১৫ জুন ২০২০, কামারহাটি সাগর দত্ত হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণার পর থেকেই অচলাবস্থা চলছে। স্থানীয় নাগরিকরা ন্যূনতম চিকিৎসার দাবি নিয়ে হাসপাতালের গেটের সামনে জমায়েত হয়ে ছিলেন তখন তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের আক্রমণের শিকার হন। মহিলাদের উপরও হামলা চালানো হয়। পুলিশ ও সিভিক বাহিনী দুষ্কৃতিদের সাথে মিলে প্রতিবাদীদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। লাঠির ঘায়ে বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ আহত হন।
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্ধ্যায় বেলঘরিয়া থানায় সিপিআই(এম), সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, জাতীয় কংগ্রেস এবং সিপিআই স্মারকপত্র দিতে যায়। স্থানীয় প্রায় ২০০ জন মানুষ এই কর্মসূচীতে শামিল হন। থানার সামনেই পুলিশ ও সিভিক বাহিনী বিনা প্ররোচনায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে লাঠি চার্জ করে। লাঠির ঘায়ে বিধায়ক মানস মুখার্জী সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের ছাড়া না হলে অবস্থান চলবে ঘোষণা করা হয়। এরপর চাপে পরে পুলিশ প্রশাসন ধৃতদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সংক্ষিপ্ত সভায় বিধায়ক মানস মুখার্জী বলেন – (১) আমরা কোভিড হাসপাতালের বিরোধী নই। (২) হাসপাতালের ৫৩৬টি বেডের মধ্যে ২০০ বেড কোভিড হোক এবং বাকি ৩৩৬টি বেডে অন্যান্য চিকিৎসা চলুক। (৩) মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি পাঠিয়েছি তার কোনো উত্তর নেই। (৪) পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদলের পরিসর প্রতিদিন সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। এমন কী সাগর দত্ত হাসপাতাল নিয়েও কামারহাটির বিধায়কের সাথেও সরকার কথা বলছে না। বিধায়কের বক্তব্যের পর প্রতিবাদ সভা শেষ হয়।
কামারহাটি ১১-১৩ জুন পরপর তিনদিন সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন পক্ষ থেকে সাগরদত্ত হাসপাতালে যাওয়া হয়। সেখানে কর্মচারী, ছাত্র ও রোগী এবং তাদের পরিবারের সাথে কথা বলে কোভিড হাস পাতাল নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়। তাদের কথা অন্য রোগের চিকিৎসাগুলো চালু রেখে কোভিড হাসপাতালে তাদের বিরোধিতা নেই। হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে এলাকার মানুষের সমস্যা ও চিকিৎসার সঙ্কট নিরসনে টেলিফোনে ১২ ও ১৩ জুন দীর্ঘক্ষণ কথা হয়।
১২ জুন হাসপাতাল সুপার সহ উচ্চপর্যায়ের স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকাক এবং তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেনের উপস্থিতিতে উচ্চ পর্যায়ে প্রশাসনিক মিটিং হয়। সংবাদ মাধ্যমে খবর মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয়েছে – (১) আপাতত ৫০টি বেডে করোনার চিকিৎসা হবে। এরপর চাহিদা বাড়লে পর্যায়ক্রমে বেড বাড়ানো হবে। (২) স্ত্রী রোগ এবং শিশু বিভাগ এখন চালু থাকবে। (৩) অন্যান্য বিভাগগুলি নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে।
পার্টির পক্ষ থেকে যে দাবিপত্র দেওয়া হয়েছে তা নীচে দেওয়া হল
মাননীয়
অধীক্ষক
কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগরদত্ত হাসপাতাল
৫৭৮, বি টি রোড
কামারহাটি
কলকাতা - ৭০০০৫৮
মহাশয়,
বিষয়: সাগর দত্ত হাসপাতালের বন্ধ হয়ে যাওয়া আউটডোর সহ অন্য বিভাগুলো অবিলম্বে পুনরায় চালু করার আবেদন।
আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম 'কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতাল'কে 'কোভিড ১৯ হাসপাতাল' হিসাবে ঘোষণা করে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ সহ সব বিভাগগুলো বন্ধ করে দেওয়া হল।
অতিমারির সঙ্কটে নতুন নতুন করোনা হাসপাতাল গড়ে তোলার ব্যাপরে আমাদের নীতিগত কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বর্তমানে করোনার জেরে প্রতিটি অঞ্চলে বেসরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিকগুলি বন্ধ থাকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ কোভিড ছাড়া অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য সাগর দত্ত হাসপাতালের উপর আগের থেকেও অনেক বেশি নির্ভারশীল হয়ে পড়েছেন। এখন ‘কোভিড হাসপাতাল’ করে সাধারণ রোগীদের জন্য হাসপাতলের দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় কয়েক লক্ষ রোগী ও তাদের পরিজনরা ভয়ঙ্কর সঙ্কটে পড়ে গেলেন।
আসন্ন প্রসবা থেকে শুরু করে যারা দীর্ঘদিনের জটিল বা মারণ রোগে আক্রান্ত বা বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আছেন এবং আকস্মিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের দরজা খোলা রাখতে হবে।
তাই আমরা চাই হাসপাতালের মধ্যেই অন্যান্য সংক্রামক রোগের মতো কোভিড ১৯-এর জন্যও আলাদা বিল্ডিং চিহ্নিত করে সেখানে তার চিকিৎসা চলুক। পাশাপাশি নিরাপত্তাবিধি মেনে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসাও যথারীতি চালু থাক।
রাজ্য সরকার আপৎকালীন পরিস্থিতে বেশ কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতাল, নার্সিংহোম, লজকে কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছে, যা এখানেও সম্ভব। তাই আমরা কিছু দাবি ও প্রস্তাব রাখছি। আমরা আশাকরি আপনার মাধ্যমে তা স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছে পৌঁছাবে এবং আমাদেরও তার ফলাফল অবগত করাবেন।
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি ও প্রস্থাব
১) সাগর দত্ত হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ সহ অন্য বিভাগগুলো অবিলম্বে পুনরায় চালু করতে হবে।
২) পাশেই রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের অধীন ইএসআইসি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সেখানে শয্যাসংখ্যা এবং ওপিডি বাড়ানো হোক।
৩) পানিহাটি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ বাড়াবার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হোক।
৪) সরকারকে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কোভিডের জন্য এই অঞ্চলের বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল যেমন জেনিথ, ক্ষুদিরাম, মিডল্যান্ড, গুরুনানক মেডিকেল কলেজ সহ অন্য আরও কয়েকটি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে টেক ওভার করতে হবে।
ধন্যবাদান্তে,
সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি'র পক্ষে
নবেন্দু দাশগুপ্ত
১২ জুন ২০২০
বেলঘরিয়া
প্রতিলিপি
১) মাননীয়া শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
নবান্ন হাওড়া
২) অপর স্বাস্থ্য সচিব
স্বাস্থ্য ভবন
বিধান নগর
কলকাতা-৭০০০৯১
৩) মুখ্য জেলা স্বাস্থ্য সচিব
বারাসাত
উত্তর ২৪ পরগণা