২৮ জুলাই ২০২০ সিপিআই(এমএল)-র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড চারু মজুমদারের শহীদ হওয়ার ৪৮তম বার্ষিকী এবং ১৯৭০-এর গোড়ার দিকে আমাদের আন্দোলন ও পার্টির প্রাথমিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ার পর পার্টিকে পুনর্গঠিত করার ৪৬তম বার্ষিকীও এই দিনটি। এই ঐতিহাসিক দিবস উপলক্ষ্যে আমরা কমরেড চারু মজুমদারকে এবং আমাদের পার্টি ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যান্য সমস্ত শহীদ ও প্রয়াত কমরেডকে শ্রদ্ধা জানাব। আমরা তাঁদের অসমাপ্ত কাজ, ভারতকে সত্যিকারের মুক্ত ও গণতান্ত্রিক এক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করার শপথ নেব।
পার্টির প্রতি তাঁর শেষতম বার্তায় কমরেড চারু মজুমদার পার্টিকে জীবন্ত রাখার ও জনগণের স্বার্থকেই পার্টির একমাত্র স্বার্থ হিসেবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজকের সংকটময় পরিস্থিতিতে ভারতের জনগণকে যখন কোভিড-১৯ মহামারী এবং মোদি সরকারের চাপিয়ে দেওয়া নিপীড়ক ও বিপর্যয়কর লকডাউনের যুগপৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে তখন জনগণের স্বার্থের সেবা করার আহ্বান বিশেষ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি ও সাহস নিয়ে জনগণের সেবা করব ও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব।
ভারতের জনগণ এবং ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সর্বাত্মক যুদ্ধ নামিয়ে এনেছে এই মোদি সরকার। আমাদের সমস্ত সম্পদ-উৎস কর্পোরেট কোম্পানির অবাধ লুন্ঠনের জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছে আর একটার পর একটা অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। যতভাবে সম্ভব আমাদের দেশকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে। সর্বোপরি, জনসাধারণকে অপরিহার্য সামগ্রী ও পরিষেবা জোগান দেওয়ার ন্যূনতম দায়িত্বটুকুও এড়িয়ে গিয়ে, নিজের সমস্যা নিজেই বুঝে নেওয়ার দায় জনতার কাঁধে চাপিয়ে, ধূর্তের মতো তার নাম দিয়েছে আত্মনির্ভরতা। জনসাধারণের মাঝে বিদ্বেষ ও বিভাজন ছড়িয়ে দেশকে দুর্বল করার আর দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র ধ্বংস করার ফ্যাসিস্ট ছক পরাস্ত করতে শপথ নেব আমরা।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সাহসের সাথে দেশের শ্রমজীবী জনতা, বিশেষত জনস্বাস্থ্য ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার কর্মীরা, তাঁদের কর্তব্য পালন করে চলেছেন। আমরা তাঁদের আত্মনিয়োগ ও আত্মত্যাগকে কুর্ণিশ জানাই। আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবি ও অ্যাক্টিভিস্ট মিথ্যা মামলায় পীড়নমূলক আইনে কারাগারের অন্ধকারে দিনাতিপাত করছেন। আমরা এই সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি।
মোদি সরকারের ধূর্ত পরিকল্পনা অগ্রাহ্য করে ভারতীয় জনতার নতুন নতুন অংশ লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন মানবিক মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে। তাঁদের এই সমস্ত ন্যায্য সংগ্রামকে আমরা সমর্থন করি এবং তাঁদের চারপাশে আরও ব্যাপক বিস্তৃত সংহতি গড়ে তুলে জনতার ঐক্য, গণতান্ত্রিক জাগরণ ও উত্থান উন্নত স্তরে নিয়ে যাওয়ার শপথ নেব আমরা। জাগ্রত ঐক্যবদ্ধ জনতা কখনোই হেরে যেতে পারে না। জনতার ঐক্য ও উত্থানকে ভিত্তি করে আমরা ফ্যাসিবাদী বিপদকে পরাজিত করার ও অধিকার অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে চলার শপথ নেব।
যখন ভারতের অধিকাংশ বিরোধী দল দোদুল্যমান, ফ্যাসিস্টদের সাথে সাঁটগাট করে নিচ্ছে আর আত্মসমর্পণ করছে, তখন গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে সিপিআই(এমএল) সাহসের সাথে নিরন্তর নিজের ভূমিকা রেখে চলেছে। আমাদের বিপ্লবী ঐতিহ্য ও পরিচিতির এটাই বৈশিষ্ট্য। এই কমিউনিস্ট বিপ্লবী ঐতিহ্য আমাদের গর্ব। সর্বশক্তি নিয়ে কষ্টসাধ্য প্রচেষ্টা ও আমাদের প্রাণবন্ত সংগঠনের ক্ষমতা দিয়ে এই ঐতিহ্যকে আরও মজবুত করার শপথ নেব আমরা।
জনসাধারণের আরও উন্নত সেবা করতে সিপিআই(এমএল)-কে শক্তিশালী করুন।
জনগণের আন্দোলন আরও জোরদার করতে সিপিআই(এমএল)-কে শক্তিশালী করুন।