আমফান ঘুর্ণিঝড়ের বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেলো। ক্ষয়ক্ষতির থেকে দুই ২৪ পরগণা বা মেদিনীপুরের তুলনায় খানিকটা পেছনের দিকে থাকলেও কৃষিপ্রধান নদীয়া জেলায় ঝড় জলে চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রানাঘাট হরিণঘাটায় ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। ৮ জন মৃত। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। বিপর্যস্ত কৃষি। জেলা জুড়ে বিভিন্ন ব্লকে বোরো ধান মাঠ থেকে সম্পূর্ণ ওঠেনি। বেশ কয়েক হাজার চাষির ধান প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। জেলায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে বলে কৃষি দপ্তরের খবর। লক্ষাধিক পাট চাষি ক্ষেতে জল জমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যাপক এলাকায় বাড়ন্ত পাট গাছগুলি ঝড়ের আঘাতে শুয়ে পড়েছে। জেলার বড় এলাকায় তিল চাষ হয়। তিল, পেপে, কলা, নানা রকম সবজি, ফুল প্রভৃতি ক্ষেতে সেই একই শোচনীয় হাল। অথচ নদীয়া জেলা প্রশাসন বা রাজ্য সরকার আজও ঠিক করে উঠতে পারলো না আমফানে নদীয়া জেলায় কৃষির আদৌ কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা। আক্রান্ত চাষিরা ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো কাগুজে আবেদন করার অধিকারটুকুও পাবে কিনা। সেটাও আজ অনিশ্চিত! চাষিদের এই জরুরি সংকট নিয়ে জেলা শাসকের কাছে আজ বামদলগুলির এক প্রতিনিধি দল ডেপুটেশনে গেলে জেলা শাসক বিভূ গোয়েল জানালেন এখনও নাকি তদন্ত চলছে। গ্রামে গেলে সাদা চোখে যা দেখা যায়, শাসকেরা রঙ্গীণ চশমা পড়ে তা দেখতে পান না। তারা চোখ বুজে থাকেন। মা মাটি মানুষের নাম করে এ রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কৃষকদের প্রতি এই বঞ্চনা অমর্যাদার প্রতিবাদে আজ নদীয়া জেলায় বামপন্থী দলগুলির ডাকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণের দাবিতে কৃষ্ণনগর শহরে এক বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত হয়।
ক্ষতিপূরণের অর্থ বরাদ্দে কেন্দ্রের মোদী সরকারের সীমাহীন বঞ্চনার বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানানো হয়, তুলে ধরা হয় আমফানকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি। এছাড়া ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতি দলবাজির বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানানো হয়। শহরের কেন্দ্র সদর মোড়ের রাস্তায় সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাম কর্মী ও নেতৃবৃন্দের স্লোগান প্ল্যাকার্ড সহকারে বিক্ষোভ প্রদর্শন, খালি গলায় বক্তব্য বহু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নেতৃবৃন্দ বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো নিয়ে রাজ্য সরকার দ্বিচারিতা করছে,তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় কোয়ারান্টাইন ব্যবস্থাপনা, সুরক্ষা, খাদ্য-কাজের সুব্যবস্থা নেই। সম্পূর্ণ দায়সাড়া ভাবে তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওরা তো আমাদের সমাজের সম্পদ! জেলায় পরিযায়ীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। এর বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) নদীয়া জেলা সম্পাদক সুবিমল সেনগুপ্ত, সিপিআইএম-এর এস এম শাদী প্রমূখ।
ডেপুটেশনে ছিলেন সিপিআই(এমএল)-এর জয়তু দেশমুখ, সিপিএম বিধায়ক রমা বিশ্বাস প্রমূখ। এসডিও দপ্তরে পৃথকভাবে ডেপুটেশনে ছিলেন সিপিআই(এমএল)-এর নীহার ব্যানার্জী ও অন্যান্য বাম নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন কাজল দত্তগুপ্ত, সন্তু ভট্টাচার্য।