পুর্ব বর্ধমান জেলার কালনা- পুর্বস্থলী- মন্তেশ্বর- কাটোয়ার বিভিন্ন এলাকার প্রচুর গ্রামীণ মেহনতি মানুষ বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ধরনের মজুরের কাজ করে থাকেন । করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির জন্য হঠাৎ অপরিকল্পিত লকডাউন-এর ব্যাপক শ্রমিক বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়ে। কাজ বন্ধ, মজুরি নাই, থাকার জায়গার সমস্যা, মালিকরা ভাড়া টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য ছাপ দিচ্ছেন। আবার তাদের পরিবারের লোকজন ঘরে থেকে খাবার ও অর্থের অভাবে চরম কষ্ট ভোগ করছেন । এই অবস্থার মধ্যে বিভিন্ন গ্রামের শ্রমিকদের পরিবারের লোকজন পার্টির এলাকার কমরেডদের কাছে জানাতে থাকেন এবং কান্না কাটি করতে থাকেন। পার্টির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রদেশের যেমন কেরল, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, দিল্লী ও গুজরাট প্রদেশের কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অনেক বড় বড় ভাষণ ও ঘোষণা এই সমস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অসহায়ত্ব মোচনের ব্যবস্থা হল না। তাই গ্রামের গরিব মানুষের মধ্যেক্ষোভ বেড়ে চলেছে ।এই অবস্থায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর দাবি এবং খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা ও পরিবার পিছু অর্থ বরাদ্দ করার দাবি মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও আশা জাগিয়েছে। তাই সমস্ত লকডাউন প্রতিকুলতার মধ্যেও ১৮ এপ্রিল সকাল ৮টা থেকেই কালনা থানার আগ্রাদহ, ঝিকড়া, বাজিতপুর ও ওমরপুর গ্রামের ২০টি পরিবার বাড়ির মধ্যে বসেই অনশনে অংশগ্রহণ করেন। এই চারটি গ্রামের ২৫০ লোক বিভিন্ন রাজ্যে আছেন। আবার নাদনঘাট থানার ইসলাম পুর, শাঁকড়া গ্রামের ১০টি পরিবার অনশনে বসেছেন। এই দুটি গ্রামের ৩০০ লোক বিভিন্ন রাজ্যে আটকে আছেন ।
ঐ দিনই বিভিন্ন রাজ্যে থাকা শ্রমিকরা অনশন করেন। রাজস্থান, কেরল, হরিয়ানার শ্রমিকদের সামিল হওয়া উল্লেখযোগ্য ।
১৯ এপ্রিল এই আন্দোলনের সংহতিতে বর্ধমান শহরের সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন-এর জেলা কমিটির সদস্য কমরেড শ্রীকান্ত রানা ও কমরেড কুনাল বক্সীর নেতৃত্বে যুব ও শ্রমিক কমরেডদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন সংগঠিত হয়।
কালনা লোকাল কমিটির সম্পাদক কমরেড রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভালোসংখ্যক কমরেডের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে দূরত্ব বজায় রেখেই সংহতিমুলক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন । বৈদ্যিপুর গ্রামের সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন জেলা কমিটির সদস্য কমরেড প্রদ্যুত ঘোষ ও কমরেড সুমি মজুমদার (ঘোষ) অনশনে বসেন ।
কাটোয়া থানার সাহাপুর গ্রামের কয়েকটি শ্রমিক পরিবারের লোকজন অনশন করেন ।
২১ এপ্রিল বর্ধমান শহরে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন ও সিপিএমের পক্ষ থেকে যৌথ বিক্ষোভ কর্মসূচী সংগঠিত করাহয়। বিক্ষোভ অবস্থানে সিপিআই(এম-এল)-এর পক্ষ থেকে কমরেড শ্রীকান্ত রানা, কমরেড কুনাল বক্সী কমরেড তৃনাঞ্জন বক্সী ও অন্যান্য কয়েক জন ছিলেন । এবং মেমারী শহরে ও যৌথ কর্মসূচী সংগঠিত করা হয়। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন-এর পক্ষ থেকে জেলা কমিটির সদস্য কমরেড সাধন কর্মকারের নেতৃত্বে ৪ জন উপস্থিত ছিলেন । দাবি ছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের সরকারী খরচে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা, পরিবার পিছু ১০ হাজার টাকার করোনা ভাতা, পর্যাপ্ত রেশন দেওয়া ও রেশন নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে।