পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের দাবিতে এবং মোদী সরকারের জনবিরোধী আর্থিক নীতি, আট ঘণ্টার বদলে ১২ ঘণ্টা কাজ ও রেল কয়লা-সহ রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং ফেডারেশনগুলির ডাকে ৩ জুলাই হুগলি জেলার সর্বত্র প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত নির্মাণ শ্রমিক এবং জুট শ্রমিক সংগঠনের সংগঠক ও কর্মীরা এই প্রতিবাদ দিবসে সামিল হন, চুঁচুড়ার পরিবহন শিল্পের শ্রমিকরাও এআইসিসিটিইউ-র ঝান্ডা নিয়ে এই কর্মসূচীতে যোগ দেন। চন্দননগরে তেলিনিপাড়ার দাঙ্গা আক্রান্ত শ্রমিকেরাও প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। কোন্নগরে নির্মাণ শ্রমিকেরা হিন্দমোটর কোন্নগরের দুটি জায়গায় অংশ নেন।
হিন্দমোটর বিপিনভিলা মোড়ে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ পথসভায় বক্তব্য রাখেন প্রদীপ সরকার ও অপূর্ব ঘোষ। কোন্নগর চলচ্চিত্রম সিনেমা হল মোড়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ সভায় এআইসিসিটিইউ-র পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সৌরভ ও প্রদীপ সরকার। চন্দননগর এবং চুঁচুড়ায় এআইসিসিটিইউ-র পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে সংগঠনের জেলা সম্পাদক বটকৃষ্ণ দাশ ও ভিয়েত। জুট শ্রমিক নেতা সুদর্শন প্রসাদ সিং এবং নির্মাণ শ্রমিক সংগঠক সুভাষ অধিকারী এই দুই জায়গায় সভার সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন। সিটু, ইউটিইউসি, টিইউসিসি, এআইইউটিইউসি এই যৌথ কর্মসূচীতে সামিল হয়েছিল।
৩ জুলাই শ্রমিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে দেশজুড়ে কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পারুলিয়া বাজারে যৌথভাবে অবস্থান বিক্ষোভ অবরোধ সংগঠিত করা হল। সভায় এআইসিসিটিইউ-র পক্ষে অশোক চৌধুরী ও সিটুর পক্ষে বিভিন্ন বক্তা বক্তব্য রাখেন।
পুর্বস্থলী-১ ব্লকের উত্তর শ্রীরামপুর মোড়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর ডাকে অবস্থান বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। এই বিক্ষোভে আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমন মন্ডল বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত থাকেন সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের জেলা সম্পাদক সলিল দত্ত, জেলা কমিটির সদস্য জিয়াদুল সেখ ও ইব্রাহিম সেখ সহ অন্যান্য কর্মী সমর্থকরা। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বর্ধমান শহরে যৌথভাবে বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। সভায় আয়ারলার পক্ষে বক্তব্য রাখেন শ্রীকান্ত রানা। মেমারী-১ ব্লকের মেমারী বাজারে মিছিল অবস্থান বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়। সভায় এআইসিসিটিইউ-র পক্ষে বক্তব্য রাখেন কুনাল বক্সী ও সাধন কর্মকার। কালনা-২ ব্লকে শ্রমিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে বিক্ষোভ সভা সংগঠিত হয়। সভায় আয়ারলার পক্ষ থেকে রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
শ্রমিক সংগঠনগুলির পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার সমস্ত স্থানীয় কর্মচারী সংগঠনের যৌথ প্রতিবাদ সভা পালন করা হয়। সভায় কংগ্রেস ও বিজেপি ছাড়া সব দলেরই কর্মীরা যোগদান করেন, কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসস ও এনএফআইআর যৌথভাবে পৃথক সভা করে। সারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলিকে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে কয়লা শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটের পাশে থাকা এবং শ্রমিকদের সুরক্ষার অধিকারগুলি তথা শ্রম আইন তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। প্রায় পাঁচশো শ্রমিক অংশগ্রহণ করে এই কর্মসূচীতে। চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা সন্নিহিত রূপনারায়ণপুর অঞ্চলের নিউমার্কেটে যৌথ আন্দোলন সংঘটিত হয় যেখানে মূলত বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি অংশগ্রহণ করে। আসানসোল সংলগ্ন বার্নপুরে এআইসিসিটিইউ সহ অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনগুলির প্রতিবাদ সভা করে, যেখানে সাড়ে তিন’শ শ্রমিক এক দীর্ঘ মানববন্ধন করে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করে। দুর্গাপুর, আসানসোল, চিত্তরঞ্জন, রানীগঞ্জ সহ বিস্তীর্ণ শিল্প ও কয়লা খনি অঞ্চলের মানুষ সরকারের পদক্ষেপে রুষ্ট।
কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে গত ৩ জুলাই বজবজে এআইসিসিটিইউ সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন এআইসিসিটিইউ রাজ্যনেতা কিশোর সরকার, পার্টির দঃ ২৪ পরগণা জেলানেত্রী কাজল দত্ত, দেবযানী গোস্বামী, অঞ্জন ঘোষ সহ আরো অনেকে। মিছিল শেষে নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়।
বাখরাহাটে স্কুল মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন পার্টির দঃ ২৪ পরগণা জেলা নেতা দিলীপ পাল, শুভদীপ পাল, বিষ্ণুপুর-সাতগাছিয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক নিখিলেশ পাল, মহিলা নেত্রী পূর্ণিমা হালদার সহ আরো অনেকে। বিক্ষোভ কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন দিলীপ পাল ও শুভদীপ পাল।
মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের টেক্সটাইল মোড় থেকে ৩ জুলাই কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলোর ডাকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ অবস্থান, মিছিল, অবরোধ ও আইন অমান্য আন্দোলন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মিছিল ও সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই বিক্ষোভ মিছিলে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন, সিপিএম ও অন্যান্য বাম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। এআইসিসিটিইউ-র পক্ষে রাজীব রায়ের নেতৃত্বে বেলডাঙার শ্রমিক নেতা আবুল কাসেম সহ অন্যান্য কর্মী সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।
কয়লা, রেল-সহ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারীকরণ, ৪১ কয়লাখনি নিলামে তুলে দেওয়া, শ্রম আইন পরিবর্তন, বনাঞ্চল আইন বাতিলের বিরুদ্ধে এবং আদিবাসীদের জমির পাট্টা দেওয়া, কৃষিঋণ মুকুব, লকডাউন ভাতা দেওয়ার দাবি সহ ১২ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের আহ্বানে দেশজুড়ে ৩ জুলাই প্রতিবাদ দিবসে সামিল ছিলেন দার্জিলিং জেলার এআইসিসিটিইউ-সহ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের নেতৃত্ব এবং কর্মীরা। সামিল হয়েছিল এআইকেএম-সহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠনও।
শিলিগুড়ি মহানন্দা ব্রিজে দুপুর ১২টা থেকে ১টা অব্দি ১২ দফা দাবির সমর্থনে ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনগুলির নেতা ও কর্মীরা বিভিন্ন দাবি সম্মিলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই অবস্থান বিক্ষোভে চালিয়ে যান। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে শ্লোগান, অধিকার আদায়ের দীর্ঘ ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের পথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে নেতৃত্ব আশা প্রকাশ করেন।
ফসল ন্যায্য মূল্যে কেনা, একশো দিনের কাজ এবং জবকার্ডধারীদের নিয়ে দুর্নীতি বন্ধ-সহ বিভিন্ন দাবিতে এআইসিসিটিইউ, এআইকেএম, সিপিআইএমের কৃষক সভা, কংগ্রেসের কৃষাণ সেলের নেতৃত্বে একটি মিছিল ফাঁসিদেওয়া থানার সামনে থেকে শুরু হয়ে বিডিও অফিসে এসে শেষ হয়। উল্লিখিত দাবি সম্মিলিত একটি স্মারকলিপি বিডিওকে দেওয়া হয়।
২ এবং ৩ জুলাই চা বাগানগুলিতে লকডাউন ভাতা, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন দাবিতে জয়েন্ট ফোরামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ, ধর্না, সংঘটিত হয়। সবমিলিয়ে মেহনতি জনতা যে আগামীর লড়াই লড়তে প্রস্তুত তা উত্সাহব্যঞ্জক উপস্থিতি এবং উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কর্মসূচী সফল করে তোলার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন।