বিহার সিপিআই(এম-এল)-এর রাজ্য সম্পাদক কমরেড কুনাল ১৭ এপ্রিলের এক বিবৃতিতে বলেছেন, দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ, শ্রমিক এবং দুর্বল অংশের জনগণ পুলিশের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। দোকানদার, সাফাই কর্মী এবং অন্যান্য শ্রমজীবী জনগণও পুলিশি নিপীড়ন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এদের অপরাধ, লকডাউন চলার সময় তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সাধারণ মানুষের কাছে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য ও পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত ধিক্কারজনক বিষয়। প্রশাসন যেন মনে না করে যে লকডাউন হল নিপীড়ন চালানোর লাইসেন্স। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও ডিজিপিকে অবিলম্বে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে নিপীড়ন বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশকেও বুঝতে হবে যে, একেবারে জরুরি প্রয়োজনেই জনগণ বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন। কমরেড কুনাল পাটনা জেলার মাসৌরির দৃষ্টান্তের উল্লেখ করেন যেখানে সম্প্রতি ওষুধের দোকানের মালিকদের পাশবিকভাবে লাঠিচার্জ করা হয়।
আয়ারলার বিহার রাজ্য সম্পাদক গোপাল রবিদাস জানালেন পুলিশ কিভাবে ওষুধের দোকানদারদের মেরেছে। সরস্বতী ফার্মার মালিক রাহুল কুমার ১৪ এপ্রিল দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎই ডিএসপি নিজে তাকে মারতে শুরু করেন। এতে ওষুধের অন্যান্য দোকানদাররা রুষ্ট হয়ে ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশ এরপর প্রভীন ফার্মা নামক দোকানে গিয়ে দোকানের কর্মচারীদের মারতে শুরু করে এবং দোকানের মালিক প্রভীন কুমারকে গ্ৰেপ্তার করে। ওষুধের দোকানদাররা এরপর বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করে থানা ঘেরাও করে। পরে এসডিও-র হস্তক্ষেপেই কেবল পরিস্থিতি শান্ত হয়।
একইভাবে মাসাউরিতেও সাফাই কর্মীদের মারধর করা হলে ৬০-৭০ জন সাফাই কর্মী ধর্মঘট করেন। অন্য যাঁরা পুলিশের হাতে প্রহৃত হয়েছেন তাঁরা হলেন আকুপ্রেসার ডাক্তার পাপ্পু ঠাকুর, দরজি রহমত মিঁয়া, এবং সিগোডিতে সব্জি কিনতে যাওয়া এক ব্যক্তি।
আমবেদকর জয়ন্তি পালন করার পর সিপিআই(এম-এল) কর্মীরা ১০০০ জনকে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, লাঠিচার্জ করে, সমস্ত খাবার ফেলে দেয় এবং সবাইকে জেলে পোরার হুমকি দেয়। পুলিশ পিরহি দুলহিন বাজারে চিকিৎসা করাতে যাওয়া ৭০ বছর বয়স্ক রানাথ যাদবকেও মারধর করে।
যে সমস্ত পুলিশ কর্মী জনগণের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সিপিআই(এম-এল) জানিয়েছে। সিপিআই(এম-এল)-এর আরও দাবি, মাসাউরির ডিএসপি-কে অবিলম্বে বরখাস্ত করতে হবে এবং জনগণকে সন্ত্রস্ত করার কাণ্ডকারখানা বন্ধ করতে হবে।
গত ১৬ এপ্রিল কাজ থেকে পাটনায় ফেরার সময় যে সমস্ত শ্রমিক দুর্ঘটনায় পড়েছেন, সিপিআই(এম-এল) তাদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, করোনা সম্পর্কিত ত্রাণ বিলির জন্য গোলাঘরের কাছে সরকারের প্যাণ্ডেল তৈরির কাজ সেরে ফেরার সময় রামকৃষ্ণ বাইপাসের কাছে একটা ট্রাক শ্রমিকদের ধাক্কা মারে যাতে সঞ্জু দাস ঘটনাস্থলেই মারা যান, আর গুরুতর রূপে আহত হন ঊমেশ মোচি, ওম প্রকাশ পাশোয়ান, অরুণ দাস, শ্যাম দাস, রামসেবক দাস ও ছোটে দাস। এদের মধ্যে ওম প্রকাশ পাশোয়ান ও ঊমেশ কুমারের অবস্থা সঙ্কটজনক। সিপিআই(এম-এল) দাবি জানাচ্ছে, মৃতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, বিনমূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা ও ত্রাণ দিতে হবে। সিপিআই(এম-এল)-এর সম্পতচক ব্লকের সম্পাদক সত্যানন্দ কুমার আহতদের সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
(এমএল আপডেট থেকে গৃহীত রিপোর্ট)