১৯৯৩ সালের ৩১ মে বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার সদর ২নং ব্লক এর নবস্থা ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার করন্দা গ্রামে এলাকার সামন্ত-পুঁজিবাদী জমিদারদের মদতপুষ্ট তৎকালীন শাসক দলের গুন্ডাবাহিনী পরিকল্পিত ভাবেই নৃশংস গণহত্যা সংগঠিত করে। ভোরের আলো-আঁধারে গরিব ক্ষেত মজুর পাড়ায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল। প্রাণ বাঁচানোর জন্য মানুষগুলো ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকলে জানোয়ার গুলো কুপিয়ে কুপিয়ে ৬ জন গরিব ক্ষেতমজুরকে খুন করে আরও অনেক মহিলা শিশু ও বয়স্ক মানুষকেও আহত করে ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তাদের অপরাধ ছিল সমবায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং গরিব মানুষের জন্য খাসজমি, মজুরি, কাজের দাবিতে আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন তথা আইপিএফ প্রার্থী হয়ে প্রতিদন্ধীতা করেছিলেন। গ্রামীণ গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ নির্বাচন পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরের দিন সকালেই এই গণহত্যার খবর শোনার পর বর্ধমান জেলার তথা রাজ্যের বাম গণতান্ত্রিক মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যায়। প্রতিবাদ করতে থাকলেন। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বর্ধমান জেলার সর্বত্র। বন্ধ পালিত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। প্রতিবাদের চাপে খুনীদের বিরুদ্ধে কেস দিতে বাধ্য হল। কিন্ত জামিনে মুক্তি দেওয়াহল। তারপর শুরু হল বিচারের নামে প্রহসন। দেখা সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও জর্জ কোর্ট একজন খুনীকে ও শাস্তি দেয়ার পক্ষে রায় না দিয়েই সমস্ত খুনীদের কেই বেকসুর খালাস করে দিল। চলল হাইকোর্ট। কয়েক বার ফাইল হারানোর নাটকের পর সমস্ত খুনীদের বেকসুর করে দিল। মনে হল যেন কেউ খুনই হয়নি। কিন্ত সংগ্রামী জনগন লড়াই চালিয়ে গেল। মানুষের সহযোগিতায় সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হল। সুপ্রিম কোর্ট নিচের কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খুনীদের শাস্তির পক্ষের কয়েকটি যুক্তি দিয়ে হাইকোর্টকে পুনঃবিচার করতে বললেন। মানুষের সহযোগিতা নিয়ে আবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হল। এখনও বিচারের অপেক্ষায় আছেন। বর্ধমান-এর বাম গণতান্ত্রিক মানুষের লড়াই অব্যাহত। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর করন্দা হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য একটা কমিশন গঠন করেছেন। কিন্ত সব শাসকের একই ডাক। শাসক শ্রেণীর সেবায় গরিব হত্যার বিচারের কমিশন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। খুনীরা শ্রেণীস্বার্থে আজ রং পাল্টে শাসক দলের ছত্র ছায়ায়।
গরিব মানুষের লড়াইয়ের প্রথিক হয়ে আছে করন্দার লড়াই। প্রতিবছর ৩১ মে করন্দার শহীদ বেদীর সামনে মানুষ জমায়েত হয়ে শহীদ দিবস পালন করে। শহীদদের স্মরণ সভা করে। বিক্ষোভ দেখান, খুনীদের বিচারের দাবি তোলেন। গরিব মানুষের স্বার্থে লড়াই-এর শপথ গ্রহণ করেন। এবারও ৩১ মে, ২০২০ পুর্ববর্ধমান-এর বিভিন্ন ব্লকের গরিব জনগণ সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন-এর নেতৃত্বে করন্দা দিবস পালন করেন। সকাল আটটার সময় লকডাউন-এর প্রতিকুলতার মধ্যেও প্রচন্ড দুর্যোগের উপেক্ষা করেই করন্দার শহীদ বেদীর সামনে জমায়েত হল।
শহীদদের পরিবারের লোকজন পার্টির কমরেডরা উপস্থিত হন। শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন। খুনীদের বিচারের দাবির সাথে সাথে লকডাউন-এ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও তোলেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে সরব হন। এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। সভা পরিচালনা করেন কমরেড সুকুমার সোম। উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সদস্য কমরেড কুনাল বক্সী।
কালনা ২নং ব্লক-এর অকালপোষ অঞ্চলের আগ্রাদহ গ্রামে করন্দার শহীদ দিবস পালন করা হয়। শহীদ বেদীতে মাল্যদান ও এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
রায়না থানার শ্যামসুন্দর গ্রামে বিক্ষোভ ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্তেশ্বর ব্লকের কুলুট গ্রামে কমরেড আনসারুল আমন মন্ডলের নেতৃত্বে স্মরণ সভা হয় ।
নাদনঘাট থানার ইসলামপুর গ্রামের কমরেড জিয়াদুল সেখের পরিচালনায় স্মরণ ও প্রতিবাদ সভা সংগঠিত হয়।
পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের ফলেয়া অফিসে করন্দার শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন ও শহীদ বেদীতে মাল্যদান করা হয়। কাটোয়া থানার সাহাপুর গ্রামে করন্দার বীর শহীদদের স্মরণে বিক্ষোভ ও শপথ অনুষ্ঠান সংগঠিত করাহল। শহীদদের স্বপ্ন সফল হবে।