পরিযায়ী শ্রমিকদের যে সামাজিক বাস্তবতাকে লোকচক্ষুর আড়ালে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল, লকডাউন তাকে হাট করে খুলে দিয়েছে
lib

করোনা ভাইরাস সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই মর্মে হুঁশিয়ারি জারি করার পর প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেল, আর ভারত সরকার সারা দেশে লকডাউন চাপিয়ে দেওয়ার পরও পেরিয়ে গেল দু-মাস। ভাইরাসের উৎস দেশ চীন এবং এশিয়ার অন্যান্য কয়েকটি দেশ ভাইরাসের কবল থেকে মোটামুটি মুক্ত হতে পেরেছে। এবং ভাইরাসের মোকাবিলায় চীন যে পরিকল্পনা গ্ৰহণ করেছিল, সেই লকডাউনই সারা বিশ্বে ভাইরাস মোকাবিলার অনিবার্য পথ হয়ে উঠেছে, যদিও স্থানীয় ভিত্তিতে তার রকমফের ঘটেছে। তবে আমেরিকা মহাদেশ ও ইউরোপের অনেক দেশেই, এবং যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভারতে এবং দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোতে এই মহামারী ভয়ঙ্কর আকার নিয়েই চলেছে। আর বিশ্বের কোথাও যদি মহামারী সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিকে বহুগুণ ছাপিয়ে গিয়ে থাকে লকডানের আদায় করা মাসুল, তবে সে দেশটার নাম হল ভারত। পরিতাপের ব্যাপার হল, দু-মাস ধরে  তালগোল-পাকানো, দিশাহীন এবং স্বৈর চরিত্রের লকডাউন চলার পর ভারত যখন এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ হাতড়ে বেড়াচ্ছে, মহামারী তখনও তার বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে এবং মহামারীর ঊর্ধ্বমুখী রেখাকে আনুভূমিক করার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

দুনিয়ায় অতীতে এর চেয়েও মারাত্মক ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গেছে, আধুনিক ইতিহাসে ভাইরাসের ভয়াবহ প্রকোপের একটা দৃষ্টান্ত হল ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু এবং তারপর সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যে সমস্ত প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে তার মধ্যে রয়েছে ইবোলা, জাইকা, সারস এবং নিপা। তবে কোভিড-১৯ তার ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপ্তি ও গতি দিয়ে গোটা দুনিয়াকেই হতবুদ্ধি করে দিয়েছে। এর সাথে লকডাউন প্রসূত বিপর্যয়কে মেলালে সংকটটা অভূতপূর্ব এবং অভাবনীয় হয়েই দেখা দিচ্ছে। অনেক দিক থেকেই এই অতিমারিকে সৃষ্টি করেছে এবং বাড়িয়ে তুলেছে বৈশ্বিক পুঁজির সম্প্রসারণ ও শক্তিবৃদ্ধি। প্রকৃতির নির্বিচার ধ্বংস, বিশ্বে বেড়ে ওঠা যাতায়াত ও পরিযান, কৃষির কর্পোরেটিকরণ এবং জনস্বাস্থ্যর প্রণালীবদ্ধ অবহেলা -- এ সবই বিশ্বায়নের ধাঁচা ও গতিধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এবং কোভিড-১৯ সৃষ্ট বিপর্যয়ে এ সবেরই অবদান রয়েছে।

teat

 

ভারতের কথা ধরলে, এখানে অনিষ্ট অতিমারির চেয়ে লকডাউনের কারণে হয়েছে অনেক বেশি। এটা বলার মধ্যে দিয়ে অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মহামারীর বিপজ্জনক আকার নেওয়ার ব্যাপারটাকে একেবারেই খাটো করা হচ্ছে না। এখানে নমুনা পরীক্ষা চূড়ান্ত রূপে কম হওয়া সত্ত্বেও কোভিড-১৯ ব্যাধিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে, তবে ভারতে মহামারীর ভয়ালতার হার বিশ্ব গড়ের তুলনায় অনেক কম। ভারতে সংক্রমিতের প্রাণহানির হার ৩ শতাংশের সামান্য বেশি যা বিশ্ব গড়ের বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নথিবদ্ধ হারের অর্ধেক, এবং তা আবার ইউরোপের কয়েকটি দেশে প্রাণহানির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে হওয়ার চেয়ে তো অনেক নীচে। কিন্তু মহামারীর এই মাঝারি মাপের ভয়ালতার কাছেও ভারতের নীচু মানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাকানি-চোবানি খাচ্ছে। মহামারী মোকাবিলার ওপরই যাবতীয় দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকায় অন্যান্য ব্যাধির শিকার বহুসংখ্যক রোগী যে ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকুও পেলেন না সেটাকেও এর সাথে বিচার করতে হবে এবং তখন আমরা ভারতের জনস্বাস্থ্যের পরিস্থিতির ওপর কোভিড-১৯ কী ভয়ঙ্কর চাপ সৃষ্টি করেছে সে সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পারব।

কোভিড-১৯ যে চ্যালেঞ্জ খাড়া করেছে তার মোকাবিলায় মোদী সরকার অনুসৃত পথ প্রধানত লকডাউনের ওপরই কেন্দ্রীভূত হয়েছে, এবং এই যুদ্ধ জয়ের অবধারিত হাতিয়ার রূপেই লকডাউনকে তুলে ধরা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণার সময় – যা পরবর্তীতে দীর্ঘায়িত লকডাউনের প্রথম পর্যায় রূপেই প্রতিপন্ন হয় – নরেন্দ্র মোদী আমাদের বলেন, দেশ যদি লকডাউনের বিধিকে ২১ দিন কঠোরভাবে মেনে না চলে তবে দেশ ২১ বছর পিছিয়ে যাবে। তিনি তাঁর নির্বাচনী ক্ষেত্র বারানসিতে জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন – মহাভারতের যুদ্ধে জয় হয়েছিল ১৮ দিনে, আর কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় আসবে ২১ দিনে। এরপর লকডাউনের সম্প্রসারণ ঘটানো হলে সরকারের প্রধান পরামর্শদাতা সংস্থা নীতি আয়োগ এপ্রিলের শেষে পূর্বাভাস দিয়ে বলে যে, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী রেখাকে মে মাসের মাঝামাঝি অবশ্যই আনুভূমিক করা যাবে এবং ১৬ মে-র পর সংক্রমণের নতুন ঘটনা আর ধরা পড়বে না। এই সময়টাতেই কিন্তু সংক্রমণের ঘটনার সবচেয়ে স্ফীতি দেখা গেল এবং বৃদ্ধির এই ঢেউ অব্যাহতভাবে চলতে থাকল, এবং সংক্রমণের সংখ্যা প্রতি দু-দিনে ১০০০০ হতে দেখা গেল।

mig

 

লকডাউন ভারতে অভিপ্রেত ফল আনতে স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে। লকডাউন চীনে সম্পূর্ণরূপে সফল হয়েছে। সে দেশে এটাকে সীমিত ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের কৌশল রূপে গ্রহণ করা হয় যাকে কোনো ধরনের লঙ্ঘন ছাড়াই পুরোমাত্রায় বলবৎ করতে চীনা রাষ্ট্রের স্বীকৃত সামর্থ্যও সহায়ক হয়ে ওঠে। ভিয়েতনাম ও নিউজিল্যান্ড এবং আরও কয়েকটি দেশে লকডাউনের রকমফের কাজে দিয়েছে, যে দেশগুলোতে লকডাউন যথাসময়েই নামানো হয় এবং রাষ্ট্র চিকিৎসা পরিষেবা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তুর জোগানের পরিকল্পনাকে সফল করে তোলাটাকেও সুনিশ্চিত করে। এই রাষ্ট্রগুলোর কাছে এই উপলব্ধিটা সুস্পষ্ট ছিল যে লকডাউন আসলে কিছু সময় জোগাড়ের কৌশল মাত্র, যেটা বিবেচ্য তা হল, মহামারীর নিয়ন্ত্রণে ও মোকাবিলার লক্ষ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুতিকে বাড়িয়ে তোলা এবং আনুষঙ্গিক পরিকল্পনার রূপায়ণে ঐ সময়টাকে ঠিকঠাক কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে, ভারতে রাজ্য হিসাবে লকডাউন সবচেয়ে ভালো কাজ দিয়েছে কেরলে এবং অন্য কয়েকটি রাজ্যের গুটিকয়েক জেলায়, যেখানে রাজ্য  লকডাউন বলবৎ করার চেয়ে গুরুত্ব বেশি দিয়েছিল সামগ্ৰিক পরিকল্পনার পরিপূরক অংশগুলোর রূপায়ণকে সুনিশ্চিত করার ওপর।

মোদী সরকার যেভাবে লকডাউনকে ব্যবহার করেছে তা একেবারে বিপরীত ফলদায়ী না হলেও তাতে সমস্ত দিক থেকেই খামতি থেকে গেছে। ফেব্রুয়ারী এবং মার্চের প্রথম তিন সপ্তাহে অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করা হয়েছে। সরকার ও সংঘ-বিজেপি বাহিনী এবং ভারতের আধিপত্যকারী মিডিয়ার কাছে অগ্রাধিকারগুলো অবশ্য ছিল ভিন্ন -- ভারতে যারা অনুষ্ঠানাদির পরিকল্পনা করে সেগুলোকে পরিবেশন করে থাকে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা দুটো ঘটনার উল্লেখ করতে গেলে বলতে হয় আমেদাবাদে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ এবং মধ্যপ্রদেশে সরকার ফেলে দেওয়ার কর্মসূচির কথা। এই সময়কালে তারা কখনও যদি কোভিড-১৯-এর উল্লেখ করে থাকে তবে তার উদ্দেশ্য ছিল ভারতে এর বিপদকে অস্বীকার করা ও খাটো করে দেখানো। এবং সরকারের অবশেষে যখন হুঁশ জাগলো, সে লকডাউন ব্যাপারটাকে ২০১৬-র নভেম্বরের বিমুদ্রাকরণের মতো ঝটিকা ধাক্কায় অভিভূত করে দেওয়ার আর একটা কসরত হিসাবে, বিশ্বে এ যাবৎ কালের বৃহত্তম লকডাউনের তাক লাগানো দৃশ্য করে তোলার সুযোগ হিসাবে আঁকড়ে ধরল! সেই মানুষগুলোর কথা একবারও ভাবা হল না যাদের হয় নিজেদের কোনো ঘর নেই, অথবা যে জায়গাগুলোকে ওরা ওদের ঘর বলে বলে থাকে এবং যে সমস্ত স্থানে ফেরার জন্য ওরা মরিয়া হয়ে উঠবে। ক্ষণেকের জন্যও ভাবা হল না সেই সমস্ত মানুষদের কথাও যারা প্রতিদিন কাজ করে রোজগার করার পরই দুবেলা ভরপেট খাবার কথা চিন্তা করতে পারে।

pack

 

এইভাবে ভারতে লকডাউন কখনই ছাঁচেঢালা পরিকল্পিত চমকপ্রদ দৃশ্য হয়ে উঠল না, যেটাকে সরকার সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এবং যাতে মাঝে-মাঝে শুরুর সময় থাকবে তালি ও থালি বাজানো, টর্চ ও মোমবাতি জ্বালানো অথবা আকাশ থেকে গোলাপের পাপড়ি বর্ষণের মতো নজরকাড়া ঘটনা। লকডাউনকে মনে রাখা হবে না এই সমস্ত শব্দ ও আলো ও ফুলের প্রদর্শনীর জন্য, অথবা স্মরণ করা হবে না রাত ৮টার সময় মোদীর ভাষণ এবং ২০ লক্ষ কোটি টাকার ধাপ্পাবাজির প্যাকেজ ও আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের জন্য। তাকে মনে করা হবে না পরিবেশ ও শব্দ দূষণ সহসাই কমে যাওয়ার জন্য, ক্রমেই বেড়ে চলা আমাদের নগরসুলভ, ভোগবিলাসী জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে হারিয়ে যেতে থাকা প্রকৃতির শব্দ ও দৃশ্যগুলোর, তার পুষ্পরাজি ও প্রাণীকুলের  আবার স্বপ্নবৎ দেখা মেলার জন্য। ভারতে লকডাউনকে মনে রাখা হবে লোকচক্ষুর আড়ালে চাপা দিয়ে রাখা সামাজিক বাস্তবতার প্রত্যাবর্তনের জন্য, ট্রাম্পের সফরের সময় যে বাস্তবতার সামনে মোদী দেওয়াল তুলতে চেয়েছিলেন, বিশ্বায়নের চোখ ধাঁধানো ছটার মধ্যে যে অস্বস্তিকর বাস্তবতা অদৃশ্য হয়ে থাকে, উন্নয়নের ঢক্কানিনাদের মধ্যে যাকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। লকডাউনকে মনে রাখা হবে ভারতের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য।

dahak

 

ভারতে মহিমান্বিত করে তোলা ‘ক্রিয়াশীল নৈরাজ্য’ যদি আজও কাজ করে চলে তবে তা আমাদের সুপ্রাচীন সভ্যতার কারণে নয়। রাষ্ট্র ও তার সামন্ততান্ত্রিক-ঔপনিবেশিক ক্ষমতা কাঠামো আর তার দানবীয় আইনসমূহ, বন্দুকবাজ নিরাপত্তা বাহিনী ও আত্মদর্পী আমলাতন্ত্রের জন্যও নয়। আমাদের জাতপ্রথা ও প্রচলিত লোকাচার, সুপ্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাস ও আধুনিকতার প্রতি অনুরাগের জন্যও তা ক্রিয়াশীল নয়। সত্যিকারের জনগণ, ভারতের লক্ষ-লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ, তাদের হার-না-মানা মনোবল ও অদম্য সাহসিকতাই ভারতকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আধিপত্যকারী মিডিয়া যদি তাদের অকিঞ্চিৎ করে দৃষ্টির বাইরে রাখতে থাকে, বিচারবিভাগ যদি তাদের প্রয়োজন ও অধিকারসম্পন্ন মানুষ বলে স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়, তা সত্ত্বেও ওরা কিন্তু ভারতের মানস জগতে অভাবনীয় মাত্রায় আত্মপ্রতিষ্ঠা ঘটিয়েছে। ওরা আধুনিক ভারতের প্রকৃত যোদ্ধা ও নির্মাতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

লকডাউন আবার গণতন্ত্র ও ন্যায়ের জন্য ভারতীয় জনগণের নিবিড় আকাঙ্ক্ষাকেও সামনে এনেছে। ঘরে থাকতে অসুবিধা হওয়ার নয় এমন অনেক তুলনামূলকভাবে সুবিধাভোগী মানুষও সরকারের ‘ঘরে থাকুন’ নির্দেশের কাছে অথবা পুঁজির ‘ঘর থেকে কাজ করুন’-এর নতুন বিধি অথবা ‘ঘরোয়া বিনোদন’-এর মন্ত্রর কাছে নিজেদের জীবনধারাকে বাঁধা দিতে অস্বীকার করেছেন। এর বিপরীতে তাঁরা নব উদ্ভাবিত ‘ঘর থেকে প্রতিবাদ’-এর ব্যবস্থাপনা এবং ‘ঘর থেকে লড়াই’-এর মানসিকতা দিয়ে প্রতিরোধের অভিনব রূপের প্রবর্তন ঘটিয়েছেন।

home

 

কোভিড-১৯ পরবর্তী দুনিয়া পুরোনো স্বাভাবিকতায় ফিরে যেতে পারে না বলাটাই যথেষ্ট নয় বা তা বলাটা অনাবশ্যক। ভারতে শাসকরা জনগণের জন্য যে ‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থাকে’ নির্দেশিত করতে চাইছে, আমরা তার রূপরেখাকে সুস্পষ্টরূপে দেখতে পাচ্ছি। গণতন্ত্রকে যতদূর এবং যত দীর্ঘ সময় ধরে মুলতুবি বা খর্বিত করে রাখা সম্ভব তা তারা করতে চাইছে। শ্রম আইনগুলোকে বাতিল করা হচ্ছে; জমির অধিকারকে নাকচ করা হচ্ছে; ম্যানুফ্যাকচারিং ও পরিষেবা ক্ষেত্রের পর কৃষিকেও আরও বেশি কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণাধীনে আনার চেষ্টা হচ্ছে। নজরদারির নতুন-নতুন হাতিয়ারকে বলবৎ করা হচ্ছে এবং সমস্ত উপায়ে প্রতিবাদকে দমন করতে লকডাউনকে লাইসেন্স করে তোলা হচ্ছে।

এই ‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থা’ ভারতের কাছে যথার্থই এক ঔপনিবেশিক যুগের স্বাভাবিক অবস্থা, এবং এর সহগামী হচ্ছে সংঘ-বিজেপির সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী এজেণ্ডার ভয়াবহতা এবং বৈশ্বিক পুঁজি ও ভারতের নিজস্ব রাষ্ট্রীয়-মদতপুষ্ট স্যাঙাতি পুঁজিপতিদের দাপট। অতিমারির ছায়া এবং লকডাউনের ভুলভুলাইয়া থেকে আমরা যখন বেরিয়ে আসছি তখন চ্যালেঞ্জটা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়েই রয়েছে : পুরনো অবস্থার এই পশ্চাদমুখী পুনরুদ্ধারকে আটকাতে হবে এবং নতুন অবস্থার উদ্ভবের জন্য লড়াই করতে হবে। ঘরে ফিরে আসতে গিয়ে, বিপরীত পরিযাণ কালে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে গ্লানির মুখোমুখি হতে হল, এবং বিদ্যমান ব্যবস্থার নির্মমতা সম্পর্কে তাদের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হল, তাকে গ্ৰামীণ ও শহরের দরিদ্রের মধ্যে এক নতুন ঐক্যের পরিণতি দিতে হবে, এবং শ্রমজীবী জনগণের শ্রেণী সচেতনতা ও জঙ্গী আত্মঘোষণাকে এক নতুন স্তরে উন্নীত করতে হবে।

(লিবারেশন পত্রিকার মে-জুন ২০২০ সংখ্যা থেকে)

খণ্ড-27