আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলাম কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের ৪টি জেলা কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগণা ও হাওড়া জেলাকে ‘হটস্পট’ এলাকা বলে ঘোষণা করেছে। চটকল শ্রম নিবিড় শিল্প। এই চটকলগুলো প্রধানত উত্তর ২৪ পরগনা ও হাওড়া জেলায় অবস্থিত। আমাদের শঙ্কা মিল চালু হলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভবনা আছে।
আপনি জানেন, গত ১৩ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি পশ্চিমবঙ্গের ১৮টি চটকলের তালিকা প্রকাশ করে জানান, এই মিলগুলাতে ২৫% শ্রমিক নিয়ে উৎপাদন শুরু করা যাবে। এই ছাড়পত্রের চিঠি তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেও দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ১৫ এপ্রিল ঘোষণা করেন সব চটকলগুলিতে ১৫% শ্রমিক নিয়ে ২০ এপ্রিল থেকে কাজ চালু হবে। শ্রমিকদের রোস্টারের মাধ্যমে কাজ করতে বলেছেন। ১৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে চটকল চলা প্রায় অসম্ভব। এতে সিংহভাগ শ্রমিকই কাজ পাবেন না এবং চটকলগুলিতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ এবং বিশৃঙ্খলা বাড়বে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিকায় চটকল শ্রমিকদের লকডাউন পিরিয়ডের পূর্ণ মজুরি দেওয়ার বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। শ্রমিকরা অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা এবং শ্রমিকদের মেডিকেল কেয়ার-এর বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের পক্ষ থেকে চালু হতে যাওয়া মিল কর্তৃপক্ষকে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়া উচিত।
১) সরকারের ঘোষণা ১৫% শ্রমিক নিয়ে কাজ হবে। যারা কাজ পাবেন না, তাদের লক ডাউনের সময়ের পূর্ণ মজুরি দিতে হবে।
২) চটকলে নথিভুক্ত পার্মানেন্ট, স্পেশাল বদলি, বদলি শ্রমিক সংখ্যা খুব কমই আছে। এর বাইরে সিংহভাগ শ্রমিক অনথিভুক্ত (অনথিভুক্ত বদলি, অবসর প্রাপ্ত কিন্তু কর্মরত, ঠিকা ইত্যাদি) এদের সম্পর্কে সরকারকে ভাবনা চিন্তা করে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে।
৩) শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করাবার কথা বলা হয়েছে, এই বিষয়ে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে।
৪) চটকল এলাকাগুলো ঘন বসতিপূর্ণ, এখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ হলে শুধুমাত্র এই এলাকাগুলো নয়, আপনারা রাজ্যকে করোনা প্রকোপ থেকে মুক্ত রাখার জন্য যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন তাও ব্যর্থ হবে। শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে সাবান, মাস্ক, স্যানিটাইজার দেওয়া। মিল ও সমগ্র অঞ্চল জীবাণুমুক্ত করার জন্য দিনে দুবার বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া।
নবেন্দু দাশগুপ্ত
সভাপতি, বেঙ্গল চটকল মজদুর ফোরাম, এআইসিসিটিইউ
২১/১/ক্রীক রো, কলকাতা ৭০০০১৪, যোগাযোগ ৬২৯০০০৮২৫৪