রাজ্যের বিভিন্ন গণসংগঠনগুলির সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করে লকডাউনে বিপন্ন ও আমপান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিলিবন্টনের কাজ চলছে। শিরোনাম “মানুষ মানুষের জন্য”। সেই সাথে বিভিন্ন এলাকা স্তরেও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত নাগরিক উদ্যোগে বহুবিধ কাজ চলছে। কোথাও জরুরি প্রয়োজনের নিরিখে প্রত্যন্ত ও সম্পূর্ণ অপরিচিত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, কোথাও ধারাবাহিকভাবে ত্রাণের সাথে পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের আন্দোলনমুখী প্রশ্নকে সমন্বিত করার প্রচেষ্টা চলছে।
চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকে গিয়ে চার পাঁচ বছর ধরে তাকে চাষযোগ্য করে তোলার মতো খানিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনি প্রকৃত অর্থে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে চলেছে সুন্দরবনের অরণ্য-প্রকৃতি ধ্বংসের মাধ্যমে। সবুজ ধ্বংসের একটা বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে আমফানপূর্ব ও আমফানোত্তর সুন্দরবনের স্যাটেলাইট চিত্রের তুলনা থেকে। পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের প্রশ্নের সাথে এই সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘকালীন প্রেক্ষাপটটিও যুক্ত।
নীচে গত সপ্তাহের কিছু উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতার রিপোর্ট দেওয়া হল। সাধারণভাবে ফুড প্যাকেট বলতে চাল, ডাল, তেল, নুন, সয়াবীন, আলু, পেঁয়াজ, ছাতু, চিঁড়ে, চিনি, চা-পাতা ইত্যাদি দ্রব্য প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী পরিমাণে একত্রিত প্যাকেট বোঝানো হয়েছে। অন্যান্য সামগ্রির মধ্যে রয়েছে ত্রিপল, মোমবাতি, লম্ফ, স্যানিটরি প্যাড, ওআরএস, সাবান, সার্ফ, বাচ্চাদের ওয়েফার ইত্যাদি। সব রিপোর্টে বারবার এইসবের পুনরাবৃত্তি এড়ানো হয়েছে। অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা, স্পটে গিয়ে পৌঁছনো থেকে শুরু করে সার্ভে ইত্যাদি কাজে বহু সাথি বন্ধুর উদ্যোগ যুক্ত। অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে কয়েকটি মাত্র নাম এসেছে বর্ণনার প্রয়োজনে। ধারাবাহিক এই নাগরিক উদ্যোগে সিপিআই(এমএল)-এর সাথে যুক্ত বা পরিচালিত সমস্ত গণসংগঠন ও গ্রুপ ছাড়াও সাথে আছে পিইউসিএল, অরিজিৎ মিত্র স্মারক কমিটি, সহমন, বোকাবুড়ো প্রভৃতি সংগঠন ও গ্রুপ এবং বহু ব্যক্তিবর্গ।
৫ জুন দঃ ২৪ পরগণার বাখরাহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের হাটবেরিয়া গ্রামে ত্রাণের কাজ চলে। এলাকায় প্রধানত সংখ্যালঘু দিনমজুরদের ঘনবসতি। প্রায় চারশত পরিবারের বসবাস। এখানে দেখা গেলো কোনরকম ‘সামাজিক দূরত্ব’র বালাই নেই! গরিবগুর্বো মানুষদের মধ্যে রয়েছে এক স্বাভাবিক পারস্পরিক সামাজিক নৈকট্য। ঘিঞ্জি গলিতে সারি সারি চাপবন্দি ঘর গেরস্তালি। সেখানে নেই কোনো শারিরীক দূরত্বের পরিসর বা অবকাশ, কিংবা তা নিয়ে কোনো দুর্ভাবনা!
লকডাউন এঁদের জীবিকা কেড়ে নিয়েছে। তবে, সংক্রমন এখনও থাবা বসায়নি। এখানকার মেহনতি মানুষেরা অনেকেই দর্জির কাজ করেন। এছাড়া ভ্যান রিকসা চালানো, মরসুমী ক্ষেতমজুরি, হোটেলে কাজ করা প্রভৃতি নানাবিধ পেশায় এঁরা দিন গুজরান করেন। লকডাউনে দর্জির কাজ বন্ধ। রেশনে অধিকাংশ মানুষেরা ৫ কেজি চাল পেয়েছে, স্বল্প সংখ্যকের জুটেছে ১০ কেজি চাল-গম বা আটা। এ ছাড়া লকডাউনে আর কিছুই গরিব মানুষেরা পায়নি। আমফান ঘূর্ণিঝড়ে বেশ কয়েকটি পরিবারের ঘর ভেঙ্গে গেছে, যাদের রয়েছে মাটির ঘর, টালির চাল। আংশিক ক্ষতি বহুসংখ্যকের। মুস্টিমেয় কয়েকজন প্লাস্টিকের ছাউনি পেয়েছে। অনেকের সেটাও জোটেনি। ক্ষতিগ্রস্ত ৩৩ জনের একটা তালিকা তৈরি করা হলো। দেখা গেলো তার মধ্যে প্লাস্টিকের শীট পেয়েছে মাত্র ৪ জন! পাকা ঘরের খবর নিয়ে জানা গেলো গোটা বাখরাহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯টি বুথে (প্রতি বুথে প্রায় তিন-চারশ পরিবার থাকার সম্ভাবনা) আবাস যোজনার ঘর পেয়েছে মাত্র ৬৫০ জন! সকলের জন্য পাকা ছাদের সরকারী ঘোষণার দৌড় কতটা এখান থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে প্রান্তিক জনজীবনের দারিদ্র্য বঞ্চনার এক সাধারণ চিত্র এখানেও প্রকটভাবেই চোখে পড়ে।
গ্রামের কয়েকটি পাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘরবাড়ি পর্যবেক্ষণ করে ক্ষতিপূরণের জন্য প্রাথমিক একটা তালিকা তৈরি করলেন এলাকার পরিচিত নকশালপন্থী নেতা দিলীপ পাল। একরাশ ক্ষোভ নিয়ে ভীড় করে আসা মানুষদের তিনি বললেন, “আমরা সরকারী লোক নই, আমরা না পাওয়া লোকদের নিয়ে আন্দোলন করি, সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করি। আপনাদেরও আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে”। উপস্থিত মানুষের চোখে মুখে ফুটে ওঠে সম্মতি। এর আগে ঐ গ্রামের ৫০ জন মানুষকে ফুড প্যাকেট ও অন্যান্য সামগ্রি দেওয়া হয়। খুবই দুঃস্থ আরও ২৫/৩০ জনকে ত্রাণ প্যাকেট দেওয়ার কথা বলেন স্থানীয়রা। সেটা পূরণ করা ও আগামীদিনে ঘর ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনের কথা মানুষকে জানানো হয়। আমফানের পরবর্তীতে স্পেশাল রিলিফের খাদ্যদ্রব্যের প্যকেট বিলি করেছে শাসক তৃণমূলের নেতারা। ঐ পাড়ায় বেছে বেছে ২৫/৩০ জনকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পঞ্চায়েতের “সহায়” নামক প্রকল্পে একেবারেই নিঃসহায় এমন মানুষদের বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করার কথা। এলাকার সাংসদের ছবি নিয়ে ঐ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দিন রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে গড়ে একশো মানুষকে। অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনার এই প্রেক্ষাপটে আগামী ১২ জুন বিষ্ণুপুর-২ ব্লক দপ্তরে এআইকেএম-এর পক্ষ থেকে বিক্ষোভ ডেপুটেশনে এলাকার মানুষকে সামিল করার উদ্যোগ নিচ্ছে এলাকার সংগঠন।
-- রিপোর্ট: জয়তু দেশমুখ
জয়নগর-২ ব্লকের নলগোড়া দ্বীপে কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি (আয়ারলা)-র পক্ষ থেকে ৯ জুন ৩২টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বন্টন হয় স্থানীয় নির্মাণ শ্রমিক স্বপন নাইয়ার ব্যবস্থাপনায়।
রিপোর্ট: নবকুমার বিশ্বাস
লকডাউনের প্রথম পর্ব থেকেই সিপিআই(এমএল)-এর যাদবপুর শহীদনগর পার্টি অফিসকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কর্মহীন ও বিপন্ন মানুষের মাঝে ফুড প্যাকেট দেওয়ার নাগরিক উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে চলছিল। ২০ মে আমফান ঘূর্ণীঝড়ের পর থেকে বিধ্বস্ত এলাকায় দ্রুত খাবার ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রি পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি প্রধান হয়ে ওঠে। এধরনের অনেক এলাকা থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন আসতে থাকে। সেই অনুযায়ী প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলি ও উত্তর ২৪ পরগণার মিনাখাঁ ব্লকে কয়েকটি এলাকায় পৌঁছে যাওয়া গেছিল। গত সপ্তাহে ক্যানিং-১ ব্লকের ঘুটিয়ারী শরিফ, গোসাবা ব্লকের বালি দ্বীপ ও ক্যানিং-২ ব্লকের দক্ষিণ বুধাখালিতে ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে যাওয়া হয়।
৯ জুন যাওয়া হয় দক্ষিণ বুধখালি, ক্যানিং থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রাম। আমফান বিধ্বস্ত এই গ্রামে এর আগে পৌঁছায়নি কোনোরকম সাহায্য। স্থানীয় এক কলেজ পড়ুয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে কলকাতার কমরেডরা ন্যূনতম জীবনধারণের কিছু সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে গেছিলেন। ১৫০টি পরিবারে তা বিতরণ করা হয়। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল পেরিয়ে ডানদিকে ঢুকতেই রাস্তা জুড়ে ভাঙা বিদ্যুতের খুঁটি আর গোড়া উপড়ানো গাছ। দুপাশে অসংখ্য ছোট বড় বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। হেড়োভাঙা বাজারের পর থেকে রাস্তা পুরোটাই ভাঙা। মাতলা নদীর ধার দিয়ে আরো এগিয়ে ভিতরের ইঁটের রাস্তা পার হয়ে গ্রামের ভিতরে ঢুকতেই নজরে পড়ে আমফানের প্রকোপ। মাতলা নদীর মাটির বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকে ভাসিয়েছে খাল, বিল, চাষের জমি। সর্বত্র নোনা জলের আস্তরণ। খালের পাশের যে মাটির রাস্তা, গত সপ্তাহেও সেখানে নোনা জল জমে ছিল, খালে জোয়ার ভাঁটা খেলছিল। তীব্র নোনা জলের বাষ্পে জ্বলে গেছে বহু গাছের পাতা। দশ বছর আগে আয়লা হওয়ার পরে যে বাঁধ পাকা করার করা ছিল তা আজও হয়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগণার এই অঞ্চল সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে সবজির একটা বড় অংশ আসে কলকাতার বাজারগুলোতে। গ্রামবাসীদের অনেকেই ভিনরাজ্যে যান নির্মাণ শ্রমিকের কাজে, আর বেশিরভাগই সবজি চাষ করেন। লকডাউনে তাদের কাজ হারিয়েছে আর আমফানে গ্রামের সমস্ত জমি নোনা জলের প্রভাবে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের সামনে আজ জীবিকা নির্বাহের সব রাস্তাই বন্ধ।
গ্রামে আসা প্রথম ত্রাণের গাড়িটির জন্য স্থানীয় স্কুল বাড়ির সামনে জমে ছিল ভীড়। সেখানে গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলতেই তারা স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন। আমফানের পর প্রায় কুড়ি দিন কেটে গেলেও ফেরেনি বিদ্যুৎ, জোটেনি কোনো ত্রাণ বা সরকারি সাহায্য। হেড়োভাঙা থেকে ভিতরে যাওয়ার সময়ে রাস্তায় সাধারণ মানুষ বারবার বলেন, ত্রাণ যেন সরাসরি গ্রামের মানুষের হাতেই তুলে দেওয়া হয়, নাহলে পুরোটাই বেহাত হয়ে যাবে। একই কথা বললেন বুধোখালির বাসিন্দারা। ত্রাণ লুঠ, পঞ্চায়েতের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ বারবার শোনা গেল তাদের মুখ থেকে।
৭ জুন যাওয়া হয় গোসাবা ব্লকের বালি। প্রত্যন্ত বালি দ্বীপে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ, ভেঙেছে মাটির বাড়ি, উড়ে গেছে ঘরের চাল। একফসলী জমিতে নোনা জল ঢুকে পড়ায় অনিশ্চিত সময়ের জন্য চাষের কোনো সম্ভাবনা নেই। বালি-২ পঞ্চায়েত এলাকায় বেশিরভাগ মানুষই কাজ করেন ভিন রাজ্যে। লকডাউনে তাদের অনেকেই আটকে ছিলেন সেখানে। জব কার্ডের কাজও গ্রামে অনিয়মিত। মেলে না নিয়মিত টাকা। গ্রামের মহিলারা বলছিলেন, লকডাউনে রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে দুবেলা সবার মুখে সামান্য খাবার তুলে দেওয়াই দায়। তার উপরে এই ঝড়ের প্রকোপে তারা পুরোপুরি বিপর্যস্ত।
ঘুটিয়ারী শরিফের বাঁশড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে একই অবস্থা। এখানে কমিউনিটি কিচেন চালাচ্ছিলেন যারা তাঁদের আবেদনে সাড়া দিয়ে আগেই চার দিনের খরচ পাঠানো হয়েছিল। আরও চার দিনের মতো চাল ডাল ও একশ পঁচিশটি ফুড প্যাকেট ও অন্যান্য জরুরি জিনিস নিয়ে যাওয়া হয় ৫ জুন। গিয়ে দেখা গেল ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় সরকারি সাহায্য নিতান্তই অপ্রতুল। আবেদনপত্র জমা হয়েছে, কিন্তু ক্ষতিপুরণের টাকা এখনও কেউ পাননি। পঞ্চায়েতের এক কর্মকর্তা জানালেন, ক্ষতিপূরণের টাকা জব-কার্ড হোল্ডারদের দেওয়ার জন্য নির্দেশ এসেছে। তবে জব-কার্ডবিহীন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কিভাবে ক্ষতিপূরণ পাবেন তা স্পষ্ট নয়। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষই বিভিন্ন অসংগঠিত পেশার সাথে যুক্ত। কেউ কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করেন, ছোটো কারখানায় কাজ করেন, রং-এর কাজ করেন, কেউ বা ট্রেনে হকারি করেন। লকডাউনের ফলে তাদের রোজগার বন্ধ। লোকাল ট্রেনের সচলতার ওপরই এই মানুষগুলোর কর্মস্থলে পৌঁছোনো নির্ভর করে। ট্রেন কবে চালু হবে, সেই নিয়েই চিন্তিত অধিকাংশ মানুষ। খুব কম সংখ্যক মানুষই চাষ, মৎসচাষ বা অন্যান্য পেশার সাথে যুক্ত। এখানেও বহু মানুষের রেশন কার্ড নাই বলে জানা গেল। স্থানীয় সাংসদ প্রতিমা মন্ডল(জয়নগর)ও বিধায়ক শ্যামল মন্ডল (ক্যানিং পশ্চিম)-এর বিরুদ্ধে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির পরে একবারও এলাকায় না আসার অভিযোগ তোলেন এলাকার মানুষ।
রিপোর্ট: মধুরিমা বক্সী ও আকাশ দেশমুখ
টালিগঞ্জ এলাকায় বাঘাযতীন ও বাঁশদ্রোনীকে কেন্দ্র করে লকডাউনে কর্মহীন মানুষের মাঝে কাজ চলেছে। স্থানীয় নাগরিক আন্দোলনের ব্যক্তিদের সাথে চার পাঁচ দফায় দুই শতাধিক পরিবারকে ফুড প্যাকেট দেওয়ার কাজ হয়। এলাকাটির এক বিপুল অংশ বিভিন্ন ধরনের অসংগঠিত শ্রমিক। বিভিন্ন দোকানে কাজ করা মানুষরা ছাড়াও আরও একটা প্রান্তিক গরিব অংশ হলেন পরিচারিকারা, যারা এলাকার গরিব বস্তিগুলিতে কোনোরকমে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। ঝড়ের পরেই টালিগঞ্জ এলাকার লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগণার রানিয়া অঞ্চলে যোগাযোগ করে প্রতিনিধি দল যান। এই অঞ্চলটি সোনারপুর-রাজপুর পৌরসভার একপ্রান্তে হোগলা জঙ্গলপূর্ণ জলা এলাকা এবং এখানকার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশই বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বস্তি থেকে উচ্ছেদ হয়ে ওখানে গিয়ে ঘর বাঁধা মানুষ। এছাড়াও সুন্দরবন লাগোয়া এলাকার মানুষেরা এখানে ভাড়া থেকে দিনমজুরি করতে কলকাতা যান। এখানে দুই দফায় পঞ্চান্নটি পরিবারকে ফুড প্যাকেট দেওয়া হয় এবং সমীক্ষা চালানো হয়। এখানে লকডাউনে কর্মহীন মানুষদের অনেকেই রেশন পাননি, যাদের রেশন কার্ড নেই তারা সরকির প্রতিশ্রুত ফুড কুপন পাননি। কোনোরকম সরকারী সহযোগিতা পাননি অধিকাংশ মানুষ। পরিচারিকাদের অনেকেই জানালেন যে লকডাউনের শেষে আবার কাজ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ঘরমিস্ত্রির কাজ করেন এমন কয়েকজন লকডাউনের আগে করা কাজের মজুরি পাননি। এলাকার বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে।সামনের সপ্তাহে থানা ও পৌরসভায় ডেপুটেশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রানিয়া অঞ্চলে মূলত পরিচারিকাদের মাঝে অ্যাপোয়া কর্মী শিখা নস্কর ও ঝর্ণা রায় এবং নির্মাণ শ্রমিক কর্মীদের ব্যবস্থাপনাতেই এখানকার ত্রাণের কাজ চলছে।
রিপোর্ট: চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি
হাওড়া জেলায় লকডাউনে কর্মহীন গরিব মানুষদের সহযোগিতার কাজ চলছিল। ঝড়ের রাত থেকে অন্যান্য কিছু এলাকার মতো বালি-বেলুড় এলাকাও জলোচ্ছ্বাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তিনদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। তারই মাঝে বালিঘাট বস্তিতে বিপন্ন মানুষের মাঝে যাওয়া হয় এবং কয়েকদিন পর জরুরি ভিত্তিতে ২৩টি পরিবারকে ত্রিপল পৌঁছে দিয়ে আসা হয়।
৩ জুন যখন রামরাজাতলার আড়ুপাড়া-কামারডাঙ্গা বস্তিতে পৌঁছন হয়, জল তখনও নামেনি। ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই বস্তির মহিলারা মূলত পরিচারিকার কাজ করেন। পুরুষরা কেউ ঠেলা চালক, কেউবা ছোটো কোনও কারখানায় কাজ করেন, লকডাউনে সকলেই কর্মহীন। সরকারের ত্রাণ তো পরের কথা সরকারী দলের নেতাদেরও দেখা যায়নি ঝড়ের দিন থেকে। এখানে একশোটি পরিবারকে খাবারের প্যাকেট দেওয়া সম্ভব হয়। বস্তি এলাকা জুড়ে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর কাজ করেন আইসার ছাত্রছাত্রী সাথিরা।
৬ জুন হাওড়ার বাগনান-১ ও বাগনান-২ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে যাওয়া হয়। বাগনান বিধানসভা এলাকার বাঙালপুর, হাড়োপ, হাটুরিয়া, রাজাপাড়া, কাঁটাপুকুর, বৃন্দাবনপুর, পিপুল্যান এবং মনিপাড়ায় মানুষের মাঝে তুলে দেওয়া হলো ত্রাণসামগ্রী। সরকার হাত তুলে দিয়েছে। পিপুল্যানে এখনও রাস্তা অচল।
ঘোড়াঘাটায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘর মেরামতের জন্য পঞ্চায়েতের ওপর চাপ বৃদ্ধির আন্দোলন চলছে। চিঠি লিখে জমা দেওয়া হচ্ছে পঞ্চায়েতে।
রিপোর্ট: অঙ্কিত মজুমদার
ভিক্ষা করে অথবা কিছু ছোটোখাটো কাজ করে যাদের দিন চলে, এরম বহু লোক থাকেন দমদম স্টেশন চত্বরে। অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে এই নিরাশ্রয়, সম্বলহীন মানুষদের দুর্দশা চরমে পৌঁছয়। শারীরিক দূরত্ব-স্যানিটাইজেশনের বালাই নেই, মাথার উপর ছাদ নেই, দুমুঠো ভাত যোগানেরও কোনো নিশ্চয়তা নেই। লোকাল কাউন্সিলরের তদারকিতে লকডাউনের প্রথম দিকে এলাকার একটি স্কুলে এনাদের রাখার এবং রোজকার খাবারের বন্দোবস্ত করা হলেও আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর সেই স্কুল থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয় এবং করোনা সংক্রমনের বিপদের মাঝেও বাধ্য হয়ে তাদের পুরনো জায়গাতেই আশ্রয় নিতে হয়। এরকম দুর্দিনে দমদমের কিছু সাধারণ ছাত্রছাত্রী নিজেদের যথাসাধ্য সামর্থ্য নিয়ে এই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নেয়, আরও বহু মানুষকে পাশে পাওয়া যায়। সকলের প্রচেষ্টার উপর ভর করে ওই বিপন্ন মানুষদের জন্য কিছু খাবার সরবরাহ করা হয়। এখান থেকে উদ্যোগ নিয়ে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য।
ঝড়ে দমদম এবং দমদম ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন বেশ কিছু বস্তি অঞ্চলের ক্ষতির পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। এমনই একটি বস্তি, ‘প্রমোদনগর বস্তি’। সেখানে ১৬২টি বাড়ি। লকডাউনের জন্য তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার বেহাল দশা। তার ওপর এই আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতির প্রকোপ! ঘরে দু'বেলার খাবার মজুত নেই অনেকেরই৷ যেহেতু এই এলাকার পাশে রয়েছে বাগজোলা খাল, তাই আম্ফানের জলোচ্ছ্বাসে বস্তির সমস্ত বাড়িতে খালের নোংরা জল ঢুকে যায়। এলাকাবাসী ক্ষোভের সাথে জানায়, তাদের এই দুর্দিনে প্রশাসনের কেউ তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি৷ কাউন্সিলর তাদের বিষয়ে উদাসীন। রেশন বলতে তারা সাকুল্যে স্রেফ ৫ কেজি করে চাল পেয়েছে। ওখানকার বেশিরভাগ ঘরের চাল উড়ে গেছে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভেসে গেছে, খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে। এমন অবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের কাছে পৌঁছে যায় শুকনো খাবার ও মহিলাদের জন্য স্যানিটারি প্যাড নিয়ে। এর সাথে ছিল খাবার স্যালাইন এবং ব্লিচিং পাউডার।
রিপোর্ট: সৌমেন্দু মিত্র
২০ মে আম্ফান পশ্চিমবঙ্গে যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রচুর মানুষ। কিছু মানুষ চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছে। আম্ফান বহু মানুষকে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। লকডাউনে গরিব মানুষের পেটে খিদের জ্বালা তো ছিলই, ঝড় তাদের মাথার উপরের চালটাও কেড়ে নিল। এই কঠিন সময়ে আমরা বারাসাতের কাছাকাছি এলাকার কিছু বন্ধুরা মিলে ঠিক করি যে যথাসাধ্য কিছু ত্রাণের যোগানের চেষ্টা করব।
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বস্তি। তাদেরই মধ্যে একটি হল বারাসাতের পুঁইপুকুড় ও ক্ষুদিরাম পল্লি। ঝড়ে অনেক মানুষের চাল, টালি উড়ে গেছে, দরজা ভেঙে গেছে। কিছু বাড়ির ওপরে গাছ ভেঙে পড়েছে। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে রেশন মোটামুটি সবাই পাচ্ছে। কিন্তু যাদের বাড়ি ভেঙে গেছে তারা এখনও সরকারের কাছ থেকে ত্রিপ্পল পায়নি। মানুষের সাথে কথা বলতে বলতে পৌঁছলাম পুঁইপুকুড় ও ক্ষুদিরাম পল্লির মধ্যবর্তী জেলে পাড়াতে। সেইখানে মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকের কাছেই রেশন কার্ড নেই, তাই রেশন পাচ্ছে না। কিছু মানুষের কাছে পুরোনো রেশন কার্ড আছে বলে তাদেরকে রেশন দেওয়া হচ্ছে না। লকডাউনে তাদের কাছে রোজগারের উপায়ও বন্ধ। জেলে পাড়াতে কম করে ২০০টি পরিবার রয়েছে। আমরা বন্ধুরা সকলেই ছাত্রছাত্রী – বিশ্বাস করি শিক্ষার অধিকার সবার। ঠিক করলাম জেলে পাড়ার ২৫০ জন ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেব স্টুডেন্টস কিট। স্টুডেন্টস কিট বলতে লেখাপড়ার প্রয়োজনীয় সামগ্রী আর কিছু শুকনো খাবার – আমাদের সাধ্যমতো যেটুকু সম্ভব সেটাও পৌঁছে দিলাম এলাকার আগামী প্রজন্মের হাতে। স্টুডেন্টস কিটের পাশাপশি এলাকার সমস্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করার বিষয়েও আমরা পরবর্তীতে আওয়াজ তুলব।
রিপোর্ট: অন্বেষা রায়
দার্জিলিং জেলার বিভিন্ন অংশে, বিশেষত শিলিগুড়ি মহকুমা ও সন্নিহিত অঞ্চলে কয়েক দফায় ফুড প্যাকেট দেওয়া হয়। শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের ৩১নং ওয়ার্ডের শক্তিগড়ে লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই বয়স্ক মানুষদের ওষুধ পৌঁছে দেওয়া বা বাজার করে দেওয়ার মতো সহযোগিতার কাজ শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে কয়েকজন বিএসএনএল কর্মীর উৎসাহ ও উদ্যোগ এবং স্হানীয় কিছু সহৃদয় মানুষের সহযোগিতায় কয়েক দফাতে আমরা লাগাতারভাবে এলাকার একটি বড় অংশের শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষদের মাঝে ফুড প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হতে থাকে। বেশ কিছু শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ হয়। লকডাউনের মাঝে বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচী সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও এঁরা অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তির কাজ করেছেন। এখানে ৭ম দফার পর এখন ৮ম দফার প্রস্তুতি চলছে।
রামনগর এলাকাতে কয়েক দফায় বেশ কিছু মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। ফাঁসিদেওয়া এলাকার পার্টি ও আইসার উদ্যোগে রাঙাপাণি-রাণীডাঙা, ছোট পথু জোত, বড় পথু জোত, কাওয়াখালির নিমতলা এলাকায় দু-দফায় সাধারণ দরিদ্র মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রী ও আবশ্যক দ্রব্য তুলে দেওয়া হয়েছে।
রিপোর্ট : শাস্বতী সেনগুপ্ত
নদীমাতৃক বঙ্গের গৌরবময় ঘনসবুজ এই সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লবণাম্বুজ অরণ্য। সমুদ্র উপকুলে অজস্র নদীনালার মোহনায় নোনা জলের এই অরণ্যের শিকড়ের জাল ধরে রাখে উপকুলের মাটি। এ অরণ্যের ধ্বংস মানে সমুদ্রের ঢেউয়ে ক্রমাগত মাটি ক্ষয়ে যাওয়া, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। মুনাফার আগ্রাসনে সেই পরিণতির দিকেই চলেছে বঙ্গোপসাগরের উপকুল। ট্যুরিজমের রমরমা ব্যবসা, ব্যবসায়ির লোভ ও তথাকথিত উন্নয়নের ফন্দিফিকিরে বলী প্রদত্ব হয়ে পড়েছে এই সুন্দরবন! চলছে নির্বিচারে বৃক্ষছেদন, বনাঞ্চলের জমিকে গ্রাস করে বসতি নির্মাণ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, তার সাথে নদীবাঁধগুলির অনিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ সুন্দরবনকে যেন এক অসুন্দর, অস্থির, অপ্রাকৃতিক ব্যবস্থার বিপর্যয়ের ধ্বংসলীলাক্ষেত্রে পরিণত করেছে। ফি বছরের জোয়ারের টানে, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, নদী বাঁধের ভাঙন, ভুমিক্ষয়, আর নাচার মানুষের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যুগপৎ সমাপতনে এই অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি, সমাজনীতি মায় রাজনীতির নানান গলিঘুঁজির মাঝেই মানুষগুলো খুঁজে চলেছে তাদের জীবনের সন্ধান। বিগত ২০ মের প্রলয়ংকরী আমফান ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে যেন কপর্দকশূন্য, নিঃস্ব, রিক্ত, অসহায় অবস্থায়।
ঝড়ের তান্ডবে উত্তর ২৪ পরগণার হাসনাবাদ ১নং পঞ্চায়েত এলাকার টিয়ামারী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ইছামতীর শাখা ডাঁসা নদীর পাড়ের মাটির বাঁধ প্রায় ৬০ - ৮০ ফুট ভেঙে গিয়েছিল। আর তার একপক্ষকাল কাটতে না কাটতেই বিগত ৪ ও ৫ তারিখের ভরা কোটালে নতুন করে ভেঙেছে নদীবাঁধ। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, উভয় ক্ষেত্রেই বাঁধ সেখানেই ভেঙেছে যেখানে বাঁধের লাগোয়া ইটভাঁটা আছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু নতুন নতুন গ্রাম। যেমন টিয়ামারি, টিলারচক, বাইলানি, সুলকুনি, বেনে, বেদপাটলি, বালিয়াডাঙ্গা, ঠাকুরানিয়াবাদ, গোয়ালআটি ইত্যাদি। নোনা জলে ভেসে গিয়েছে গ্রামগুলি। প্রবল জলস্রোতের ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়েছে। শস্যহানি সহ গবাদি পশু, পুকুর ও ভেরির মাছ, হাঁসমুর্গি মরেছে। অজস্র মানুষ ভরা কোটালের বানে আবারও ভিটেমাটি হারা হয়ে বা ঘরবাড়ি ছেড়ে একবুক জলে সাঁতরে আশ্রয় খুঁজছেন বাঁচার তাগিদে। নোনা জলের স্রোত কোথাও কোমর কোথাও বা হাঁটু সমান। গ্রামের রাস্তাই বা কি আর জমিই বা কি ঠাওর করাই যেন মুশকিল।
‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’-এর সকালে এমনই এক পরিস্থিতির মাঝে আমরা হাজির হয়েছিলাম। ১০টা নাগাদ কালীবাড়ি মোড় হয়ে পিচ রাস্তা ধরে আমরা যখন সুলকুনি ঘাটে যাওয়ার রাস্তার মোড়ের কাছে, তখনই দেখা গেল মহিলারা দলে দলে মাথায় পোটলা পুটলি নিয়ে গ্রাম থেকে বেড়িয়ে আসছেন। একটু উঁচু আশ্রয়ের খোঁজে। আরও অগ্রসর হতেই দেখা গেল রাস্তায় জলের স্রোত, স্থানীয় লোকজন চিৎকার করে বলছেন, “জোয়ারের জল বাড়ছে, আর এগোবেন না।” সামনে যতদূর দৃষ্টি যায়, জল আর শুধুই জল! অগত্যা আমরা গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে এলাম ৪ কিমি দূরে কালিতলার মোড়ে যেখানে অপেক্ষা করছে ত্রাণ সামগ্রী ও জলের গাড়ি। টিয়ামারী গ্রামের বিপ্লব, কালিপদ ও বেলিয়াডাঙ্গার নিরঞ্জন ফোনে জানালেন সবাই বেলেডাঙ্গা গ্রামে দাসপাড়ার মোড়ের কাছে জলের উপরেই দাঁড়িয়ে আছেন ত্রাণসামগ্রির অপেক্ষায়, টিয়ামারীর লোকজন জলবন্দী। জোয়ারের জল নামতে নামতে বিকেল গড়িয়ে যাবে। একবুক জল ঠেলে, সাঁতরে এলেন টিয়ামারীর হজরত, লুৎফার, কালিপদ, বিপ্লব, নিরঞ্জন সহ জনা সাতেক যুবক। স্থানীয় যুবক শুভ পাত্রের স্কুটিতে ঘুরে আশপাশের অন্য গ্রামগুলোতে দেখা গেল জোয়ারের জল ভাসিয়ে দিয়েছে গ্রাম মাঠ ঘাট জমি, হু হু করে জল ঢুকছে। পথের দুপাশ জলমগ্ন। ঘর গেরস্থলী ছেড়ে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার ওপর। চৌকির চারপায়ায় বাঁশ বেঁধে উঁচু করে চারপাশে ছাগলের খোঁয়ারের মতো বাঁশের চাচরি বা প্লাস্টিক বেঁধে ওই চৌকির উপরই চলছে সংসার, রান্নাবান্না, রাত্রি যাপন। আর তলা দিয়ে বয়ে চলেছে জলস্রোত! পূর্ব ঘূণি হয়ে আরিপাড়ার দিকে যেতে যেতে পথে এমনই একটি চালাঘর থেকে হঠাৎ শুনতে পেলাম এক নবজাতকের কান্নার আওয়াজ। এক পা দুপা করে সামনে গিয়ে দেখি বছর কুড়ি বাইশের এক মায়ের কোল আলো করে এক কন্যা সন্তান। কথা হল ফরিদা ও তাঁর স্বামী আব্বাসের সাথে। শুনলাম ঝড়ের রাতের বীভৎস অভিজ্ঞতার কথা – প্রবল ঝড়-বাদলের সন্ধ্যায় প্রসূতিকে নিয়ে যমে মানুষে টানাটানি, ভরসা বলতে গ্রামের ওই দাই মা মেহেরজান বিবি। আব্বাস মেয়ের নাম রাখলেন ‘ঝরা’। আরো পথ গিয়ে আবিষ্কার করলাম এগোনোর সব পথ রুদ্ধ, রাস্তার দুপাশে গ্রামের লোকজন মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন ফুট তিনেক উঁচু সরু মাটির বাঁধ, সে বাঁধ টপকে জল ঢুকছে গ্রামের এমাথা থেকে ওমাথার দিকে। লোকজন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন, বলছেন, এ জিনিষ তারা আয়লার সময়েও দেখেন নি। এমন কান্ড নাকি ঘটেছিল ৭৮-এর বন্যার সময়ে। ফিরতি পথে দেখা হলো পূর্ব ঘূণি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গোলাপি দিদিমণি (ফার্স্ট এএনএম) রেখা গায়েনের সাথে। সাড়ে আট হাজার পপুলেশন দেখভাল করতে হয় তাঁকে। গর্ভবতী মায়েদের টিকাকরণ থেকে নবজাতক শিশুদের ভ্যাকসিনেশনের কাজ, স্কুলে স্কুলে স্বাস্থ্য শিবির, টিবি রুগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঔষধ খাওয়ানো, হাজার একটা খাতাপত্র লেখালেখি সবই করতে হয় জনা দশেক আশাকর্মীকে নিয়ে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারবাবু অবশ্য আসেন, কিন্তু সপ্তাহে ওই একদিনই মাত্র। এভাবেই এঁরা গ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সলতেটা কোনোমতে জ্বেলে রেখেছেন। দেখা গেল দলদলে মুসলিম নারী-পুরুষ হেঁটে চলেছেন লেইয়ে পাড়ার দিকে, ওই গ্রামের বছর ৩৫-এর যুবক আকবর মারা গেছেন কিডনির অসুখে ভুগে, তাঁর কবরে মাটি দেওয়ার জন্য তাঁরা জলস্রোত ভেঙে চলেছেন গোরস্থানের দিকে। এই লকডাউনের ফলে যাতায়াতের অসুবিধার জন্য নিয়মিত ডায়ালিসিস বন্ধ হয়ে যায় আকবরের, ফলত প্রায় ঘরে বসে বসেই বেঘোরে প্রাণ গেলো যুবকের। শুনতে পেলাম এক মায়ের বুক ফাটা আর্তনাদ, ক্রমশ কেমন ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
বেলা ২টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর যখন দেখা গেলো জল নামার কোনো উপায় নেই, ক্রমশ ক্রমশ জল বাড়ছে, তখন সবাই হাজির হলাম জয়গ্রাম আর বেলেডাঙ্গা গ্রামের অপর সীমান্তে। সংবাদ পেয়ে ওখানে বহু মানুষ অধীর অপেক্ষায়। আগেই, ২ জুন আমরা এসেছিলাম একবার। সেই দিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী যাঁদের কুপন দেওয়া হয়েছিল তাঁদের হাতেই কুপন দেখে দেখে তুলে দেওয়া হলো ফুড প্যাকেট ও অন্যান্য সামগ্রি। প্রায় ৬০০ পরিবারের মতো ত্রাণ সামগ্রির ব্যবস্থাপনা ছিল।
গ্রামের মহিলাদের সাথে কিছু আলাপচারিতার কথা শোনালেন ছাত্রী কমরেড অন্বেষা। জানা গেল যে গ্রামের মহিলারা স্যানিটারি ন্যাপকিন সচরাচর ব্যবহার করেন না। একটা স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটের দাম কম করে ৩০ টাকা। একটি মেনাস্ট্রুয়াল সাইকেলে কম করে একজন মহিলার দুটি প্যাকেট লাগে। লকডাউনে সেটা কেনা যে কতটা কঠিন তা বলাই বাহুল্য এবং ঝড়ের পরে তো সেটা পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িগুলো অর্ধেক জলে, সেই অবস্থায় যখন মহিলারা কাপড় ব্যবহার করেন তখন তাদের স্বাস্থের যে কতটা ক্ষতি হতে পারে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। জানলাম আরো এক মর্মস্পর্শী কাহিনী তার মুখেই, “জোয়ারের জল অনেক বেড়ে গেছে বলে অনেক মহিলাই ত্রাণ নিতে এসেছেন সাঁতার কেটে। একরত্তি বাচ্চা ছেলে, সেও ত্রাণ নিতে এসেছিল, সে এসে তার মায়ের জন্য একটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট নিতে চায়। তার মায়ের শরীর খারাপ বলে সাঁতার কেটে আসতে পারেননি। এক দিনমজুর এসে তাঁর স্ত্রীর জন্য নিয়ে গেলেন স্যানিটারি ন্যাপকিন কারণ উনিও আসতে পারেননি সাঁতার কেটে।” কমরেড জয়শ্রী দাসের কাছে অভিযোগ জানালেন ওই গ্রামের মিড-ডে-মিলের রন্ধন কর্মীরা। লকডাউনের জন্য স্কুল বন্ধ থাকায় জোটেনি তাঁদের কোনো মজুরি। স্থানীয় সেল্ফ হেল্প গ্রুপের সাথে যুক্ত মানুষজন এমন দাবিও করেছেন যে এই অসময়ে যেন তাঁদের স্বনির্ভর প্রকল্পের ঋণ সরকার মকুব করেন। কথা বলেছিলাম জয়গ্রামের শ্যামল মণ্ডল জানালেন ১৭ দিন পরে গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে, ক্ষোভ ঝরে পড়লো তার কথায়। ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির জন্য পঞ্চায়েত সকলের দরখাস্ত জমা নিচ্ছে না, চলছে সরকারি ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি, যাদের পাকাবাড়ি আছে তারা অনেকে পেয়েছে ত্রিপল, আর যাঁদের মাটির বাড়ি তারা অনেকেই পাননি সরকারি ত্রাণ। আরো জানালেন, এই অঞ্চলে আমফানের ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব আয়লার মতই ব্যাপক। বিড়িবাঁধার কাজে যুক্ত শ্রমিক মহিলারা জানালেন, প্রতি এক কেজি বিড়ির পাতা দিয়ে বিড়ি বাঁধতে হয় ২৪০০ থেকে ২৭০০টি। এর থেকে কম হলে মজুরি কেটেও নেওয়া হয়। মজুরি মাত্র ৩৭৫ টাকা, এক একজনের ওই বিড়ি বাঁধতে সময় লাগে এক সপ্তাহ। স্থানীয় দুটি ইটভাটায় কিছু লোকজন কাজ করেন, আর মেছো ভেরিতে কিছু লোকের যেটুকু কাজকর্ম ছিলো তাও আজ বন্ধ। আমরা যে সকল ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে গিয়েছিলাম সেখান থেকে জলবন্দী হয়ে মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন টিয়ামারী গ্রামের জন্য আলাদাভাবে কিছুটা সরিয়ে রাখা হলো, কালীবাড়ি মোড়ের কাছে পরের দিনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পর। কথা হলো স্থানীয়দের সাথে, তাঁদের আবেদন খুব তাড়াতাড়ি একটা মেডিকেল ক্যাম্প করার। আশঙ্কা অমূলক নয়, কারণ জলবাহিত রোগের প্রার্দুভাব কিন্তু ওই সকল এলাকায় বাড়ছে। আমাদের ত্রাণবিলির কাজ শেষ হতে হতে বিকেল গড়িয়ে গেলো, এবার আমাদের ফেরার পালা, ইছামতীর ব্রিজে যখন আমাদের গাড়ি তখন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ আস্তে আস্তে উঠছে।
ত্রাণের ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন হাসনাবাদের বর্ষীয়ান নেতা কমরেড মোকসেদ মিস্ত্রি ও মিড-ডে-মিল রন্ধন কর্মী ইউনিউনের দুই নেত্রী নন্দিতা ও শ্যামলী। কমরেড নাতাশা, পাভেল ও তপতি বিশ্বাসের টিম তথা ‘নির্মাণ সাংস্কৃতিক সংস্থা’ ও ‘চেতনায় বিজ্ঞান’ সংগঠনের কর্মীরা অসম্ভব পরিশ্রম করে বিভিন্ন কাজ করেছেন। সমগ্র টিমে যুক্ত ছিলেন আরও অনেক দায়িত্বশীল কর্মী ও নেতারা। এলাকায় ধারাবাহিক কাজ চলবে। সেই লক্ষ্যে এবং মানুষজনের সাথে কথাবার্তার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি :
প্রথমত সুন্দরবনের এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব যেটা পড়েছে তা হল নদীবাঁধ ভাঙন, নদীর জল, সমুদ্রের নোনা জল গ্রামের ভেতর ঢুকে পড়া, ফলত আগামী দু-চার বছর চাষ আবাদ হবে না জমিগুলোতে, শুরু হবে খাদ্যের আকাল।
ঝড়ে সেই সব নদীবাঁধ মূলত কোথাও বেশি কোথাও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিছু কিছু অংশেও। এর পেছনেও উঠে আসছে বাঁধ নির্মাণে স্থানীয় নেতা ও সরকারী আধিকারিকদের অশুভ আঁতাত, দুর্নীতি, অবৈধ ভাবে বাঁধের গায়ের মাটি কেটে ইট ভাঁটা চালানো এবং মাছ চাষের জন্য প্রভাবশালীদের দ্বারা নদীর জল ঢোকানোর মতো অভিযোগ।
দ্বিতীয়ত, অনেক কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে, বিশেষত খড়ের চাল, টিনের ও আ্যাসবেস্টসের চাল উড়ে গেছে। কিন্তু এই দুসপ্তাহেই গ্রামের মানুষ নিজেদের উদ্যোগে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িগুলোর মেরামতের কাজ কিছুটা এগিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে জলস্রোতের ফলে সব কাজ বন্ধ, সবাই কমবেশি জলবন্দী, এক অসহায় করুণ অবস্থা।
যে বিষয়গুলি নিয়ে চর্চা হতেই পারে, তা হলো এই সব অঞ্চলের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য চাই এক দীর্ঘস্থায়ী সমাধান। কারণ বছর বছর নদিবাঁধ ভাঙবে আর কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো গোছের কিছু করে দিয়ে উদ্ধার পাওয়া দীর্ঘদিন চলতে পারে না। তাই তৈরি করতে হবে সুন্দরবন ও সেখানকার মানুষদের বাঁচানোর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে একটি আদর্শ “মাস্টার প্ল্যান” (একদা যা বহু চর্চিত হয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি সে ভাবে)।
দাবি উঠুক, অবিলম্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে, যে দলে থাকবেন নদী বিশেষজ্ঞ, প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ, আর স্থানীয় স্তরের বিভিন্ন পরিবেশবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব।
এই সব অঞ্চলে ৯০-এর দশকে চালু হওয়া ইডব্লিউ স্কিম (যা একদা উপকুলবর্তী এলাকার মানুষদের জন্য চালু হয়েছিল)-এর আওতায় কাঁচাবাড়ির পরিবর্তে পরিবার পিছু ছোট ছোট কটেজ টাইপের পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে সরকারী খরচে।
প্রতিটি পঞ্চায়েতে দোতলা বা তিন তলা ফ্লাড সেন্টার বা রেসকিউ সেন্টার তৈরি করতে হবে, যেখানে মজুত থাকবে আপৎকালীন অবস্থার জন্য একসাথে তিন চারশো লোকের থাকার ব্যবস্থা, থাকবে পর্যাপ্ত খাদ্য, ওষুধপত্র, পানীয় জল আর গবাদি পশুদের জন্য ভিন্নধর্মী পশু খামার।
সমগ্র সুন্দরবন এলাকা জুরে নানান তাৎক্ষণিক বিপর্যয়-প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ গঠন, যেখানে যুক্ত হবেন এই অঞ্চলের যুবশক্তি, তাঁদের পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের আশু প্রয়োজন এবং যাতে তারাই প্রতিটি দুর্যোগের পর তার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোর দ্রুত মেরামত করতে পারেন।
এই প্লাবনের তাৎক্ষনিক ক্ষতির চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি অনেক বেশি। যেসব অঞ্চলে নোনা জল ঢোকে সেখানে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে কয়েক বছর। ফলে শুরু হবে গ্রাম ছেড়ে পরিবার ছেড়ে দূর শহরে লেবারের কাজ করতে যাওয়া মানুষের ঢল। স্থানীয় স্তরে কর্মদিবস সৃষ্টি করতে হবে। যাদের চাষের জমি ডুবে গেছে তাদের জন্য স্থানীয় স্তরে বিকল্প রোজগারের পথ, বিকল্প গ্রামীণ অর্থনীতির ভাবনার জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগ দ্রুত নিতে হবে।
আজ তাই আশু প্রয়োজন হলো প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করা, সুন্দরবন বাঁচলে বাঁচবে শহর, বাঁচবে মানব সম্পদ। কোর অঞ্চলের পরিধিকে আর ছোট না করা। কোর অঞ্চল বা তার সংলগ্ন অঞ্চলে কোনো ধরনের ব্যবসায়িক বৃহৎ নির্মাণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা। পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষায় জনউদ্যোগকে আরো বাড়াতে হবে, শুধুমাত্র সরকার মুখাপেক্ষিতা নয়, গড়ে উঠুক ওই অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষা ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন।
রিপোর্ট: দেবল, বারাসাত