মুখ পুড়েছে মমতা সরকারের
edi

মোদী সরকার কোবিড সংকটময় অবস্থায় লক ডাউন কায়েমের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সবদিক থেকেই রাষ্ট্রীয় প্রতারণা ও নিষ্ঠুরতায় দেশকে চূড়ান্ত দূর্দশাগ্রস্ত করে তোলার পথে নিয়ে চলেছে। একমাত্র বিজেপি-আরএসএস এবং রাজ্যে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তাদের পরিচালিত সরকার ও তাদের ঘনিষ্ঠ মতাবলম্বী, অনুগ্রহনির্ভর, আজ্ঞাবহ রাজনৈতিক সহযোগী শক্তিগুলো ছাড়া আর সমস্ত বিরোধী শক্তিসমূহ মোদী সরকারের ক্ষমাহীন চরম অমানবিক আচরণের বিরোধিতায় মুখর।

তবে অন্যান্য কিছু দল পরিচালিত রাজ্য সরকারের আচরণেও এমন কিছু প্রকাশ ঘটে চলেছে যা যথাযথ সমালোচনা ও বিরোধিতার দাবি রাখে। এপ্রসঙ্গে বাংলার তৃণমূল সরকারও অভিযুক্ত। তাই মোদীর তুলোধোনায় বর্শামুখ রেখেও রাজ্যের মমতা সরকার ও শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধেও যেমন প্রয়োজন তেমনি মুক্তকন্ঠে সোচ্চার থাকতে হবে। তবে কোনভাবেই ‘মোদী-দিদি এক হ্যায়’ ধরনের অযৌক্তিক হাস্যকর ‘হল্লাবোল’কে প্রশ্রয় দেওয়া চলে না।

করোনা পরিস্থিতিতে মমতা সরকার নিজেই নিজের মুখোশ খোলার মতো বেশকিছু কারণ ঘটিয়েছে। সবচেয়ে সমালোচনা তীব্র হয়েছে কোবিড বুলেটিন সংক্রান্ত প্রচারে ধোঁয়াশা রাখা নিয়ে, যার ফলে জনমানসে শঙ্কা ছড়াতে থাকে তথ্যের লুকোচাপা চলছে। এই সন্দেহ অবিশ্বাসের বাতাবরণ রাজ্য সরকার এখনও দূর করে উঠতে পারে নি। তার ওপর আকস্মিক ব্যাপক সংকট তৈরী হয়ে গেল কয়েকশ সেবিকারা দলে দলে কাজ ছেড়ে আপন আপন রাজ্যে চলে যাওয়ায়। এরা বাংলার তুলনায় বেশ পশ্চাদপদ ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা তথা সুদূর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বাসিন্দা এবং প্রায় শত শতাংশ গরিব শ্রেণীর ঘর থেকে তৈরি হওয়া। কোবিড পরিণামে যখন সর্বত্র আশঙ্কা গ্রাস করছে কাজ করেও মজুরি/বেতন না পাওয়ার, উপরন্তু ব্যাপক কাজ ছাঁটাই হওয়ার বিপদের, তখন এই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে আচমকা ঘনিয়ে এল সম্পূর্ণ বিপরীত ধাক্কা! কিছু ভিন রাজ্যের সেবিকারা ‘স্বেচ্ছায়’ কাজ ছেড়ে চলে গেলেন! কোন সমস্যার সংকটে পড়ে এটা ঘটল যা কিনা বিপজ্জনক বেকারির খাতায় আবার নাম ওঠার পরিণামের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়াল! ব্যাপক কোবিড সংক্রমণের ভীতি! নাকি অন্য কোনো রহস্যাবৃত কারণ!

nurse

 

এই ঘটনা ঘটেছে কলকাতা মহানগরীর নামীদামী সব বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সরকারের কাছে কোনো আগাম খবর থাকল না! এক যুদ্ধকালীন সময়ে এ কেমন পর্যবেক্ষণের নমুনা! বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাকে কেবল তোয়াজ করে আসা হয়েছে, তার প্রতিফলে ভুক্তভোগী হতে হবে সংকটাপন্ন রোগীদের। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রচুর অব্যবস্থা, কোবিড মোকাবিলার প্রস্তুতি-পরিকাঠামো তৈরি করার ক্ষেত্রে দেখা তো গেল কি হিমশিম খাওয়া অবস্থা। হাসপাতালের মধ্যে জরুরী কোন দ্বিতীয়, তৃতীয় বিকল্প সম্প্রসারিত বিভাগ তৈরি বা নতুন ছোট ছোট হাসপাতাল ব্যবস্থা করে ফেলার প্রশ্নে পরিকল্পিত প্রয়াসের দৌড় নেই। পরন্তু সমস্যার ওপর সমস্যা এখন ব্যাপক সেবিকা-শূন্য হয়ে পড়ার ঘটনা ও প্রবণতা। পাশাপাশি, বাধ্যতামূলক শারীরিক পরীক্ষা করার প্রশ্নে বৈষম্য ধরা পড়ল রাজ্যে আসা ও ফিরে আসা দু’ধরনের মানুষের প্রতি দুরকম আচরণে। যারা বাংলাদেশ থেকে বিমানে এলেন তাদের বরণ করা হল প্রাথমিক কোবিড পরীক্ষা করে। আর, ভিন রাজ্যগুলো থেকে ফিরে আসা হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেককেই কোনো প্রাথমিক পরীক্ষা না করে চালান করে দেওয়া হল, তারা গরিব মজুর শ্রেণীর বলেই কি তাদের প্রতি এত অসংবেদী অবহেলা!

মমতা সরকার, তৃণমূল কংগ্রেস এইসব প্রশ্নের জবাব দেবে কি! সেই মুখ নেই। পুড়েছে যথেষ্ট।

খণ্ড-27