বিবৃতি
বিশাখাপত্তনমে এল জি পলিমার কারখানায় গ্যাস লিকে মর্মান্তিক ঘটনা: সিপিআই(এমএল)-এর বিবৃতি
gas leakpress

 

কর্তব্যে অবহেলার জন্য এলজি পলিমার ও সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে সিপিআইএমএল!

এই বিপর্যয়ে দায়িদের চিহ্নিত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

মোদী সরকারকে অবশ্যই সুরক্ষা এবং পরিবেশগত নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। ‘পেশাগত সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্ম পরিবেশ সংক্রান্ত কোড বিল’ সহ প্রস্তাবিত ‘শ্রম কোড বিল’ প্রত্যাহার করতে হবে!

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে আরো একটি বিপর্যয়ে ধাক্কা খেল দেশ। এই বিপর্যয়টি ম্যানমেড। আজ ৭ মে, ২০২০ ভোর ৩ টে নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের এলজি পলিমার প্ল্যান্ট থেকে স্টাইরিন গ্যাস লিক হওয়ার ফলে শিশু সহ ১১ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু ও ২০০ জনের গুরুতর অসুস্থতার খবর জানা যায়। পরবর্তীতে ক্রমশ জানা গেছে যে, বিষাক্ত গ্যাস ২০০০-এর বেশি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কারখানার আশেপাশের গ্রামগুলিতে পড়ে আছে অচেতন মানব দেহ ও মৃত গবাদি পশু। এই দৃশ্য ১৯৮৪ সালের ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতিকে উস্কে দিচ্ছে, যে মর্মান্তিক ঘটনায় ৩০০০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

এলজি পলিমার ফ্যাক্টরিটি ১৯৬১ সালে পলি স্টাইরিন উৎপাদনের জন্য ‘হিন্দুস্তান পলিমার’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে এই সংস্থাটি দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক কর্পোরেট সংস্থা ‘এলজি কেমিক্যালস’ অধিগ্রহণ করে এবং এর নাম পরিবর্তন করে ‘এলজি পলিমার’ করে। প্ল্যান্টটি একটি জনবহুল অঞ্চলে অবস্থিত এবং লিক করে বেরিয়ে আসা গ্যাস এই কারখানার পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অনেকগুলো গ্রামকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ের পর ৩৬ বছর পেরিয়ে এসে এখনও সরকার মানুষের প্রাণ বিপন্ন করে চলেছে। ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের ‘ঈজ অফ ডুইং বিজনেস’ বা ‘সহজে ব্যবসা করার’ নীতি কারখানার নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলিকে অকেজো করে দিয়েছে। মানুষের জীবনেরও ঊর্ধ্বে মুনাফাকে প্রাধান্য দেয়ার বাস্তবতা এই বিপর্যয় আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে, মোদী সরকারের অনুসরণে অনেক রাজ্য সরকার শ্রম আইনগুলিতে একাধিক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে। প্রয়োজনীয় সুরক্ষানীতি বা স্বাস্থ্যরীতি অনুসরণ করার কোনও রকম দায়বদ্ধতা ছাড়াই কারখানা পরিচালনা করার এবং শ্রমিকদেরকে ইচ্ছে মতো ব্যবহার করার অবাধ ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে মালিকদের। উত্তরপ্রদেশ সরকার তো শ্রম আইন পুরোপুরি স্থগিত করে দেওয়ারই পরিকল্পনা করছে। শ্রমিকদের শ্রম ও গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর এ এক মারাত্মক হামলা। অবশ্যই এর বিরোধিতা করতে হবে। এই ধরনের পদক্ষেপ কলকারখানায় বিপর্যয় ডেকে আনার নামান্তর।

যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা এবং তাঁদের যথাযথ সহায়তা ও যত্নের  ব্যবস্থা করা।

কর্তব্যে অবহেলার জন্য এলজি পলিমার এবং সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি আমরা। সমস্ত কারখানাই পুনরায় চালু করতে হবে যথাযথ নজরদারির অধীনে। ‘ঈজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর নামে নিরাপত্তা, শ্রম ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিনিষেধকে ও তদারকির নিয়মকে অকেজো করে দেওয়ার বিপর্যয়কর সরকারী নীতির অবসান ঘটাতে হবে।

ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার মতো আরেকটি ট্র্যাজেডিকে ঠেকাতে শিল্প সুরক্ষা সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ এবং কারখানা পরিদর্শন আইন চালু করতেই হবে।

– কেন্দ্রীয় কমিটি
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন

খণ্ড-27