প্রধানমন্ত্রীকে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠি
aip

প্রতি
প্রধানমন্ত্রী
ভারত সরকার

বিষয়: লক ডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ে মহিলাদের অধিকার,পুষ্টি ও নিরাপত্তা

মহাশয়

গতকাল আপনি করোনা বিশ্ব মহামারীকে রোখার জন্য ৩ মে, ২০২০ পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন। আপনি যখন লকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কথা ঘোষণা করছিলেন, আমরা আশা করেছিলাম যে বিগত ২১ দিনের লকডাউনে মহিলারা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, আপনি নিশ্চয়ই তার সমাধানের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপের কথাও ঘোষণা করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আপনার ভাষণে তেমন কোনো পদক্ষেপের কথা ছিল না। আজকের প্রকাশিত নির্দেশিকায়, ২০ এপ্রিল থেকে কিছু অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সেটিতেও মহিলারা উপেক্ষিতই রয়ে গেলেন।

মহাশয়, গত ২৫ দিনে এমন কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে,যাতে ধরা পড়েছে মহিলারা কী ভয়ঙ্কর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। বিহারের জেহানাবাদ এক মা চোখের সামনে কোলের সন্তানকে মারা যেতে দেখলেন, স্রেফ একটি অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে। পাঞ্জাব থেকে গয়ায় ফিরে আসার পর এক যক্ষ্মারোগিনী কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকাকালীন ধর্ষিতা হন ও পরে মারা যান (তার টেস্ট রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ ছিল)। ‘করোনা যোদ্ধা’ মহিলাদের উপর আক্রমণের খবরও আসছে। আপনার কাছে প্রত্যাশা ছিল, আপনি এমন কিছু পদক্ষেপ নেবেন যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।অ্যাপোয়ার পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই,এই বিশ্বমহামারির বিরুদ্ধে ও অনশনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং মহিলা ও শিশুদের উপর আক্রমণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। তাই নিম্নোক্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে আপনার পক্ষ থেকে পদক্ষেপ দাবি করছি :

১) এটা আশ্চর্যজনক যে সরকার এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যেগুলি মহিলাদের প্রতি বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেবে। আমরা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে এটা জেনে স্তম্ভিত হয়ে গেছি যে সরকার জুন মাস পর্যন্ত পিএনপিডিটি আইনের বিধি শিথিল করেছে, অত্যন্ত সহজ ভাষায় যার মানে, সরকার লিঙ্গ নির্ণয় পরীক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের জন্য যে হাস্যকর যুক্তিটি দেওয়া হয়েছে তা হল – এতে নাকি  মহিলাদের, চিকিৎসকদের, যে সব হাসপাতালে ও বেসরকারি ক্লিনিকে এই আলট্রাসাউন্ড টেস্ট হয় তাদেরও সময় বাঁচবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি । আমরা দাবি করছি – অবিলম্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রক যাতে পিএনপিডিটি আইনের বিধিগুলি কঠোরভাবে কার্যকর করে তার জন্য নির্দেশ দিতে হবে। এই আইন কার্যকর করতে বিশেষ নজরদারি রাখার জন্য জেলা প্রশাসনগুলিকেও নির্দেশ দিতে হবে।

২) লকডাউনের মধ্যে গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে মহিলাদের সুরক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেই। আমাদের দাবি, প্রত্যেক জেলায় ২৪×৭ হটলাইন চালু করতে হবে এবং সাহায্যপ্রার্থী মহিলাদের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য একটি বিশেষ টিম গঠন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হলে মহিলা সংগঠনগুলির সাহায্য নিতে হবে।

৩) আপনার ১৪ এপ্রিলের ভাষণে আপনি বলেছেন, দেশে খাদ্যশস্য এবং ওষুধের কোনো অভাব নেই। তাই যদি হয়, তাহলে মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে কেন? শিশু, গর্ভবতী মা এবং প্রসূতি মা, যারা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি থেকে পুষ্টিকর খাদ্য সামগ্রী পেয়ে থাকেন, তারা বেশিরভাগ জায়গাতেই এপ্রিল মাসের অর্ধেক পেরিয়ে যাবার পরেও, কিছুই পাননি। কয়েকটি রাজ্য (উদাহরণস্বরূপ বিহার) পুষ্টির পরিবর্তে উপকারভোগীদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার কথা বলেছে। এই তালিকা তৈরির জন্য অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকাদের উপকারভোগীদের অ্যাকাউন্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর,আধার নম্বর সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি থেকে যারা পুষ্টিযুক্ত খাবার পান তাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সরকার কী করে আশা করে যে এই মহিলাদের কাছে সমস্ত নম্বর থাকবে? দ্বিতীয়ত খাদ্য এবং পুষ্টি এমন একটি প্রয়োজন যা অবিলম্বে মেটাতে হবে। তৃতীয়ত তারা সরকারি হারেই খাদ্যমূল্যবাবদ নগদ অর্থ পাবেন। কিন্তু বাজার থেকে তাদের বাজারদামেই কিনতে হবে যা সরকারি দামের থেকে বেশ খানিকটা বেশি। তাই আমাদের দাবি,খাদ্য ও পুষ্টি অবিলম্বে বণ্টন করা হোক। এবং মহিলারা আগে যে পরিমাণে এটা পেতেন, তার দ্বিগুণ পরিমাণে তাদের তা দিতে হবে কারণ তাদের পরিবার এখন তাদের যত্ন করার জন্য নূন্যতম অর্থ ব্যয় করার অবস্থায় নেই।

৪) আপনার ভাষণে আপনি দরিদ্রদের খাওয়ানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন রেখেছেন। অনেক সমাজকর্মী ও সংগঠনসহ বহু মানুষ ইতিমধ্যেই এই কাজে নেমে পড়েছেন যদিও কোথাও কোথাও তাদের প্রশাসনের বাধার মুখে পড়ে কাজ থামিয়ে দিতে হচ্ছে । কিন্তু সরকারকে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে।গুদামে মজুত খাদ্যশস্য না পচিয়ে, সরকারের দেশের সমস্ত গরিব বস্তিতে আগামী তিন মাসের জন্য কমিউনিটি খাদ্যকেন্দ্র খুলে দেওয়া উচিত এবং এটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

৫) লকডাউনে মহিলা ও শিশুদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে,সরকারি রেশন দোকান থেকে বিনামূল্যে মহিলাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং শিশুদের জন্য দুধ বণ্টন করতে হবে।

৬) আশা এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন সরকারের কাছ থেকে একটা মাস্ক পর্যন্ত পাচ্ছেন না,তখন ‘করোনা যোদ্ধাদের’ সম্মান জানানোর কথা নিছক পরিহাস বলে মনে হয়। আপনার ‘গামছা চ্যালেঞ্জ’ তাদের জন্য চমৎকার যারা বাড়িতে থাকে, কিন্তু যারা ফিল্ডে কাজ করছেন তাদের কোনো কাজে লাগবে না। একইভাবে, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের করোনা যুদ্ধে কাজে লাগানো হচ্ছে,কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য বিমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমরা দাবি করছি, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সাফাই কর্মীদের অতিরিক্ত তিন মাসের বেতনের সমতুল বা ১০০০০ টাকার সাম্মানিক ভাতা (অনার মানি) দিতে হবে। আশা এবং অন্য সমস্ত প্রকল্প কর্মীদের স্বাস্থ্য বিমার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্য যোদ্ধা – চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ কর্মীদেরও পদ অনুযায়ী সাম্মানিক ভাতা দিতে হবে।

৭) আমাদের দাবি, দেশের সাম্প্রদায়িক বিভাজনকামী শক্তি ও লুঠেরা রাজকে নিয়ন্ত্রণে আনা হোক।

মহাশয়, আমাদের অনুরোধ, উপরি উক্ত সমস্ত বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হোক।

আপনার বিশ্বস্ত
রতি রাও, সভানেত্রী
মীনা তেওয়ারি, সাধারণ সম্পাদক
কবিতা কৃষ্ণাণ, সম্পাদক
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি

খণ্ড-27