খবরা-খবর
লকডাউনে চাষির বিপুল ক্ষতি গ্রামীণ মজুর অনাহারে - ২৭ এপ্রিল দাবি দিবসে বিক্ষোভে ফেটে পড়লো গ্রামবাংলার গরিব মানুষ
27ap

 

মূল্যবৃদ্ধির এই বাজারে সব্জির দাম ৩ টাকা বা ৪ টাকা কেজি-ভাবা যায়? লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ১২-১৫ দিন ধরে গ্রাম বাংলার চাষিরা ফসলের এই নগন্য দাম পেয়েছে! শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই বাস্তব! বাঁকুড়ার ওন্দা কিংবা হুগলীর সিঙ্গুর, বর্ধমানের কালনা পূর্বস্থলী থেকে শুরু করে ২৪ পরগণার ভাঙড় - গ্রামের মাঠে মাঠে কৃষকের রক্ত ঘামে উৎপাদিত ফসল – পটল, উচ্ছে বেগুন, কুমড়ো হেলায় পড়ে আছে। গ্রাম বাংলার সর্বত্রই ছিলো এমন ছবি ! চাষিরা নিরুপায় হয়ে নামমাত্র দামে, বিপূল লোকসানে আনাজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে তো হাটের রাস্তায় টমেটো, বেগুন ফেলে তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছে কৃষকরা। লকডাউন শুরু হওয়ার পর সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ভাবে বিকল্প ব্যবস্থা না করে গ্রামীণ হাট ও কৃষি পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে চাষির সর্বনাশ! অথচ শহর গঞ্জে সেই ফসল বিক্রি হয়েছে ৪-৫ গুন বেশি দামে! এখন এই চাষিদের ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ কে দেবে? তাই আজ দাবি উঠেছে সরকারকে কৃষকদের একর পিছু ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। লাভজনক দামে সরকারী উদ্যোগে গ্রামস্তর থেকে সমস্ত ফসল কিনতে হবে।

kal

 

লকডাউনে কাজ হারিয়ে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া গ্রামীণ পরিযায়ী শ্রমজীবীরা অনেকেই এ সময়কালে ঘরে ফিরে এসেছে। শহর থেকে গ্রাম এই উল্টোযাত্রা – যা সবে মাত্র শুরু হয়েছে আগামীদিনে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এর ফলে গ্রামীণ মজুররা এখন সংখ্যায় বাড়ছে। কিন্তু রেশনের যৎসামান্য খাদ্যদ্রব্য –দৈনিক ১৬৬ গ্রাম চাল বা গম/আটা ছাড়া সরকার তাঁদের আর কিছুই দিলো না। কোনো রোজগার নেই, তারা খাবে কী? স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১০০ দিনের কাজ চালু হবে এই ঘোষণা সরকার করেছে এপ্রিলের ১০ তারিখ। কিন্তু দুই সপ্তাহ হয়ে গেলো “কাজের দেখা নাই”। লকডাউনের এই আকালে অনাহার অর্ধাহারে থাকা সমগ্র গ্রামীণ মজুররা তাই দাবি তুলেছে ২০০ দিনের কাজ দাও, ৫০০ টাকা মজুরি দাও। কাজ না হওয়ার ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রতিটি জবকার্ড এ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা দাও।

rilif

 

অধিকার বুঝে নেওয়া এই সমস্ত দাবিগুলিতে লকডাউনের এক মাস কেটে যাওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল দেশব্যাপী সংগঠিত হলো প্রতিবাদ দিবস। সারা ভারত কিষাণ মহাসভা ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির আহ্বানে যেন উঠে গেলো “আন্দোলনের লকডাউন”। প্রতিবাদী বিক্ষোভে সমবেত মেহনতি মানুষের শরীরী ভাষায় ফুটে উঠলো সংকটগ্রস্ত লক্ষ কোটি মানুষের মধ্যেকার জমে থাকা পুঞ্জিভূত ক্ষোভ – কাজ দাও, খাদ্য দাও, ক্ষতিপূরণ দাও। কারন লকডাউনে সবচেয়ে বেশী মূল্য দিতে হয়েছে তাঁদেরই! এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছিলো সিপিআই(এমএল) ও মনরেগা সংগ্রাম সমিতি। আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ প্রধানত হুগলী জেলায় ছিলো একেবারে সামনের সারিতে। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী

man

 

রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামীণ জেলাগুলির প্রায় ৬৫-৭০ টি গ্রামে কয়েকশত গরিব মানুষ এই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছেন। লকডাউনের পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ গ্রামে-পাড়ায়-গঞ্জে-হাটে-বাজারে শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে, সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাঁরা নিজেদের বাঁচার দাবিগুলিকে তুলে ধরেছেন। সকলের মুখে ছিলো মাস্ক বা মুখোষ-না থাকলে গামছায় বা শাড়ির আঁচলে নাক মুখ ঢেকে- ঝুড়ি কোদাল নিয়ে, কোথাও বা কাস্তে হাতে তারা তুলে ধরলেন নিজেদের জীবনযন্ত্রণার কথা। কারও দয়া দাক্ষিন্য নয়, তারা সোচ্চার হয়ে উঠলেন নিজেদের অধিকারের দাবিতে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রতারণা ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে। বহু জায়গায় শাসক তৃণমূলের চোখরাঙ্গানি, কোথাও বা পুলিশের চক্রান্ত উপেক্ষা করে সংগ্রামী চেতনায় উদ্দীপ্ত ছিলো বঞ্চিত মানুষের এই প্রতিবাদী কর্মসূচী। বঞ্চনার তালিকা ক্রমশই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। যে ক্ষুদ্র কৃষক, ভাগ-চুক্তি চাষিরা ফসলের লাভজনক দাম পায়নি, যে গ্রামীণ মজুর- আদিবাসী-সংখ্যালঘু মানুষেরা রেশন কার্ড থেকে বঞ্চিত – ফলে বরাদ্দ সামান্য চাল গমটুকুও তাদের জোটেনি, দুর্নীতির কারনে বহু গরিব মানুষ প্রাপ্য মালপত্র পায়নি। যে চা বাগিচা শ্রমিকরা পায়নি ন্যায্য মজুরি, যে মহিলা বিড়ি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মজুরিহীন দিন কাটিয়েছে তারা সকলেই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছেন। বারংবার ব্লক দপ্তরে অবস্থান করে, একরোখা লড়াই চালিয়ে যে সমস্ত গ্রামীণ আদিবাসী গরিব মানুষেরা ত্রাণ সাহায্য আদায় করেছেন তারাও ছিলেন প্রতিবাদের সামনের সারিতে। যে দৃঢ়চেতা মায়েরা দুরদেশে কাজ করতে যাওয়া সন্তানদের ফেরত আনার দাবিতে অনশন বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তারাও সমাবেশিত হয়েছিলেন নিজ গ্রামের প্রাঙ্গনে – লাল পতাকা হাতে। করোনাকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃণা প্রচার চলছে। গ্রামে গ্রামে উভয় সম্প্রদায়ের এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদী কর্মসূচী তুলে ধরেছে কৃষকের শ্রেণী ঐক্যের বার্তা।

hd

 

বিক্ষোভ থেকে দাবি উঠলো পরিযায়ীদের ঘরে ফেরাও তাঁদের খাদ্য দাও, নগদ অর্থ দাও। এক মাস হয়ে গেলো কেন্দ্রীয় প্রতিশ্রুতি – পিএম যোজনায় কৃষকদের আর্থিক সাহায্য কেন আজও কাগজে কলমে রয়ে গেলো? ফসল কেনার সরকারী উদ্যোগ নেই, উল্টে কেন্দ্রীয় সরকার সারের উপর ভর্তুকি কমিয়ে চাষের খরচ বাড়িয়ে দিলো কেন? অথচ কর্পোরেটদের বিগত পাঁচ বছরে অনাদায়ী ঋণ মুকুব করা হলো ৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা! রাজ্য সরকার মেলা খেলায় কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে অথচ কৃষকদের বিদ্যুতের মাশুল কমাচ্ছে না কেন? কেন ডিজেলে সরকারী কর কমিয়ে চাষিদের ভর্তুকি দিয়ে তা সরবরাহ করা হবে না? সার বীজ কম দামে দেওয়া হবে না? কেন ফড়ে দালাল মহাজনেরা চাষির থেকে কম দরে ধান কিনে সেই ধান সরকারের ঘরে বিক্রি করে মুনাফা করে নিচ্ছে?

nad

 

এখন সামনেই গ্রামে গ্রামে বোরো ধান কাটার সময়। কৃষক ও মজুর উভয়ের স্বার্থে ১০০ দিনের কাজকে কৃষিকাজের সাথে যুক্ত করার দাবি বামপন্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে তুলে আসছে। এই বিষয়টা সম্প্রতি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরলেন এবং কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে নিজের দায় সারলেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তার কোনো সরকারী নির্দেশ আজও হলো না। গ্রামাঞ্চলে কৃষি পরিকাঠামো নির্মাণে, জলসম্পদ সৃষ্টি করতে কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প কার্যকরী ভুমিকা নিতে পারে। কিন্তু কেন্দ্র মনরেগা খাতে বাজেটে বরাদ্দ অর্থের পরিমান ১০০০ কোটি টাকা কমিয়ে দিয়েছে। ১০০ দিনের প্রকল্পে সারা দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ ৬১ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে দেশের ৫০ জন শিল্পপতির অনাদায়ী ব্যাংক ঋণ মুকুবের পরিমান ৬৫ হাজার কোটি টাকা! গরিব মানুষের প্রতি কেন্দ্রের মনোভাব এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি রাজ্য সরকার ১০০ দিনের কাজে ব্যপক দুর্নীতি করে গ্রামীণ মজুরদের লাগাতার বঞ্চিত করে চলেছে। দেখা যাচ্ছে ১০০ দিনের কাজ চালু করার জন্য পঞ্চায়েতের কোনো জরুরি নির্দেশ আজও জারি করা হলো না।

balka

 

আজ লকডাউনের ফলশ্রুতিতে পরিযায়ীদের সংকট বা শিল্প-ব্যবসা ক্ষেত্রে যে সংকট দেখা দিয়েছে তার ফলে গ্রামাঞ্চলে যে বর্ধিত শ্রমশক্তি তারা তো আমাদের দেশেরই সম্পদ। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ সময়কালে শ্রম নিবিড় যে ক্ষেত্রগুলি গ্রামে প্রভূত সম্পদ সৃস্টি করতে পারে যেমন – বৈজ্ঞানিক পশুপালন, মৎসচাষ,খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ-যে গুলিকে বছরের পর বছর অবহেলিত করে রাখা হয়েছে, সেই ক্ষেত্রগুলিকে এখন নতুন করে ব্যবহার করা যেতে পারে। মনরেগার বিরাট গুরুত্ব এক্ষেত্রে রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনাই নেই। বিক্ষোভ কর্মসূচী থেকে এ প্রশ্ন উঠে আসে। এছাড়া আজ খাদ্য নিরাপত্তাও একটা কঠিন সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। এসময় রেশন ব্যাবস্থাকে ঢেলে সাজানো – প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৫০ কেজি খাদ্যদ্রব্য এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে রেশনে ডাল, ভোজ্য তেল সরবরাহের দাবিটাও গুরুত্বের সাথে উঠে আসে। ফসলের সরকারী ক্রয় ও গণবণ্টন এই দুটি প্রশ্ন অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। তাই কৃষক ও কৃষিশ্রমিকের যুক্ত লড়াই আগামীদিনে শক্তিশালী করে তোলার অঙ্গীকার প্রতিবাদী কর্মসূচী থেকে তুলে ধরা হয়।

kalna

 

কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয় যেখানে – পুর্ব বর্ধমান জেলার ব্লক ভিত্তিক গ্রামের নাম – কালনা ২নং ব্লক – আগ্রাদহ, ঝিকড়া ও বাজিতপুর। পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের – সিমলা, চণ্ডীপুর। কালনা ১নং ব্লকের – একচাকা।

রায়না ব্লকের – শ্যামসুন্দর। সদর ১নং ব্লকের – ভণ্ডুল। সদর ২নং ব্লক – শক্তিগড়। মেমারী ২নং ব্লক – রানীহাটি ও খালডাঙ্গা। মন্তেশ্বর ব্লকের – কুলুট। কাটোয়া থানার – সাহাপুর। মেমারী ১নং ব্লকের – কাকডাঙ্গা। জামালপুর ব্লকের – আজাপুর।

bir

 

বীরভূমের – নানুর থানার - কালিকাপুর। লাভপুরের - বগদোড়।

মালদহের – কালিয়াচক ব্লকের - মডেল গ্রাম। মুর্শিদাবাদের – নতুনগ্রাম পঞ্চায়েত-এর পাঠানপাড়া ও খড়গ্রাম ব্লকের - কেলাই গ্রাম।

হুগলী জেলার ধনেখালির বোসো,বেলমুড়ি, কনুইবাঁকা, জয়হরিপুর; দাদপুরের শ্রীরামপুর; পোলবার বালিটানা, যাঁতা, পাউনান -১, পাউনান-২, সারাংপুর, দাঁতরা। পান্ডুয়ার সাঁচিতারা, আলিপুর। বলাগড়ের গুপ্তিপাড়া, বাকসাগড়, বড়াল, বাতনা,বেলেডাঙ্গা, ইটাগড় মোড়, সায়রা, করিন্যা

দক্ষিণ ২৪পরগনা- নিশ্চিন্তপুর, জামালপুর, উস্থি, বাখরাহাট ।

how

 

হাওড়া- বাগনান ।

দার্জিলিং - ফাঁসিদেওয়া - ছোট পথুজোত, খড়িবাড়ী - বিত্তানজোত, কদুভিটা।

উত্তর ২৪পরগনা – গাইঘাটার - ঢাকুরিয়া, নৈহাটি - শিবদাসপুর, হাবড়া-২ – চন্ডীগাছা, শ্রীকৃষ্ণ পুর, বসিরহাট - মাটানিয়া ।

জলপাইগুড়ি - উত্তর পুটিমারী, দক্ষিণ পুটিমারী, মল্লিকঘাট ।

bank

 

বাঁকুড়া – নিকুঞ্জপুর, মালিয়ান, ঝাঁটিপাহাড়ী।

নদীয়া – ধুবুলিয়া, সোনাতলা, গাছাবাজার, বসতপুর, কালিনগর।

জয়তু দেশমুখ,রাজ্য সম্পাদক, এআইকেএম
সজল পাল, রাজ্য সভাপতি, আয়ারলা

hg

হুগলি জেলার রিপোর্ট

মাঠের ফসল বৃষ্টিতে ভিজছে, গুদামের শস্য তালা বন্ধ পচছে! মানুষের অন্ন নেই, অন্নদাতাদের অর্থ নেই! হাটবাজার, গাড়িঘোড়া, কারখানা গেটে কুলুপ মারা যায় কিন্তু পেটে? খিদের বিরতি হয়? 'মানুষের সৎভাই চায় শুধু ফ্যান!' শূন্য থালা, ফাঁকা ঝুড়ি, শুকনো মাটির দাগ লেগে থাকা কোদাল, কাস্তে নিয়ে আলপথে, বেড়ে, ডোবার ধারে, মড়াইয়ের পাশ থেকে একে একে একে.... কিছু শীর্ণ শরীর, জীর্ণ কাপড়, ২৭ এপ্রিল দেখেছে গ্রাম বাংলা। সারা ভারত কিষাণ মহাসভা (AIKM) এবং সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি (AIARLA)-র ডাকে আজ জেলায় জেলায় লোক ডাউন হয়েছে! মেটে পথে নেমেছেন গরিব চাষি, ক্ষেতমজুর, ১০০ দিনের কাজের মজুর, আদিবাসী, দলিত, সংখ্যালঘু গ্রামবাসীরা। ওঁরা সমবায় জীবনে পরস্পর বেঁধে বেঁধে থাকতেই অভ্যস্ত, স্বভাবপ্রকৃতিতেও মুখোশ পরার প্রচলন নেই; তবে কিনা মহামারী চলছে তায় আবার N95 তো মুড়ি মুড়কির মতো মেলে না অগত্যা পড়শিদের থেকে কয়েক হাত করে শরীরের দূরত্ব রেখেই কারোর মুখে গামছা, কারো মুখে শাড়ির আঁচল কিম্বা গঞ্জের দোকানে পাওয়া কাপড়খণ্ড, যারে বাবুরা বলে মাস্ক! ভাঙাচোরা গলাতেই স্লোগান উঠেছে --

রেশন চাই সবার, পরিবার পিছু ৫০ কেজি খাদ্যশস্য চাই, পর্যাপ্ত ত্রাণ চাই, ১০০ দিনের কাজ চাই, সেটা বাড়িয়ে ২০০ দিন আর মিনিমাম ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি চাই, লকডাউনে গ্রামীণ মজুরদের সংসার চালাতে এককালীন ১০০০০ টাকা ভাতা চাই, সব পরিযায়ী শ্রমিককে নিরাপদে ঘরে ফেরানো চাই! ... আরো নানারকম দাবি

hgg

 

হুগলী জেলার ধনেখালি ব্লকের বোসো চারাবাগানে পথে নামা মানুষদের উপর সকালেই নেমে এল তৃণমূলী হম্বিতম্বি! সেসব ঢাকা পড়ে গেল আদিবাসীদের স্লোগানে!! আওয়াজ ছড়ালো আরো এলাকায় – জয়হরিপুর, কনুইবাঁকা, বেলমুড়ির পথে আরো কিছু মানুষ ... ওদিকে পাণ্ডুয়া ব্লকের সাঁচিতাড়া গ্রামেও তখন ক্ষেতমজুরদের কোলাহল, পেটের জ্বালা একই তাই চাহিদাও এক, গলায় ঝোলানো প্ল্যাকার্ডে লেখা। বৈঁচির আলিপুরে আবার বিকালের দিকে মাঠে নামলেন আদিবাসী, সংখ্যালঘু জনতা। ওদিকে নেত্রী সরস্বতী বেসরার নেতৃত্বে পাণ্ডুয়া বিডিও অফিস থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করতেও পেরেছে পাঁচটি পরিবার, কয়েকদিন ধরেই এমন দরিদ্র ও রেশন কার্ড না থাকা পরিবারগুলির জন্য চলছে তৎপরতা। মুখর বলাগড় ব্লকটাও সারাদিন – গুপ্তিপাড়া ২নং অঞ্চল, জিরাটের বাকসাগড় (খোদ তৃণমূল বিধায়কের গ্রাম), খামারগাছি অঞ্চলের বরাল, বাতনা একতারপুর, সায়রা বাকুলিয়া, মহিপালপুর অঞ্চলের ইটাগড়, কুলগাছি, ইছাপুর-বেলেডাঙ্গা ... বেলা বাড়তে বাড়তে সন্ধ্যার মুখে বাকুলিয়া-ধোবাপাড়ার সাঁওতাল গ্রাম করিন্যায় বদ্রীনাথ হেমব্রমের নেতৃত্বে লাল পতাকা, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের ব্যানার হাতে শিরা টানটান আওয়াজ! বাকসাগড়ে প্রতিবাদের মেজাজ দেখে ১৮টি আদিবাসী পরিবারকে মাথাপিছু ৩ কেজি করে চাল দিতে হয়েছে প্রশাসনকে। সংগঠনের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই খাদ্য পেয়েছে আরো কিছু পরিবার। অন্যান্য ব্লক যখন এভাবে সক্রিয় থেকেছে তখন দীর্ঘ লড়াইয়ের এলাকা পোলবা-দাদপুর যে প্রতিবাদের মালা গাঁথবে তা বলাই বাহুল্য ... বালিটানা, জাঁতা, সারাংপুরে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সোচ্চার কণ্ঠের পারদ চড়েছে; পাউনানের অলিগলিতে এভাবে স্বতস্ফূর্ত লাল পলাশের ছড়াছড়ি বেশ কিছু বছর পর অনভ্যস্ত চোখে দেখলো গেরুয়া, সবুজ মাতব্বরেরা! চমকে দিয়ে আবার অনেকদিন পরে নকশালদের ডাকে কলরব করলেন গোস্বামী-মালিপাড়ার দাঁতরার গ্রামবাসীরা! দাদপুরের শ্রীরামপুরে পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টায় ছিলো দুপুরের দিকে, কিন্তু ভুখমারি আর মহামারির ষাঁড়াশি আক্রমণের সাথে যুঝতে থাকা সিদহো-কানহু-বিরশা-তিলকা মাঝির সন্তানদের ভয় দেখিয়ে রুখবে এমন কোনো ধাতুর ব্যারিকেড আছে? ইস্পাতের থেকেও কঠিন ব্যারিকেডটা কমরেডদের কাঁধে কাঁধেই খাড়া হয়

রিপোর্ট - সৌরভ

jal

 

সারা ভারত কৃষাণ মহাসভা (এআইকেএম) এবং আয়ারলার পক্ষ থেকে ১০০ দিনের কাজের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০০ দিন করা, এনারজিএ প্রকল্প চালু করা,  ৫০০  টাকা দৈনিক মজুরি ৫০ কেজি খাদ্যশস্য,  জবকার্ড থাকা প্রত্যেক গ্রামীণ মজুরকে দশহাজার টাকা  লকডাউন ভাতা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি সহ বিভিন্ন দাবিতে দেশের অন্যান্য জায়গার সাথে দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়ার ছোটপথুতে এবংখড়িবাড়ি ব্লকের বিত্তানজোতে ও কদুভিটা এবং জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির বার্নিশ, উত্তর পুঁটিমারি - দক্ষিণ পুঁটিমারি - চাঁদের বাড়ি বেরুবাড়ি  গ্রামে বিক্ষোভ দেখান এআইকেএম এবং আয়ারলার জেলা নেতৃত্ব ও কর্মীরা।

dar

 

দার্জিলিং জেলা:  ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ছোটপথুতে এআইকেএম এবং আয়ারলা  স্বাস্থ্য বিধি মেনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দাবি সম্মিলত প্ল্যাকার্ড নিয়ে  আইকেএম-এর জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ ও আয়ারলার জেলা সম্পাদক শরত সিংহের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সামিল হন নেমু সিংহ, পৈষানজু সিংহ, পঞ্চা বর্মণ প্রমুখ। বিক্ষোভ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন এলাকার কিছু পার্টি দরদী কৃষি মজুর ও শ্রমজীবী মানুষ। কর্মসূচী শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন পবিত্র সিংহ।

dar

 

খড়িবাড়ি বিত্তান জোত : খড়িবাড়ি ব্লকের বিত্তান জোতে কমরেড কান্দরা মুর্মু, রমু সিং, দেওয়ান মার্ডির নেতৃত্বে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে বিক্ষোভ অবস্থান। দাবি সম্মিলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কমরেডদের সোচ্চার শ্লোগানে মুখরিত আজকের কর্মসূচীকে সংহতি জানিয়ে চা শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষ্যণীয়। কদুভিটা : খড়িবাড়ি কদুভিটাতে বর্ষীয়ান নেতৃত্ব সিরিল এক্কার নেতৃত্বে চলে বিক্ষোভ অবস্থান।

জলপাইগুড়ি ময়নাগুড়ি বার্নিশ :  বার্নিশ অঞ্চলের উত্তর পুঁটিমারিতে উমেশ রায়ের নেতৃত্বে এআইকেএম এবং আয়ারলার স্হানীয় নেতৃত্ব এবং কর্মীরা উৎসাহের সঙ্গে বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। বেশ কিছু সময় ধরে চলে বিক্ষোভ ধর্না। যা এলাকার মানুষের নজর কারে।

দক্ষিণ পুঁটিমারি : কমরেড বৈশাখি, হরিনাথ এবং ব্রাঞ্চ সম্পাদক জিন্নাতুল ইসলামের নেতৃত্বে এআইকেএম  এবং আয়ারলার কর্মীরা বিক্ষোভে সামিল হন।

চাঁদের বাড়ি : ভাস্কর দত্ত, মুকুল চক্রবর্তীর নেতৃত্বে  কর্মীরা চাঁদেরবাড়ি গ্রামে বিক্ষোভে সামিল হন।

মূলত গ্রামীণ এলাকায় সংঘটিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে কমরেডদের সোচ্চার অংশগ্রহণ লকডাউন চলাকালীন গ্রামীন সংকট বিশেষত কৃষক ও কৃষিমজুরদের সংকটের ছবিকেই স্পষ্ট করে দেয়।

রিপোর্ট - শাশ্বতী

s24

দঃ ২৪ পরগণা জেলার রিপোর্ট -

ফসলের দেড়গুণ দাম, মনরেগায় সমস্ত গ্রামীণ মজুরদের ২০০ দিনের কাজ ও দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি, করোনার সময় সমস্ত কৃষককে ১০০০০ টাকা ভাতা সহ বিভিন্ন দাবিতে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কিষাণ মহাসভা ও সারাভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির ডাকে সারা ভারতে যে বিক্ষোভ কর্মসূচী চলছে তার অঙ্গ হিসাবে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাখরাহাটে সংগঠনের অবস্থান হয়। উপস্থিত ছিলেন সারাভারত কিষাণ মহাসভার রাজ্য সম্পাদক জয়তু দেশমুখ, দঃ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক কমরেড দিলীপ পাল। দঃ ২৪ পরগণার বজবজের জামালপুর, নিশ্চিন্তপুর অঞ্চলে কর্মসূচী হয়। নিশ্চিন্তপুর অঞ্চলে গ্রামীণ শ্রমিকদের কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেন সারাভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির জাতীয় কাউন্সিলের সদস্যা কমরেড দেবযানী গোস্বামী। জামালপুর অঞ্চলে নেতৃত্ব দেন কমরেড শ্যামসুন্দর গোস্বামী। দঃ ২৪ পরগণার উস্থিতে বিক্ষোভ কর্মসূচী হয়।নেতৃত্ব দেন সারাভারত কিষাণ মহাসভার জেলা নেতা কমরেড জগদীশ মন্ডল। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা কমিটির সদস্য কমরেড জয়দেব নস্কর।

রিপোর্ট - শুভদীপ পাল

sib

উত্তর ২৪ পরগণা জেলার রিপোর্ট -

১) নৈহাটির শিবদাসপুর এআইএআরএলএ তরফ থেকে তাড়িখানা মোড়ে পালন করা হয় ।

২) আজ সারা গ্রামীণ ভারতের সাথে সাথে বসিরহাটের মাটনিয়াতে খাদ্য-কাজ-মজুরি-ফসলের ন্যায্য দাম-পরিযায়ী শ্রমিকদের সরকারের দায়িত্বে ঘরে ফেরানো-মনরেগায় অর্থাৎ ১০০ দিনের কাজে যুক্ত সহ সমস্ত গ্রামীণ শ্রমিকেদের অবিলম্বে ১০ হাজার টাকা ভাতার দাবি সহ একাধিক দাবিতে সারা ভারত কৃষাণ মহাসভা ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির দাবি দিবস-এর প্রোগ্রাম করা হয়।

৩) হালিসহর সাংস্কৃতিক সংস্থা আজ ২৭ এপ্রিল তারিখে, সোমবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে আরো একবার আটত্রিশ জন দুস্থ অসংগঠিত নির্মাণ ও অন্যান্য অসহায় সাধারণ মানুষকে ৩ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু, ৫০০ গ্রাম পেয়াজ, ৩০০ গ্রাম মুসুর ডাল, ৩০০ গ্রাম সোয়াবিন, ২০০ গ্রাম সরষের তেল, একটা সাবান ও একটি মাস্ক ত্রাণ উপলক্ষে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিলি বন্টন করা হয়। এই কর্মসূচিতে নারায়ণ রায় (খোকা), বিশ্বজিত পান (বাপি), স্বাগতা মল্লিক, জিতেন্দ্র পান (ডিস্ক), আকাশ চট্টোপাধ্যায় (পাপাই), অতনু মজুমদার (বুলু), সাগর কুমার চ্যাটার্জি, রবি সেন ও সুবিকাশ মিস্ত্রি উপস্থিত ছিলেন । বেলা ঠিক ১১টায় পৃথিবীতে যে সমস্ত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, চিকিত্সা ও সেবার কারণে যারা করোনা রোগীদের সাথে সরাসরি যুক্ত, অন্যান্য জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে শহীদ হয়েছেন, বিশেষ করে এ রাজ্যের ডাক্তার বিপ্লব দাশগুপ্তর শহীদ হওয়ার কারণে দু মিনিট তাঁদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে নীরবতা পালন করা হয় এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। দুঃস্থ মানুষকে পরবর্তীতে ধারাবাহিক ভাবে ত্রাণ দেওয়া হবে – এই প্রতিশ্রুতিতে সকলেই অঙ্গীকারবদ্ধ হই। আমাদের এই ত্রাণ কর্মসূচীতে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে, তাদের প্রত্যেককে হার্দিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। আমাদের সহযোগী সংগঠন হালিসহর বিজ্ঞান পরিষদ ও মুক্তমনা সৈকত অসংখ্য মাস্ক নিয়ে এসে দুঃস্থদের মধ্যে বণ্টন করে। তাদেরকে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই ।

রিপোর্ট - অজয় বসাক

খণ্ড-27