শ্রম আইন সংশোধন, ১২ ঘণ্টার কাজকে ফিরিয়ে আনা, বিরাষ্ট্রীয়করণ-বেসরকারিকরণ, পরিযায়ী সহ অসংগঠিত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে পশ্চিম বাংলায় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ২৭ মে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হল রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে। এআইকেএসসিসির কমরেডরাও বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচীতে সামিল হন।
উত্তর ২৪ পরগণা
কামারহাটি পৌরসভার সামনে শ্রম আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে এবং লকডাউনের মজুরির দাবিতে যৌথ বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হয়। বক্তব্য রাখেন নবেন্দু দাশগুপ্ত (এআইসিসিটিইউ), ঝন্টু মজুমদার (সিটু), সাহানাজ আলম (এআইটিইউসি) এবং পরিচালনা করেন শৈবাল ঘোষ (এআইটিইউসি)। অশোকনগরে এআইসিসিটিইউ-র সহ বামপন্থী টেড ইউনিয়নগুলো যৌথভাবে কর্মসূচী পালন করে।
বসিরহাট এআইসিসিটিইউ শ্রম আইন সংস্কার বিরুদ্ধে, নির্মাণ শ্রমিকদের ভাতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দবিতে টাউন হলের সামনে প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করে। জেলা নেতা কমরেড দেবব্রত বিশ্বাস নেতৃত্ব দেন। অনেক চেষ্টা করেও অন্য ইউনিয়নগুলোর সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
হাওড়া জেলা
২৭ মে সকালে এআইসিসিটিইউ সহ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ডাকে হাওড়া জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ ও স্মারক লিপি দেওয়া হল। আজকের জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসুচীতে উপস্থিত ছিলেন এআইসিসিটিইউ-র জেলা কমিটির সদস্য কমঃ ভোলা চৌধুরী সহ কমঃ রতন দত্ত, অজয় কর্মকার, সেখ হায়দার আলি ও দেবব্রত ভক্ত। এই একই কর্মসূচীর অংশ হিসাবে ২৭ মে বিকেল ৫টায় বালি জুট মিলে প্রদর্শিত হয় বিক্ষোভ। বালি মিলের কর্মসূচীতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন কমঃ তপন ঘোষ। মিলের স্থানীয় কমরেডদের সাথেই কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য কমঃ নীলাশিস বসু।
হুগলি জেলা
শ্রম আইন সংশোধন, ১২ ঘণ্টার কাজকে ফিরিয়ে আনা, বিরাষ্ট্রীয়করণ-বেসরকারীকরণ, পরিযায়ী সহ অসংগঠিত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে পশ্চিম বাংলায় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির নেতৃত্বে ২৭ মে প্রতিবাদ কর্মসূচী চুঁচুড়ায় পৌরসভার পিপুলপাতি, ঘড়ির মোড়ে এবং কোদালিয়া পঞ্চায়েতের হুগলি মোড়ে অনুষ্ঠিত হয়। সিটু, ইউটিইউসি, টিইউসিসি এবং এআইসিসিটিইউ-র অন্তর্গত শ্রমিকেরা এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। লাল ঝান্ডা এবং পোস্টারে দাবিগুলো তুলে ধরে শ্রমিকেরা দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থানে সামিল হন এবং স্লোগানে গলা মেলান। এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন সিটুর পক্ষ থেকে মলয় সরকার ও মনোদীপ ঘোষ, টিইউসিসিসি-র পক্ষে সুনীল সাহা, ইউটিইউসি-র কিশোর সিং, এআইসিসিটিইউ-র পক্ষে ভিয়েত ব্যানার্জি এবং কল্যাণ সেন। নির্মাণ শ্রমিক সহ, পরিবহন শ্রমিকেরা যেমন এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তেমনই ব্যাঙ্ক কর্মচারি, শিক্ষক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আজকের প্রতিবাদী কর্মসূচীতে অংশ নেন। এআইসিসিটিইউ-র অন্তর্গত নির্মাণ শ্রমিকেরা ভালো সংখায় উপস্থিতি হয়েছিলেন, ঝান্ডা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন পরিবহন (বাস) শ্রমিক, দীর্ঘ দিনের বাম আন্দোলনের নেতা বর্ষীয়ান সনৎ রায়চৌধুরী এই কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন। পরদিন মহকুমা শাসক এবং জেলাশাসক-এর কাছে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচী ঘোষণার মধ্যে দিয়ে কর্মসূচী সমাপ্ত হয়।
পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলার রিপোর্ট
পূর্ব বর্ধমান জেলার এআইকেএসসিসি-র পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক ডেপুটেশন দেওয়া হবে। আর শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ব্লকে ডেপুটেশন ও শহর গঞ্জে বিক্ষোভ সংগঠিত হবে। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন ও সিপিএমের সংগঠন গুলো সব জায়গাতেই ছিল।
কালনা ২নং ব্লক এর বিদ্যুৎ অফিসের সামনের গঞ্জে এআইসিসিটিইউ ও সিটু ইউনিয়ন-এর পক্ষ থেকে যৌথ ভাবে বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করা হয়। বিভিন্ন শ্রমিক বিরোধী শ্রম আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে ও বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠে অকালপোষ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে এআইকেএসসিসি-র পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। দুই ক্ষেত্রেই ভাল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কর্মসূচী সফল হয়।
পূর্বস্থলী ২নং ব্লক অফিসে বেলা ২টার সময় এআইসিসিটিইউ ও সিটুর পক্ষ থেকে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত করা হল। মেড়তলা গ্রাম পঞ্চায়েতে এআইকেএসসিসি-র পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। একই সময় কালেখাতলা ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতে ডেপুটেশন কর্মসূচী সংগঠিত হয়। সদর ২নং ব্লক-এ সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। বর্ধমান শহরে শ্রমিক সংগঠন গুলোর পক্ষ থেকে যৌথ বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। মন্তেশ্বর ব্লকের কুসুমগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। মেমারী ১নং ব্লকের নিমো গ্রাম পঞ্চায়েতেও ডেপুটেশন বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত করা হল। পূর্বস্থলী ১নং ব্লকের নাদনঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতে ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়। কাটোয়া থানার অগ্রদ্বীপ অঞ্চলে বিক্ষোভ সংগঠিত হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলার এআইকেএসসিসি র কর্মসূচি কার্যকর করার জন্য সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, ও সিপিএমের সাথে বারবার আলোচনার পর অন্যরা সরাসরি নাকচ করল। সিপিএমের ক্ষেত মজুর ইউনিয়ন-এর নেতা বলল সব ব্লকে বা অঞ্চলে আপনাদের সাথে যোগাযোগ করে নেওয়া হবে। কিন্ত কোথাও ওদের খবর নেই । আমাদের কর্মীরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ও সাড়া পাই নাই। শেষ মুহূর্তের উদ্যোগে খড়গ্রাম ব্লকের ঝিল্লী গ্রাম পঞ্চায়েতে ডেপুটেশন বিক্ষোভ সংগঠিত করা সম্ভব হল। নেতৃত্ব দেন হায়দার সেখ ও হাসান সেখ।
বীরভূমের বোলপুর শহরে শ্রমিক সংগঠন গুলোর পক্ষ থেকে যৌথ বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়। রামপুরহাট শহরেও বিক্ষোভ সংগঠিত হয় ।
প্রতিরক্ষা শিল্প শ্রমিক ও কর্মচারীদের প্রতিবাদ
ন্যাশানাল প্রোগ্রেসিভ ডিফেন্স এমপ্লয়িজ ফেদারেশনের তরফেও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করা হয়। গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিতে কর্মসূচী শুরু হয় শহীদবেদীতে মালা দিয়ে। কালো ব্যাজ পরে পোস্টার সহযোগে বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরে প্রতিবাদ কর্মসূচী চলে। ঠিক হয়েছে ২৮ মে সারা দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে প্রতিবাদ হবে ও কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি জানানো হবে। প্রতিরক্ষা শিল্পে কর্পোরেটাইজেশনের প্রস্তাব প্রত্যাহার ও এফ ডি আই এর মাত্রা ৪৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৪ শতাংশ করার বিরুদ্ধে দাবি সেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। থাকবে আধুনিক প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্রপাতির দাবিও।