প্রতিবাদী নারী কলমের কাছে হার মানল কারার লৌহ কপাট – জামিন পেলেন সফুরা
sag

কয়েকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়া সহ বহু জায়গায় ঘুরছিল একটি ছবি। কলম উঁচিয়ে দৃপ্ত ভঙ্গিতে স্লোগানে মুখর একটি মেয়ে। জামিয়া মিলিয়ার রিসার্চ স্কলার সফুরা জারগর। ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়া দিল্লি দাঙ্গায় ‘উস্কানি’ দেওয়ার অভিযোগে গত ১০ এপ্রিল সফুরা জারগরকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। তখন থেকেই তিহার জেলে বন্দি ছিলেন বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সফুরা জারগর। সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মহিলা মুখ সফুরার বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। শাহীনবাগে প্রতিবাদীদের উপর গুলি চালানো কপিল গুজ্জর বিনা বাধায় জামিন পেলেও দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে তিনবার আবেদন করেও জামিন পাননি সফুরা। কিন্তু থামেনি লড়াই। সফুরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই লকডাউনের মধ্যেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল গোটা দেশ। হাতে পোস্টার নিয়ে, কখনও বা টুইটার হ্যান্ডেলে, কখনও বা সোশ্যাল মিডিয়ায়, আবার কখনও শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে মুখর হয়েছে দেশজুড়ে। এর মধ্যেও অবশ্য সফুরার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া, ‘স্লাট শেমিং’, দেশদ্রোহী তকমা দিয়ে রগরগে প্রচার – সবটাই চালিয়ে গেছে বিজেপি ও আরএসএস। কিন্তু কোনো কিছুতেই দমেনি লড়াই। বরং আরও তীব্রভাবে উঠেছিল নিন্দার ঝড়। নিম্ন আদালতের জামিন খারিজের রায়কে চ‍্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে আবারও জামিনের আবেদন করেছিলেন সফুরার আইনজীবী। সেই আবেদনেই গত ২১ তারিখ দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে স্ট‍্যাটাস রিপোর্ট চেয়েছিল কোর্ট। তখন দিল্লি পুলিশের বক্তব্য ছিল ‘জঘন্য’ অপরাধে অভিযুক্ত কেউ গর্ভবতী হলেই যে জামিনে মুক্তি দিতে হবে এমন কোথাও লেখা নেই। তবে কেন জামিন পেয়েছিলেন কপিল গুজ্জরের মতো ব্যক্তিরা? সিএএ এনআরসির বিরুদ্ধে যুক্তিযুক্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রশ্ন তুললে তা ‘জঘন্য’ অপরাধ? – আবারও নিন্দায় সরব হয়েছিল দেশ। অবশেষে ২২ জুন দিল্লি পুলিশ জানায় তারা ‘মানবিক’ কারণেই আর বিরোধিতা করেননি সফুরার। তাই ১০,০০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডের বিনিময়ে তাকে জামিন দিয়েছে আদালত। কিন্তু একদিন আগে সেই ‘মানবিকতা’ কোথায় ছিল, তাই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

saf

 

দেশজুড়ে সম্মিলিত প্রতিবাদের জেরে কোনোপ্রকারে জামিন মিললেও রয়েছে হাজার বিধিনিষেধ। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি রাজীব শাকধ নির্দেশ দিয়েছেন – তদন্তে বাধা পড়তে পারে, সেরকম কোনো কার্যকলাপ করা যাবে না, তার বিরুদ্ধে যে যে বিষয়ে তদন্ত চলছে (সিএএ, এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হলেন সফুরা) সেরকম কোনও বিষয়ে অংশ নেওয়া যাবে না, অনুমতি ছাড়া দিল্লি ছাড়তে পারবেন না সফুরা এবং ১৫ দিনে অন্তত একবার তদন্তকারী অফিসারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে হবে সফুরাকে। আপাতভাবে নির্বিষ মনে হলেও এই নির্দেশ যে আদপে তার রাজনৈতিক জীবনের উপর বেড়ি পরানো, তা স্পষ্টতই বোঝা যায়।

- সৌমি জানা

খণ্ড-27