্য রয়েছে সেই অনুযায়ী বিহারের মধ্যেই তাদের কাজ দেওয়া হবে। এই ধরনের কিছুর দেখা এখনও মেলেনি। সরকার যথেষ্ট সংখ্যায় করোনা পরীক্ষাও করছে না; আবার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কাজের ব্যবস্থাও করছে না। এমএনআরইজিএ-তে কাজ পাওয়াটাও দুর্লভ হয়ে উঠেছে। ফলে বিহারে একদিকে লাফিয়ে-লাফিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে পরিযায়ী শ্রমিকরাও আবার বিভিন্ন রাজ্যে ফিরতে শুরু করেছেন যদিও ওই সমস্ত রাজ্যে কাজ পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা তাঁদের নেই।
প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর সাম্প্রতিক ভাষণে দরিদ্র ও পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ, জীবিকা বা আয় নিয়ে একটা কথাও বলেননি। দরিদ্রদের জন্য সামান্য দানা শস্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের সম্পর্কে হাত ধুয়ে ফেলাটা এক নির্মম রসিকতা ভিন্ন অন্য কিছু নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের মানুষের দাবি হল, যে পরিবারগুলো আয়করের আওতার বাইরে তাদের আগামী ছ-মাস নগদ ৭,৫০০ টাকা করে দিতে হবে; ছ-মাস ধরে মাথাপিছু ১০ কেজি খাদ্যশস্য দিতে হবে; এমএনআরইজিএ-তে ২০০ দিনের কাজ ও ন্যূনতম মজুরি ৫০০ টাকা দিতে হবে; এবং কাজ ও জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এ সবের ধারকাছ দিয়ে না গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণকে হতাশই করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বললেন, প্রতিটি মানুষকে মাসে ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। এতে গড়ে প্রতিদিন মাথাপিছু খাদ্যশস্যের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১৬৬ গ্ৰাম। দেশের মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে অতএব বলতে হবে, ১৬৬ গ্ৰাম খাদ্যশস্য দিয়ে একজন মানুষের তিনবার খাবারের ব্যবস্থা কী করে হবে।
দরিদ্রদের এবং এবং তাদের ছেলেমেয়েদের যে নুন, তেল, শাকসব্জি, জামাকাপড়, চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার দরকার আছে, সরকারের বিবেচনায় তা আছে বলে মনে হয় না। প্রত্যেকটা মানুষেরই পুষ্টি এবং পেট ভরে খাবার প্রয়োজন রয়েছে। যে সরকার “আত্ম-নির্ভরতা” নিয়ে বড়-বড় কথা বলে, তাকে সবার আগে দেশের জনগণের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কৃষকদের ঋণ মকুব নিয়েও কোনো কথা বললেন না।
প্রধানমন্ত্রী সরকারী প্রকল্পকে যে একটি মাত্র সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে যুক্ত করলেন, সেটাও যথেষ্ট আপত্তিকর। তাঁর কথাগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রতিপন্ন করল যে, জনগণের কল্যানের চেয়ে বিহার নির্বাচন নিয়েই সরকারের যা কিছু মাথাব্যথা।