আয়ারলার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি ১৮ মে রাজ্য জুড়ে বিডিও দপ্তরে গ্রামীণ মেহনতিদের নানান দাবিতে ডেপুটেশন কর্মসূচীর ডাক দিয়েছিল। এদিন ডেপুটেশনে গিয়ে জলপাইগুড়ি সদর বিডিও অফিস থেকে গ্রেফতার হলেন আয়ারলার জাতীয় কার্যকরী কমিটি সদস্য ও রাজ্য নেতা শ্যামল ভৌমিক এবং বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ গোস্বামী। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজে আক্রান্ত হলেন সিপিআই(এমএল) জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার সহ আয়ারলা নেতৃত্ব। কমরেড শ্যামল ভৌমিকদের বিকাল ৪টে পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত ছাড়তে বাধ্য হয় জলপাইগুড়ি পুলিশ। বজবজে প্রথমে পুলিশের বাধা, পরে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হামলার মুখেও ডেপুটেশন কর্মসূচী সফল ভাবে সংগঠিত করেন আয়ারলার রাজ্য নেত্রী দেবযানী গোস্বামী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এই লকডাউন পর্যায়ে গ্রামে-গ্রামে যে ধর্ণা কর্মসূচী গ্রামাঞ্চলে আমরা শুরু থেকেই সংঘটিত করে চলেছি, সেই ধারাবাহিকতায় গ্রাম থেকে উঠে ব্লক স্তরে বিডিও-র কাছে গ্রামীণ মেহনতিদের এই কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল। একই সাথে চলছিল মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা গ্রামীণ মেহনতিদের এক দাবি সনদে স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ।
দাবি ছিল – (১) মেহনতিদের হাতে নগদের যোগান, ১০ হাজার টাকার লকডাউন ভাতা; (২) ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পে কৃষি ও গ্রামীণ শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তি; (৩) কমপক্ষে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল মকুব; (৪) বন্ধন সহ সব মাইক্রোফিনান্স, মহাজনী ও অন্যান্য ঋণ মকুব, (৫) সকলের জন্য রেশন ও ১০০ দিনের কাজ, জবকার্ড; (৬) পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা; (৭) প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের সরকারী সহায়তা; (৮) সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতাদের শাস্তিপ্রদান; (৯) কৃষিক্ষেত্রের বেসরকারীকরণে মোদী সরকারের সাম্প্রতিক বিপদজ্জনক সিদ্ধান্তগুলির বিরোধিতা করা।
মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর, বহরমপুর, জলঙ্গী, রাণীনগর-১, রাণীনগর-২, বেলডাঙ্গা-২, বেলডাঙ্গা-১; পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী-২, কাটোয়া-২, মন্তেশ্বর, রায়না, মেমারী-১ ও কালনা-২ নম্বর ব্লক, বীরভূমের নানুর ব্লক, বাঁকুড়ার সদর, উত্তর ২৪ পরগণার গাইঘাটা, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজ এবং হুগলির ধনেখালি, পোলবা-দাদপুর, বলাগড় ও পান্ডুয়া ব্লক দপ্তরে আয়ারলা নেতৃত্ব ডেপুটেশন কর্মসূচী সফল করেন। এছাড়াও মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম ও জিয়াগঞ্জ ব্লকের আধিকারিকরা কোভিড-১৯-এর কারণ দেখিয়ে ডেপুটেশন জমা নেন হোয়াটসঅ্যাপ-এর মাধ্যমে।
ধুবুলিয়া ব্লকে ডেপুটেশন কর্মসূচী সংগঠিত হয়। নপাড়া ২ নং অঞ্চলে ১০০ দিনের কাজে তৃণমূলের দুর্নীতির একটি অভিযোগ সম্পর্কে বিক্ষোভ জানানো হয়। বিডিও-র কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।
নাকাশীপাড়া ব্লক কর্মসূচীতে গরিব মানুষদের রেশন না পাওয়ার বিষয়টি জোড়ালো হয়ে ওঠে। আবেদন করেও যারা কার্ড পায়নি এমন ব্যাপক সংখ্যক মানুষেরা খাদ্য সরবরাহের দাবীতে তীব্র বিক্ষোভ দেখায়। বিডিও-কে ডেপুটেশন দেওয়ার পর তিনি জানান সামনের মাস থেকে রেশন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। সমবেত মানুষদের সামনে বক্তব্য রাখেন আয়ারলার রাজ্য নেতা কাজল দত্তগুপ্ত, এআইকেএম নেতা জয়তু দেশমুখ।
কালীগঞ্জে বিডিও দপ্তরে অনুরূপ কর্মসূচী সংগঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন আলতাফ হোসেন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ৭০০ গণস্বাক্ষর সহ দাবিপত্র জমা দেওয়া হয়।
চাপড়া ব্লকে বিডিও গেটে তালা লাগিয়ে গোটা বিডিও অফিস চত্তর বন্ধ করে দেওয়ায় ধনঞ্জয় গাঙ্গুলী, ইনসান সেখ সহ অন্যান্যরা ডেপুটেশন জমা দিতে পারেনি। করোনার যুক্তি দেখিয়ে ডেপুটেশন নিতে অস্বীকার করেন নদীয়ার চাপড়া ব্লক আধিকারিক! তবে দাবিগুলি ব্লক অফিসের সামনে তুলে ধরে প্রচার করা হয়।
দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের রাংগাপানি বাজারে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়। পরে ফাঁসিদেওয়া বিডিও-কে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। বিক্ষোভ প্রদর্শনে বক্তব্য রাখেন শরৎ সিংহ ও দীপক ঘোষ।
গণস্বাক্ষর সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ও সদর ব্লক, হুগলির পোলবা-দাদপুর, ধনেখালি, বলাগড়, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজ, বর্ধমানের পূর্বস্থলী-১, নদীয়ার কালীগঞ্জ ব্লকের নেতৃত্ব।
বিগত ১৩ মে গ্রামে গ্রামে ধর্ণার ডাক দেওয়া হয়েছিল, সেদিনের কর্মসূচীও অত্যন্ত উৎসাহের সাথে সংগঠিত হয় হাওড়ার বাগনানে, বজবজের গ্রামাঞ্চলে, বর্ধমান জেলার একাংশ, হুগলির গ্রামে-গ্রামে।
লকডাউন পরিস্থিতি দেশের গ্রামীণ মেহনতিদের জীবনে এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করছে। এই অবস্থায় মেহনতিদের জীবন-যন্ত্রণার পাশে থেকে কাজ, খাদ্য, মেহনতি জীবনের নিরাপত্তা, মর্যাদা সহ জীবন সংগ্রামে আয়ারলা অগ্রণী ভূমিকা পালনে দায়বদ্ধ। এই কারণেই লকডাউনের বাধানিষেধের মাঝেও কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির সংগঠকরা আজ প্রতিদিনই প্রতিবাদের সামনের সারিতে; বিপন্ন জনতার সাথে কখনো ত্রাণকার্যে কখনো প্রতিবাদ-প্রতিরোধে।
এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে।