বিভিন্ন রাজ্য থেকে শ্রমিকরা বাড়ি ফিরছেন। জনমতের চাপে ও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের হস্তক্ষেপে এখন প্রচুর শ্রমিক ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই নিজেদের গ্রামে ফিরছেন। তারা কোথায় থাকবেন সে নিয়ে বহুবিধ প্রশ্ন উঠছে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ হচ্ছে।
কোয়ারানটাইন কোথায় করা হবে। এব্যাপারে সরকারও কিছু গাইড লাইন করেছেন। পাঁচটি রাজ্য যেখানে করোনা সংক্রমণের হার বিপজ্জনক তাদের ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারানটাইন বাধ্যতামূলক। এখন কথা হচ্ছে কোয়ারানটাইন কি এবং কেন করতে হয়। আসলে এটা এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা কোন মানুষ যিনি আক্রান্ত কোনো এলাকা থেকে আসছেন বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তাঁকে একটি নির্দিষ্ট দিন অবধি আলাদা রাখা হয়। ওই সময়ের মধ্যে তার যদি রোগটি ধরা পড়ে, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আর না হলে তিনি একসঙ্গে থাকতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় থাকবেন। নিজের বাড়িতে থাকতে পারেন। অথবা কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় থাকবেন। গরিব শ্রমিকদের অনেক সময়েই নিজের বাড়িতে জায়গার সংকুলান হয় না। সেক্ষেত্রে বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় থাকতে হবে। এখন যেসব জায়গায় করোনা সংক্রমণের হার খুব বেশি সেখান থেকে যারা এসেছেন তারা কোনো আলাদা স্থানে থাকবেন। বা যার জ্বর সর্দির মতো উপসর্গ আছে তারও একটু আলাদা থাকা প্রয়োজন। তবে এখন খুব কম উপসর্গ আছে এমন করোনা কেসেও ঘরেই আইসোলেশন-এ থাকতে বলা হচ্ছে। এখন করোনা রোগটি অতি দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব কম উপসর্গ হয় এবং সেরেও যায়। ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে বেশি উপসর্গ হয় আর মোটামুটি শতকরা ২ থেকে আড়াই ভাগ রোগী মারা যান। কিন্তু এটি সংক্রমণ করে দ্রুত।।
বাড়িতে আলাদা থাকবার ব্যবস্থা আছে এবং যত্ন নেবার ও খাবার দেবার মানুষ থাকলে বাড়িরই উৎকৃষ্ট থাকবার বা কোয়ারানটাইন-এর জায়গা। এক্ষেত্রে সাধারণ কিছু সাবধানতা অর্থাৎ ঘর জামাকাপড় সাবান দিয়ে ধোবার ব্যবস্থা বা পরিষ্কার রাখা আর বারংবার হাত ধোয়ার মতো কিছু ব্যাপার করতেই হবে।
সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, চেয়ার টেবিল হাতল ছিটকিনি সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। আর ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারানটাইন কোনো স্কুল বিয়েবাড়ি মসজিদ মাদ্রাসায় হতে পারে। একটা বাউন্ডারির মধ্যে হওয়া বাঞ্চনীয়। যেখানে খাওয়া দাওয়া আলো বাতাস শৌচাগার জলের যথাযথ ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতেই হবে। এক দু-মিটার অন্তর অন্তর বিছানা থাকতে হবে। আর সামান্য উপসর্গ আছে এমন মানুষদের, এদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। সেটি লোকালয়ের থেকে দূরে হতে হবে তার কোনো মানে নেই। কেননা এটা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে না। মশাবাহিত নয়। ইঁদুর বা অন্য প্রাণীর দ্বারা বাহিত হবে না বা জলবাহিতও নয়। যদি নির্দিষ্ট কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা যায় তাহলে এটা ছড়িয়ে পড়বে না। কেউ যদি একদম বাইরে না আসেন বা কারও সঙ্গে মেলামেশা না করেন, সেক্ষেত্রে কেউ আক্রান্ত হলেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। বহু ক্ষেত্রেই সাধারণ নিয়ম মেনে চলেছেন বলে একই বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও বাড়ির কেউ আক্রান্ত হননি।
এখন নিয়মগুলো তো সবাই জানেন। চোখ মুখ নাকে হাত দেওয়া বন্ধ করতে হবে স্বাস্থ্যকর্মী বা বহুল সংক্রমিত এলাকার মানুষ N95 মাস্ক পরে থাকবেন। কিন্তু সাধারণ ক্ষেত্রে সাধারণ কাপড়ের মাস্কই যথেষ্ট। হাতে গ্লাভস পরে থাকার থেকে বারে বারে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া বাঞ্চনীয়। আর বাইরে থাকলে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত মুছে নিতে হবে প্রয়োজন ছাড়া কোথাও হাত না দেওয়াই উচিত। আর হাত দিলে যেমন বাজার করলে টাকা পয়সা দেওয়া নেওয়ার পর হাত স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে নিতে হবে। ঘড়ি আংটি বালা জাতীয় কিছু না পরা বাঞ্ছনীয়। চোখে চশমা বা রোদ চশমা রাখা উচিত। জুতো বাড়ির বাইরে খুলে রাখা উচিত। বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত পা ধুতে হবে এবং সোজাসুজি বাথরুমে সমস্ত জামাকাপড় খুলে স্নান করা বা তা নাহলেও অন্য পরিষ্কার জামাকাপড় পরা উচিত। চেষ্টা করা কর্মক্ষেত্রে চুল ঢেকে রাখা, নাহলে কিন্তু এসে মাথায় সাবান দেওয়া উচিত। মোবাইল বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। করলেও স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে নিতে বলব বারবার। কাপড়ের মাস্ক হলে সাবান দিয়ে কেচে রোদে মেলে দিতে হবে। মোটামুটি এই। তাই বলছি কোয়ারানটাইন নিয়ম মেনে হলে সেটা কোথায় হল সেটা বড় ব্যাপার নয়। কিছু নিয়মে আমাদের অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। সেটিই বড় ব্যাপার।
-- ডাঃ দেবাশিস মুখার্জি