বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে ২-৪ জুলাই কয়লা শিল্পে ধর্মঘট
caa

“আত্মনির্ভর ভারত’’ গড়ে তোলার ‘অভিযানে’ নেমে কয়লা শিল্পে ঢালাও বেসরকারীকরণের লক্ষ্যে এবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মাঠে নেমে পড়লেন।  মাত্র দু’দিন আগে, ১৬ জুন, ছিল সেই বিভীষিকাময় মঙ্গলবার — যেদিন চীনা সেনার হাতে নিহত হলেন ২০ জন ভারতীয় জওয়ান, আর সেই একই দিনে কোভিড১৯-এর ছোবলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী প্রাণ হারালেন। তার ঠিক দু’দিন পর, ১৮ জুন বেসরকারী বিনিয়োগের জন্য কয়লার বাণিজ্যিক খননের দরজা হাট করে খুলতে দেশের ৪১টি কয়লা ব্লকের অনলাইন নিলামের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। আর, তিনি এই পদক্ষেপকে  তুলনা করলেন “আত্মনির্ভর ভারত’’ গড়ার লক্ষ্যে কয়লা শিল্পকে রাষ্ট্রায়ত্ত নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘ লকডাউনের গ্রাস থেকে আনলক করার সঙ্গে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সম্পর্কে এমন নির্লজ্জ উক্তি আজ পর্যন্ত দেশের কোন প্রধানমন্ত্রী এর আগে করেছেন কিনা সন্দেহ রয়েছে।

কারা ছিলেন সেই“আনলক”-এর মাহেন্দ্রক্ষণে?

কয়লা নিলামে বণিক সংস্থা ফিকির তরফে ছিলেন মোদীর পেয়ারের কর্পোরেট বেদান্তের কর্ণধার অনিল আগরওয়াল ও টাটা গোষ্ঠীর  চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন প্রমুখ। ছিল কয়লা মন্ত্রকের হোমড়া চোমড়া ব্যক্তিবর্গ। গোটা দেশের এই ৪১টা কয়লা ব্লকের মধ্যে অবশ্য নাই এ রাজ্যের কোনো ব্লক।

যথারীতি, বেসরকারীকরণের এই পদক্ষেপকে বিপুল বিনিয়োগ ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ হিসাবে বিজ্ঞাপিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি দাবি করেছেন, শুধুমাত্র এই ৪১টি কয়লা ব্লকে আগামী ৫-৭ বছরে লগ্নি আসবে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার। আর, তৈরি হবে প্রায় ২.৮ লক্ষ কর্মসংস্থান। সেই ২ কোটি কর্মসংস্থানের যে আষাঢ়ে গপ্পো শুনিয়েছিলেন মোদী ২০১৪-র নির্বাচনের সময়ে, তার আবার সামনে এলো। আর এ প্রসঙ্গেই আবার প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পরস্পর বিরোধী মন্তব্য সামনে এলো। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, কয়লা মজুত থাকা সত্ত্বেও আমদানি বন্ধ করে স্বনির্ভরতা বাড়াতেই নাকি এই বেসরকারীকরণ।

আর, প্রধানমন্ত্রী জানালেন, কয়লা মজুতে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়, কিন্তু রপ্তানিতে চতুর্থ। রপ্তানিতে ভারতকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার লক্ষ্যেই এই বেসরকারীকরণ।

এতদিন নিয়ম ছিল, মোট মজুত ভান্ডারের মূল্যের ১০ শতাংশ টাকা দিতে হতো কোল ব্লকের জন্য। বেসরকারী মালিকদের জন্য মোদী সরকার ০.২৫ শতাংশ টাকা করেছেন। মাত্র ৪ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিং দিতে হবে। এদিকে, ১০০ শতাংশ এফডিআই-র অনুমতি দিয়ে দেওয়া হলো। বিদেশি সংস্থাগুলো এবার থেকে কয়লা রপ্তানি করতে পারবে। এইভাবে কোল ইন্ডিয়াকে ধাপে ধাপে তুলে দিয়ে কয়লা শিল্পকে দেশি বিদেশি মালিকদের কাছে সঁপে দেওয়া হল।

এর বিরুদ্ধে এআইসিসিটিইউ, সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, এমনকি বিএমএস সহ আরও কয়েকটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ২-৪ জুলাই গোটা শিল্প জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যেদিন মোদী অনলাইনের মাধ্যমে কোল ব্লকের নিলাম করলেন, সেই ১৮ জুন ইউনিয়নগুলো ধর্মঘটের নোটিশ দেয়। দেশের যেখানে যেখানে কোল ইন্ডিয়ার সাবসিডিয়ারির সদর দপ্তর রয়েছে, সেখানেই শ্রমিক জমায়েত করে দেওয়া হয় ধর্মঘটের নোটিশ। যে পাঁচটা দাবিতে এই ধর্মঘট হচ্ছে সেগুলো হল :

  • ১) কয়লা শিল্পে বাণিজ্যিক খননের সিদ্ধান্ত বাতিল করো।
  • ২) সিআইএল অথবা এসসিসিএল-কে দুর্বল বা বেসরকারী করার সমস্ত পদক্ষেপ বন্ধ করো।
  • ৩) সিএমপিডিআইএল-কে সিআইএল থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত বাতিল করো।
  • ৪) সিআইএল এবং এসসিসিএল-এর কন্ট্রাক্ট শ্রমিকদের এইচপিসি/সিআইএল-র বর্ধিত মজুরি বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে।
  • ৫) জাতীয় স্তরে কয়লা মজুরি চুক্তির ৯.৩.০, ৯.৪.০ ও ৯.৫.০ ধারাগুলো কার্যকরী করতে হবে।

এর পাশাপাশি, কয়লা শিল্পে ১০০ শতাংশ এফডিআই বিনিয়োগের ও তীব্র বিরোধিতা করছে ইউনিয়নগুলো।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এই বেসরকারী বাণিজ্যিকরণের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিজেপির শ্রমিক সংগঠন এখনো পর্যন্ত ধর্মঘটের পক্ষে রয়েছে। তারা এমনকি ধর্মঘটের প্রতিরক্ষা শিল্পে প্রস্তাবিত অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘটের পক্ষে স্ট্রাইক ব্যালট সংগঠিত করছে বাম ও অন্য ইউনিয়নগুলোর সাথে, যৌথভাবে।

কয়লা শিল্পের এই ধর্মঘটের পক্ষে সমস্ত রাজনৈতিক দল, অন্যান্য সংগঠনের কাছেও আবেদন রেখেছে ধর্মঘটী ইউনিয়ন গুলো। এই ধর্মঘটের সাফল্যের জন্য সমস্ত বাম গণতান্ত্রিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।

- অতনু চক্রবর্তী 

খণ্ড-27