লকডাউন পর্বেও অব্যাহতভাবে চলল মোদী সরকারের ফ্যাসিস্ট এজেণ্ডা
locc

 

সমাজে আধিপত্যকারী শ্রেণী যেমন কখনও সম্পদ-অর্থনীতি-সংস্কৃতির ওপর তাদের কবজাকে আলগা করার কথায় আমল দিতে পারে না, ফ্যাসিস্তরাও একইভাবে কোনো পরিস্থিতিতেই তাদের কেন্দ্রীয় এজেণ্ডা থেকে বিরত থাকার কথা ভাবতে পারে না। নরেন্দ্র মোদী কোভিড-১৯ সংক্রমণের মোকাবিলায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ার, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুঃসময়ের মোকাবিলার আহ্বান জানালেন। কিন্তু মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকিয়ে তোলা, সরকারের সমালোচক মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে নিগ্ৰহ ও গ্ৰেপ্তারি, অ-বশ্য সাংবাদিকদের দানবীয় আইনে অভিযুক্ত করা, সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে তাদের গ্ৰেপ্তার করা – এই সমস্ত মার্কামারা ফ্যাসিবাদী পদক্ষেপকেও মোদী সরকার লকডাউন পর্বে অবাধে চালিয়ে গেল। বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে করোনা মোকাবিলা ব্যবস্থার সরজমিন অনুসন্ধানের নামে কেন্দ্রের দাদাগিরি তীব্র মাত্রা অর্জন করল। কোথাও-কোথাও বিজেপি অনুগামী রাজ্যপালরাও তাঁদের গূঢ় এজেণ্ডার প্রয়োগে অতীব সক্রিয়তা দেখাতে উঠেপড়ে লাগলেন। পশ্চিম বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে করোনা সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষার অপ্রতুলতা, করোনায় মৃত্যূ সংখ্যা নিয়ে কারচুপি, চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশার অভিযোগের কিছু যথার্থতা অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারেও প্রশ্নের কোনো অবকাশ নেই যে, এ রাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যে রণংদেহি মূর্তি ধারণ করেছেন তা কখনই পশ্চিমবঙ্গবাসীর হিতাকাঙ্খা প্রসূত নয়। জগদীপ ধনখড় এই রাজ্যে বিজেপিকে রাজনৈতিক সুবিধা জোগানো, নাগপুরের খিদমতগিরি করার এজেণ্ডাকে নির্লজ্জভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। ঐক্যের সংঘটন নয়, বিভেদ সৃষ্টিই মোদী ও তাঁর নিয়োজিত এজেন্টদের আরাধ্য হয়ে উঠছে। লকডাউন পর্বেও মোদী সরকার তার নিপীড়নমূলক এজেণ্ডাকে – বিরোধী স্বরের দমন, গণতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটানোর যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তার কিছু নিদর্শনের দিকে তাকানো যাক।

লকডাউনের প্রথম দিকে নিজামুদ্দিনে তবলিগি জামাতের জমায়েতকে ধরে মুসলিম-বিরোধী বিদ্বেষ উসকিয়ে তোলার প্রচেষ্টা সক্রিয় হয়ে উঠল। বিজেপি নেতৃবৃন্দ এবং তাদের বশংবদ মিডিয়া প্রচার করতে লাগল যে, ভারতে করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধির জন্য জামাতের ওই জমায়েতই অনেকাংশে দায়ী। সরকারী কর্তাব্যক্তিরাও এই সুরে কথা বলতে লাগলেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে ইঙ্গিত করা হল যে, ভারতে করোনা সংক্রমণের এক তৃতীয়াংশের উৎস হল নিজাম্মুদিনের জমায়েত। নিজামুদ্দিনের জমায়েতে যোগ দেওয়া মুসলিমদের কেউ-কেউ করোনা আক্রান্ত হলেও তাদের থেকেই সংক্রমণ অনেক ছড়িয়েছে এমন ধারণার কি সত্যিই ভিত্তি রয়েছে? ভারতের বেশ কিছু বিজ্ঞানী এই বক্তব্যকে খণ্ডন করে বললেন-- জামাতের জমায়েতের কারণে সংক্রমণ অনেক ছড়িয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। এই বক্তব্যের সমর্থনে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে তথ্যের দাবিও করলেন।  করোনা নিয়ে ভারতে মুসলিমদের অসম্মান ও হয়রানি ঘটানো  হচ্ছে, কয়েকটি আরব দেশের নেতারা এই মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করলে প্রধানমন্ত্রী মোদীও অবশেষে বলতে বাধ্য হলেন যে-- মহামারী ধর্ম-জাতি-বর্ণ ভেদাভেদ মানে না। কিন্তু ততদিনে হিন্দুত্ববাদীদের উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল হয়েছে -- জামাতের জমায়েতকে ‘করোনা বোমা’ আখ্যা দিয়ে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে মুসলিম-বিরোধী ঘৃণা ছড়ানোর তাদের উদ্দেশ্য অনেকটাই হাসিল হয়েছে। গোটা মুসলিম সমাজকেই কালিমালিপ্ত করার প্রকল্প সচল হয়েছে।

aisa

 

দিল্লী পুলিশ জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত ছাত্র মীরন হায়দারকে ২ এপ্রিল এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া সাফুরা জারগরকে ১০ এপ্রিল ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত করে গ্ৰেপ্তার করল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ -- ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে সংঘটিত দিল্লী দাঙ্গায় তারা ইন্ধন যুগিয়েছে।এই দুজন ছাড়াও জেএনইউ-র প্রাক্তনী উমর খলিদও ইউএপিএ-র ধারায় দিল্লী পুলিশের হাতে অভিযুক্ত হল। সে নাকি ফেব্রুয়ারির শেষে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভে শামিল হতে মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পরিস্থিতিকে বিশৃঙ্খল করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন – প্রথম দু-জন পড়ুয়ার গ্ৰেপ্তারি এবং আর একজনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে অভিযোগের জন্য এগুলো আদৌ কারণ নয়। এই তিন জনই সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল এবং শাহিনবাগ আন্দোলনেও প্রেরণা যুগিয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সর্বোচ্চ স্তরের নির্দেশেই দিল্লী পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। দিল্লী পুলিশের এই তৎপরতার পিছনে দিল্লী দাঙ্গার তদন্তকে বিপথে চালিত করার, হিন্দুত্ববাদীদের চক্রান্তকে ধামাচাপা দেওয়ার অভিসন্ধিকেও অনেকে দেখতে পাচ্ছেন।

এরপর ১০ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের পুলিশ অযোধ্যা থানায় সকাল ১০টার মধ্যে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিশ ধরাল ওয়েব পত্রিকা দ্য ওয়্যার-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভরদরাজনকে। এবং এই নোটিশ ধরানোর জন্য উত্তরপ্রদেশের পুলিশ লকডাউনের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে অযোধ্যা থেকে ৭০০ কিমি পথ পেরিয়ে দিল্লীতে ভরদরাজনের বাড়িতে হাজির হয়। ভরদরাজনের অপরাধ কি? তাঁর একটি লেখায় ভরদরাজন একটি উদ্ধৃতিকে  উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বলে উল্লেখ করেন যেটি আসলে আদিত্যনাথের নয়। ভগবান রাম তাঁর ভক্তদের করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবেন – ভরদরাজনের লেখায় উল্লেখ করা এই উক্তিটি অযোধ্যা রাম মন্দির ট্রাস্টের প্রধান স্বামী পরমহনসের, যোগী আদিত্যনাথের নয়। এই ভুল জানতে পেরে ভরদরাজন পরে তাঁর লেখায় সেটি সংশোধনও করে নেন। কিন্তু হিন্দুত্ববাদের মার্কামারা এক শাসকের পুলিশ তাতে সন্তুষ্ট হতে পারবে কেন? যিনি মোদী সরকারের সমালোচনা করে থাকেন, হিন্দুত্ববাদীদের দুষ্কর্মের স্বরূপ উদঘাটন করেন, মানবাধিকার রক্ষার প্রবক্তা হয়ে উঠে রাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ধিক্কার জানান – সামান্য সুযোগ পেলেও কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হেনস্থার মুখোমুখি হওয়া থেকে তাঁকে রেহাই দেবে কেন? কতটা প্রতিহিংসা প্রবণ হলে তবে অনবধনতাবশত এক তুচ্ছ ভুলের জন্য নোটিশ ধরাতে পুলিশকে ৭০০ কিমি পথ পারি দিতেও নির্দেশ দেওয়া যায়!

tend

 

দলিত অধ্যাপক আনন্দ তেলতুম্বডে এবং সমাজ আন্দোলনের কর্মী ও লেখক গৌতম নওলখা অনেক দিন ধরেই মোদী সরকারের বিষনজরে – সরকার এদের 'শহুরে নকশাল' বর্গের অন্তর্ভুক্ত বলেই মনে করে, রাষ্ট্রের হাতে দমনের ভবিতব্যই যাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এদের বিরুদ্ধে আপাত অভিযোগ – ২০১৮-র ১ জানুয়ারীর ভীমা কোরেগাঁওয়ের সহিংস ঘটনায় এদের প্ররোচনা ছিল, মাওবাদীদের সঙ্গে এদের যোগ খুঁজে পাওয়া গেছে, এরা নাকি মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রেও  যুক্ত ছিল। তবে আইন-শৃঙ্খলার ইস্যুর চেয়ে কারণ যে আরও গভীরে, রাষ্ট্রের অনুসৃত নীতির বিরোধিতা করে শাষকদের রোষ আকর্ষণই যে তাদের হেনস্থার পিছনে আসল কারণ তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার নয়। দুজনেই মোদী সরকার ও হিন্দুত্ববাদকে ধিক্কার জানান এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বিরোধী ধারাবাহিক কন্ঠস্বর। অধ্যাপক তেলতুম্বডে আম্বেদকরের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে, জাত প্রথার ধ্বংসে একনিষ্ঠ লড়াইয়ের কথা বলেন। মোদী হিটলারের চেয়েও বিপদজনক বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন। গৌতম নওলখা কাশ্মীরে ভারতীয় রাষ্ট্রের নীতির, সেখানে সেনা অত্যাচারের তীব্র সমালোচক। এই ধরনের বিরোধী স্বরদের সহ্য করাটা মোদী-শাহদের ধাতে একেবারেই নেই। আর তাই ২০১৯-এর নভেম্বরে মহারাষ্ট্রে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর এদের বিরুদ্ধে তদন্তের ভার রাজ্যের হাত থেকে নিয়ে এনআইএ-র হাতে দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট এদের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে এনআইএ-র কাছে আত্মসমর্পণ করতে বলে। দুজনেই এনআইএ-র কাছে আত্মসমর্পণ করলে এনআইএ-র পুলিশ ১৪ এপ্রিল তাঁদের গ্ৰেপ্তার করে।

কাশ্মীরের কোন সাংবাদিক মোদীকে সমালোচনা করার স্পর্ধ দেখাবে, সেটা মোদী সরকার হজম করবে কি করে। মাসরত জাহরার চিত্র সাংবাদিক – ওয়াশিংটন পোস্ট, আল জাজিরা, দ্য ক্যারাভ্যান-এর মতো পত্রিকায় তাঁর ছবি ছাপা হয়েছে। এই সাংবাদিক যখন কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুদের অসহায়তাকে তুলে ধরেন, মোদীর মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালানোর আহ্বানের সমালোচনা করে বলেন, “আমি হলফ করে বলতে পারি যে, আমরা দুটো অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াই করছি – একটা কোভিড-১৯ আর একটা মোদীর মূঢ়তার বিরুদ্ধে”, সরকারকে ফোটানো এই হুল সহ্য করা মোদীর পক্ষে সম্ভব হয় না। ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত করে ১৮ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। কাশ্মীরে দ্য হিন্দু পত্রিকার সাংবাদিক পীরজাদা আশিকও এফআইআর-এর লাঞ্ছনা থেকে রেহাই পেলেন না। অভিযোগ – তাঁর প্রতিবেদনে বিবৃত শোপিয়ানের একটা সংঘর্ষের ঘটনায় তিনি ভুয়ো তথ্য দিয়েছেন। তাঁর প্রকাশিত তথ্য সঠিক কিনা সেটা তিনি প্রশাসনের কাছ থেকে যাচাই করেন নি। কিন্তু আশিক জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিবেদনে ‘তথ্যগত ভ্রান্তির’ অভিযোগ ঠিক নয় – তাঁর দেওয়া তথ্য যে সঠিক তা প্রতিষ্ঠিত করার মতো প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। কিন্তু জোহুজুর নয়, এমন সাংবাদিকদের শাস্তি দিতে অতীব ব্যগ্ৰ সরকার যুক্তির পথে হাঁটবে কেন! অতএব ২০ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল। কাশ্মীরের আর এক সাংবাদিক ও লেখক গৌহর গিলানি এই অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন যে, সামাজিক মাধ্যমে তাঁর করা পোস্টগুলো “জাতীয় সংহতি, সার্বভৌমত্ব এবং ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর।” তিনিও তাই এফ আই আর-এর অস্ত্রে সরকারের হাতে বিদ্ধ হলেন।

polo

 

কোভিড ১৯-এর মোকাবিলায় পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই যখন লকডাউন চলছে, তখন দেশে-দেশে স্বৈরাচারী শাসকদের নিজেদের হাতে আরও ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রবণতা অত্যন্ত স্পষ্টরূপে সামনে আসছে। অনেক দেশেই জারি হয়েছে জরুরি অবস্থার আইন – অবাধ চলাফেরা ও জমায়েতের উপর নিয়ন্ত্রণ, প্রতিবাদ-বিক্ষোভে নিষেধাজ্ঞা, আর্থিক বঞ্চনা, সেলফোন সংযোগ ও নানান অ্যাপকে কাজে লাগিয়ে জনগণের ওপর নজরদারি, এবং এই ধরনের গণতন্ত্র সংকোচনের আরও পদক্ষেপের ক্লেশ জনগণকে স্বীকার করতে হচ্ছে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে নিয়ন্ত্রিত করতে এগুলো তাৎক্ষণিক ভাবে কার্যকর হলেও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। কিন্তু স্বৈরাচারী নেতারা এই সমস্ত পদক্ষেপকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাকে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করছেন। রাজনৈতিক ভাষ্যকার জসুয়া কার্লনাতজিক তাঁর সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন – “আলিয়েভ (আজারবাইজানের স্বৈর নেতা) কখনই একা নন। ফিলিপাইনস থেকে হাঙ্গেরি পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষেত্রে অনেক দেশেই স্বৈরাচারী নেতারা ভাইরাসকে ধরে তাঁদের হাতে ক্ষমতাকে বাড়িয়ে নিচ্ছেন--নতুন-নতুন বিধি চালু করছেন যেগুলো করোনাভাইরাস পরাস্ত হলেও পাল্টানো দুরূহ হবে। …” আমেরিকার ট্রাম্প থেকে ব্রাজিলের বোলসোনারো থেকে হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবান, করোনা অধ্যায়ে এই দক্ষিণপন্থী নেতাদের স্বৈর দাপট বেড়েই চলেছে। ভারতেও এই প্রবণতার, গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল হয়েই দেখা দিচ্ছে। যে কোনো বিরোধী স্বরকেই ‘জাতীয়তা বিরোধী’ বলে ছাপ মেরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পুলিশি জেরা ও তদন্তের মুখে ফেলার রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের পরিঘটনা সম্ভবত বেড়ে চলবে। ইউএপি-এর নির্বিচার প্রয়োগ এবং নাগরিক অধিকারের দমনও সম্ভবত অবাধ হয়ে উঠবে। অর্থনৈতিক সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই বিশেষজ্ঞ মহলের অনুমান (অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন) এবং এর বোঝা জনগণের ঘাড়ে পাচার করতে মোদী সরকার বোধকরি নিজদের হাতে ক্ষমতার আরও কেন্দ্রীভবন ঘটাবে। এই প্রবণতাকে রুখতে সক্রিয় না হলে মোদী স্বৈরাচারের দানবীয় আকার নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের রক্ষার লড়াই সামনের দিনগুলোতে অনেক বেশি জরুরি মাত্রা অর্জন করতে চলেছে।

aisa

 

খণ্ড-27