পাটনা জেলার পালিগঞ্জের সিগোডি থানার নুরচকে সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলো দলিত ও মুসলিমদের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালায়। ভোজপুর জেলাতেও সামন্ততান্ত্রিক গুণ্ডারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে এবং অনেক গ্রাম থেকেই নিপীড়ন এবং আক্রমণের খবর এসে পৌঁছচ্ছে। অনেক স্থানেই আধিপত্যকারী অংশের এই সমস্ত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে এফ আই আর হলেও তাদের গ্ৰেপ্তার করা হচ্ছেনা।
সিপিআই(এম-এল)-এর দুই নেতা কুনাল ও অমর এক বিবৃতিতে করোনার নামে এই সমস্ত আক্রমণ ও ঘৃণা ছড়ানোর পিছনে বিজেপি-আরএসএস-এর সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকেই দায়ী করেছেন। অতিমারি করোনাকেও ওরা সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে কাজে লাগাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও মুখ বুজে থাকছেন এবং কিছুই করছেন না। আমাদের দাবি হল – আজকের এই সংকট কালেও যারা ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ওই নেতৃবৃন্দ জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছেন – তাঁরা যেন বিজেপি-আরএসএস-এর দ্বারা প্রতারিত না হন, সংখ্যালঘুদের অর্থনৈতিক-সামাজিক বয়কটের বিরোধিতা করে সেটাকে প্রতিহত করেন এবং একসাথে ও ঐক্যবদ্ধভাবে বর্তমান সংকটের মোকাবিলা করেন; একমাত্র এভাবেই আমরা করোনাকে পরাস্ত করতে পারব।
নুরচক গ্রাম হল পাটনা জেলার সিগোডি থানায়। গ্ৰামের জনসংখ্যার বিন্যাস এই রকম : ভাট ব্রাহ্মণ ১০০ ঘর; রবিদাস ৩০ ঘর; পাশোয়ান ১০ ঘর; আর মুসলিম ৩০ ঘর। এই গ্ৰামে দলিত ও মুসলিমরা দীর্ঘদিন ধরেই মিলেমিশে রয়েছেন এবং এখনও তাঁদের মধ্যে সম্প্রীতি অটুট রয়েছে। ভাট ব্রাহ্মণরা ২৮ ও ২৯ এপ্রিল দলিত-মুসলিম টোলার ওপর বারবারই আক্রমণ চালায় এবং অনেকেই আহত হয়েছেন বলে বলে খবর পাওয়া যায়। সিপিআই(এম-এল)-এর এক তথ্যানুসন্ধানী দল ওই ঘটনার তদন্তে যায়, দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন – কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোপাল রবিদাস, রাজ্য কমিটির সদস্য আনোয়ার হুসেন, সুধীর কুমার এবং স্থানীয় নেতা রাজেশ গুপ্তা। তাঁরা বলেছেন, গ্ৰামের আবহাওয়া এখনও উত্তেজনাপ্রবণ রয়েছে। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় যেকোনো দিনই এই উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে দাঙ্গা বাধিয়ে দিতে পারে।
গোলমালটা শুরু হয় ২৮ এপ্রিল যখন ভাট ব্রাহ্মণদের ৪-৫টা ছেলে ফেকু মিঁয়ার ছোট দোকানে হাজির হয়। ফেকু মিঁয়ার ছেলে পারভেজ আলম দলের সদস্যদের জানিয়েছেন, সেই সময় দোকানে বসেছিল তার বোন সোহরাত খাতুন। ছেলেগুলো দোকান থেকে চকোলেট নিয়ে খায় কিন্তু দাম দেয় না, যদিও সে সময় দোকানে তাদের অনেক বাকি ছিল। সোহরাত দাম চাইলে ওরা ওর সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেয়। কাছেপিঠেই থাকা ফেকু মিঁয়া ও তাঁর ছোট ছেলে তাবরেজ আলম দোকানে ছুটে আসে। ব্রাহ্মণ সন্তানরা এরপর বলতে থাকে যে, মুসলিমরা করোনা ছড়াচ্ছে এবং ওরা ফেকু মিঁয়াকে মারবে বলে হুমকিও দেয়। ফেকু মিঁয়ার স্ত্রী এর প্রতিবাদ করলে ছেলেগুলো তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে এবং মৌখিক বাদানুবাদ শুরু হয়। এরপর দলিত ও সংখ্যালঘুরা যৌথভাবে প্রতিবাদ করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোটা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় দলিত ও মুসলিমদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকেদের মারতে শুরু করে। ফেকু মিঁয়া আহত হন এবং ঘটনাটা থানায় জানানো হলে থানা কিছুই করে না।
জারখা পঞ্চায়েতের মুখিয়া উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করেন, এবং একটা সময়ে মনে হল যে শান্তি বুঝি বজায় থাকবে। কিন্তু কতৃত্বকারী শক্তিগুলো চাইছিল না যে শান্তি আসুক, এবং কিছু পরে রঞ্জিত পাশোয়ানকে এমন মারে যে ও পেটে গুরুতর আঘাত পায়।
কতৃত্বকারী শক্তিগুলো ২৯ এপ্রিল আবারও দলিত-মুসলিম টোলায় আক্রমণ চালায় এবং তাদের আক্রমণে কমকরে ছ-জন আহত হয়: ফেকু মিঁয়ার স্ত্রী নূর জাহান; ফেকু মিঁয়ার মেয়ে সোহরাত খাতুন; রমেশ পাশোয়ানের স্ত্রী প্রতিমা দেবী; যিতন পাশোয়ানের ছেলে রমেশ পাশোয়ান; কইস মিঁয়ার বাবা মুন্না মিঁয়া; এবং দেবী প্রসাদ পালোয়ানের স্ত্রী অনুপা দেবী।
সিপিআই(এম-এল) প্রশাসনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে যে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই কর্তব্যে অবহেলা করেছে। যদি ২৮ এপ্রিলই এফআইআর দায়ের হয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হত তবে ২৯ এপ্রিলের ঘটনাকে এড়ানো যেত। বারবার আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে দলিত-মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা একাধিকবার আবেদন জানালেও কোনো এফআইআর নেওয়া হয়নি। এর পরিবর্তে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সিপিআই(এম-এল) নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধেই এফআইআর করার হুমকি দিচ্ছেন।