সারা ভারত কিষান মহাসভা (AIKM), অখিল ভারতীয় কিষাণ সভা, ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (টিকাইত) এবং জয় কিসান আন্দোলন যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে ২ জুন ২০২০-২১ সালের জন্য কেন্দ্রের মোদী সরকার খারিফ কৃষি পণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা কৃষকদের সাথে প্রকাশ্য এক জালিয়াতি। কৃষক সংগঠনগুলি পৃথক পৃথক বিবৃতিতে ২০২০-২১ সালের জন্য মোদি সরকার ঘোষিত খারিফ ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে বিগত ৫ বছরে সর্বনিম্ন বৃদ্ধি বলে উল্লেখ করেছে।
কিসান মহাসভার জাতীয় সভাপতি রুলদু সিং ও সাধারণ সম্পাদক রাজারাম সিং, কিষাণ সভার জাতীয় সভাপতি অশোক ধাওয়ালে, সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা, কিষাণ ইউনিয়নের জাতীয় সভাপতি রকেশ টিকাইত ও জাতীয় মুখপাত্র ধর্মেন্দ্র মালিক, জয় কিসান আন্দোলন জাতীয় সংযোজক অভীক সাহা, পাঞ্জাব কিষান ইউনিয়নের প্রাদেশিক সচিব গুরুনাম সিং ও গোরা সিং আলাদা আলাদা বিবৃতিতে বলেছেন যে গতকাল কেন্দ্রীয় সরকার যে ১৪টি খারিফ ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে ১২টি ফসলের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি আজ অবধি সর্বনিম্ন। এই বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির কারণে ক্রমবর্ধমান ব্যয়কে হিসেবে তো রাখেইনি, উল্টে এটি ফসলের প্রকৃত মূল্যকে কমিয়ে দিয়েছে।
কৃষক সংগঠনগুলি কৃষকদের সাথে এই প্রতারনা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা এবং স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সি-২ + মোট ব্যয়ের দেড় গুণ সহায়কমূল্য ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। কৃষক সংগঠনগুলি জানিয়েছে যে, মোদি সরকার এ বছর প্রতি কুইন্টাল ধানের গড় উৎপাদন ব্যায় ১২৪৫ টাকা ধার্য করেছে। যেখানে গত বছর সি-২ অনুযায়ী ধানের উৎপাদন ব্যায় কুইন্টাল প্রতি ১৭২২ টাকা ধার্য হয়েছিল। এর সাথে + ৫০% মুনাফা যুক্ত করলে গত বছরই ধানের প্রকৃত সহায়কমূল্য কুইন্টাল প্রতি ২৫৮৩ টাকা হওয়ার কথা ছিলো। উৎপাদন খরচের হিসাবে কারচুপি করা হচ্ছে। কেবল সার, বীজ ও পারিবারিক শ্রমের দামকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। কিন্তু জমির খাজনা ও সুদ সহ ঋণ শোধের দায়কে (C2) হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে।
পাঞ্জাবের কৃষি মন্ত্রক গত বছর ধানের গড় সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ২৭৪০ টাকা ধার্য করেছিল। কেরল সরকার কৃষকদের ধান কিনছে প্রতি কুইন্টাল ২৬৯০ টাকায়। অন্যদিকে ছত্তিশগড় সরকারও গত বছর থেকে কৃষকদের ধান কিনছে কুইন্টাল প্রতি ২৫০০ টাকা হারে। পঃ বঙ্গ সরকার কিনছে ১৮১৫ টাকা তার সাথে পরিবহন বাবদ ২০ টাকা যোগ করে ১৮৩৫ টাকা কুইঃ দরে। এখন এক বছর পর, যখন ফসল উৎপাদনের ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন মোদি সরকার ধানের সর্বনিম্ন সমর্থন মূল্য কুইন্টাল প্রতি ১৮৬৮ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা গত বছরের মোট ব্যয়ের সাথে ৫০% মুনাফার হিসাবে প্রতি কুইন্টালে ৫৬০ টাকা কম।
এটি গত বছরের ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ৩.৯২% বৃদ্ধি থেকেও আরো কমিয়ে মাত্র ২.৭১% বৃদ্ধি। অথচ একেই ফসলের দামের দেড়গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে মোদী সরকার দেশের সামনে মিথ্যাচার করছে। কৃষকদের প্রতি এই প্রতারনার বিরুদ্ধে কৃষক সংগঠনগুলি অন্যান্য কৃষক সংগঠনের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামার ঘোষণা করেছে।
এআইকেএম দাবি জানিয়েছে প্রকৃত কৃষকদের থেকে ধান কিনতে হবে। এ জন্য গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প করতে হবে। ভাগচাষি ও চুক্তিচাষিরাও যাতে সরকারী দর পায় তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ফড়ে দালাল মহাজনদের থেকে ধান কেনা চলবে না।
-- জয়তু দেশমুখ