নিশ্চিত করতে হবে ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার
ed

আমপান ত্রাণের বরাদ্দ টাকা নয়ছয় করার অভিযোগে শাসকদল তৃণমূলকে দাঁড়াতে হচ্ছে গণবিক্ষোভের কাঠগড়ায়। অভিযোগ এমনই ব্যাপক মাত্রায় যে মুখ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে নির্দেশ দিতে হয়েছে ফেরত দিতে হবে দুর্নীতির টাকা, আর অভিযুক্ত দোষীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কড়া ব্যবস্থা। দক্ষিণবঙ্গের যে জেলাগুলি আমপান তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে ক্ষতিপূরণের তালিকায় ধরা হয়েছে ৬৯টি ব্লককে। আর সেখানে প্রদত্ত অর্থ নিয়ে চলেছে যথেচ্ছ দুর্নীতি। সরকারী সূত্র জানিয়েছে অভিযোগ জমা পড়েছে হাজার চল্লিশ, যার নব্বই শতাংশই সঠিক বলে স্বীকারও করেছে। প্রশ্ন হল, এত ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি হতে পারল কিভাবে? সরকারের আগাম নজরে তা ধরা পড়ল না কেন? এই অন্যায় পঞ্চায়েত স্তরে সংঘটিত হলেও ব্লক স্তরের দলনেতৃত্ব ও ব্লক প্রশাসন অন্ধকারে ছিল একথা কি বিশ্বাসযোগ্য! শাসকদলের শুধু ব্লক স্তরের মাথারা কেন, জেলা ও রাজ্য স্তরের নেতাদের অজ্ঞাতসারে এসব অনাচার চলেছে তা কি বলার মুখ আছে? সত্যিকারের তথ্য তালাশ করলে সমস্ত প্রকৃত অন্তর্নিহিত সত্য প্রকাশ হতে পারে। দুর্নীতি ধরা পড়ে যাওয়ার পর অভিযুক্তরা বলছেন ‘ভুল হয়ে গেছে’, তার বেশি মুখ খুলছেন না। তবু নিশ্চিতভাবেই ধরে নেওয়া যায় যা কিছু চিহ্নিত হচ্ছে তা কেবল দৃশ্যমান খন্ডচিত্র মাত্র। এই দুর্নীতি সংঘটিত করার জন্য যদি দায়ী থাকে ব্লক অফিস-পঞ্চায়েত প্রতিনিধি ও শাসক দাদাদের সুপরিকল্পিত নেপথ্য যোগসাজশ, তাহলে বুঝে নিতে হবে এতে মদত বা প্রশ্রয় রয়েছে দলের ওপরতলার। দুর্নীতি চলেছে দলতন্ত্রের, গোষ্ঠীর কায়েমী স্বার্থের এবং নানা খাস স্বার্থসর্বস্ব স্বজনপোষণ চালাতে। দুর্নীতি করার শর্তটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে সমস্ত ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়ায় তৃণমূল বহির্ভূত কোনোরকম ভিন্নমতের তদারকি-গণতদারকি করতে না দেওয়ার অঘোষিত ফতোয়া জারি করে। সবকিছুতে শাসকের একচেটিয়া দলতন্ত্র কায়েম করে। কিন্তু নির্দয় নিষ্ঠুর বৈষম্য-বঞ্চনা-অপ্রাপ্তির বিরুদ্ধে মানুষের ধাওয়া করা ঘেরাও, অবরোধ দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে। এযাত্রা তৃণমূলের সাধ পূরণ হল না। দলনেত্রী এই বোধহয় প্রথমবার প্রথম ধাক্কাতেই দুর্নীতির সত্যতা স্বীকার করে নিলেন। না, কোনও শুভবুদ্ধির উদয় থেকে নয়, উপায় না দেখে। কারণ, তাড়া করছে পরের বিধানসভা নির্বাচনের দুর্ভাবনা।

adm

 

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কোভিড ও আমপান তহবিল ব্যয়বরাদ্দের অডিট হবে। প্রশ্ন হল, এই শুখা আশ্বাসকে বিশ্বাস কী? ভাবের ঘরে চুরি করে পরিচ্ছন্ন হিসাব পরীক্ষা করা যায় না, তার স্বচ্ছতা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা দাবি করা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? হয়ত কিছুকে সাময়িক বরখাস্ত, কিছুকে দল থেকে দাঁড়ানো, তবুও সে তো কেবল দলের আভ্যন্তরীণ ফয়সালার বিষয়। সরকারী অর্থ নিয়ে প্রতারণা ও দুর্নীতির তথ্য তো ফৌজদারী অপরাধ। তার বিরুদ্ধে কি তৃণমূল সরকার আদালতে যাওয়ার পদক্ষেপ শুরু করেছে? আদৌ কি এফআইআর করা হচ্ছে? এখনও সেরকম সরকারী ঘোষণা নেই। সুতরাং আমপান ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত দুর্নীতির স্বরূপ উন্মোচন সম্পর্কে এখনও অনেক প্রশ্ন তোলার আছে, কড়া ব্যবস্থা বুঝে নেওয়া বাকি থাকছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রসঙ্গত বলেছেন বটে, আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধার করা হবে, বরাদ্দ বিলিবণ্টনের পুনর্মূল্যায়ন করে বঞ্চিতদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হবে। তার জন্য নাকি প্রশাসনিক কমিটিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কিন্তু বিগত অসংখ্য তিক্ত অভিজ্ঞতা শিক্ষা দিয়েছে, কার্যোদ্ধার করতে হলে লেগে থাকতে হবে গণতদারকি ও গণবিক্ষোভের চাপ সংগঠিত করতে।

খণ্ড-27