লকডাউনের মধ্যেই ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। সেই সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সরকারী সাহায্য অপ্রতুল। তার মধ্যেও সরকারি ত্রাণ নিয়ে নীচুতলায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি। তাই সেই সমস্ত সহনাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয় যাদবপুর-ঢাকুরিয়া এলাকার পার্টির পক্ষ থেকে। লকডাউনের সময়ে কয়েক হাজার মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পাশে এসে দাঁড়ায় বহু ব্যক্তি ও সংগঠন।মানবাধিকার সংগঠন পিইউসিএল, ফোরাম ফর পিপলস হেলথ, আরওয়াইএ, বোকাবুড়ো সহ কিছু সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পৌঁছনো হয় ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায়।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কুলতলী ব্লক আমফানে বেশ ভালো মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ব্লকের নদীতীর সংলগ্ন এলাকাগুলোর মানুষের জীবন-জীবিকা কার্যত বিপন্ন। কলকাতা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে, কুলতলির গোপালগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতে পৌঁছয় রিলিফ টিম। স্থানীয় হাইস্কুল-এর এক জন শিক্ষক সুধর মন্ডল। ওই অঞ্চলে মূলত তিনিই সাহায্য করেছেন মানুষের কাছে পৌঁছতে। গোপালগঞ্জ গ্রাম ও সাংকিজাহান কলোনি এই দুটি গ্রামের শতাধিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় ন্যূনতম বাঁচার রসদ। মশারি, লম্ফ, ডাল, চিড়ে, গুড়, বিস্কুট, স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে দেওয়া হল ওই সমস্ত আমাদেরই সহ-নাগরিকদের কাছে।কলকাতা শহরের এক চিকিৎসক তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই মানুষগুলোর জন্য পাঠিয়েছিলেন, চাল-ডাল-আলু-সয়াবিন-তেল-এর প্যাকেট। তাও বিলি করা হয় ওই অসহায় মানুষগুলোর কাছে।
সাংকিজাহান কলোনির বাসিন্দাদের অধিকাংশের কাছেই রেশন কার্ড নেই। ফলে লকডাউনের গোটা সময়ে, সরকারী খাদ্যসামগ্রী তারা প্রায় পাননি। সাথেই রয়েছে স্থানীয় স্তরে তৃণমূল ও বিজেপির দ্বন্দ। এখানে এসে দেখা গেল, রেশন কার্ড ছাড়া রেশন পাওয়ার সরকারী প্রতিশ্রতি প্রায় ভাঁওতা। যার যাঁতাকলে পরে, ওই মানুষগুলো শোষিত, নিঃস্ব। নদীর পারের বাসিন্দা অধিকাংশেরই জীবিকা মাছ ধরা। খুব কম সংখ্যক মানুষের কাছেই রয়েছে নিজস্ব চাষের জমি। কাজেই রোজগারের উপকরণও তাদের কাছে এই মুহূর্তে নেই। আর তার মধ্যেই এসে উপস্থিত এই দুর্যোগ। কুলতলী সহ আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। কবে সেই বিদ্যুৎ আসবে, তা বলতে পারছেন না, এলাকার কেউই।
আমাদের এই সহনাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, অরিজিৎ মিত্র স্মারক কমিটি, বাঁশদ্রোণী এলাকার পার্টির কর্মীরা, ঝাড়গ্রামের একটি ফার্মার্স ক্লাব সহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। আগামী দিনেও উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের কাছে সাধ্যমত সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে যাবো আমরা।