খবরা-খবর
সকলের জন্য খাদ্য সরবরাহের দাবিতে ১২ এপ্রিলের থালা বাজানো, অনাহার পালনের কর্মসূচী
kok

লকডাউন যত এগিয়ে চলেছে, দরিদ্র জনগণের কাছে যেটুকু টাকা-পয়সা ছিল তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। যাদের সাহায্য প্রয়োজন তাদের আবেদন গ্রাহ্য করা হচ্ছে না বলে ক্রমেই আরও বেশি সংবাদ এসে পৌঁছচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো হল শহর ও গ্রামের টোলা ও মহল্লাগুলো। বঞ্চিত অংশের মানুষদের এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, কিন্তু সত্যিটা হল, তাদের দুর্দশা লাঘবে প্রকৃত কাজটা করছে সামাজিক সংগঠনগুলো, সাধারণ জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। সরকার যে সমস্ত ঘোষণা করেছে সেগুলো প্রধানত প্রচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

সহায়তা চাওয়ার জন্য যে নম্বরগুলো দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যেই সেই নম্বরগুলো কাজ করছে না বলে খবর এসেছে। অনেক ক্ষেত্রেই আবার সাহায্য এত দেরিতে পৌঁছেছে যে ততদিনে জনগণের অনাহারে থাকার সময়কাল এক বা দু-দিন পেরিয়ে গেছে। যে সমস্ত স্থান থেকে জনগণকে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই সেই সমস্ত স্থানে লাইন অতি দীর্ঘ বলে দেখা গেছে। বাড়ির কাছাকাছি বিতরণ কেন্দ্র না থাকায় অনেক অঞ্চলেই জনগণকে দূর থেকে এসে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। সরকার এবং প্রশাসনিক কতৃপক্ষ বিতরণের ব্যাপারে একটু পরিকল্পনা করলে জনগণকে এত দুর্ভোগ সইতে হত না। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রেণী বিদ্বেষও অত্যন্ত প্রকট হয়ে সামনে আসছে, এবং ঘৃণাবর্ষী প্রচার ও ধর্মীয় বিদ্বেষও প্রবল রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। যাঁরা এই সমস্ত কাণ্ড করছেন তাদের বোঝা উচিৎ যে, মহামারী শ্রেণী বা ধর্মের ভাগাভাগি বোঝে না, আর তারা যা করছে তা মহামারীর বিস্তারের পথকেই প্রশস্ত করবে।

সরকার আমাদের থালা বাজাতে এবং মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালাতে বলেছিল। এগুলো না হয় হল। এখন কিন্তু মোদী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হল লকডাউন যতদিন চলবে ততদিন বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের, গ্ৰামে তাদের পরিবারগুলোকে এবং অন্যান্য দরিদ্র ও অভাবী জনগণকে খাদ্য ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য সরবরাহ করা।

“কারুর থালা যেন খালি না থাকে”, এই দাবিকে সামনে রেখে ১২ এপ্রিল শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং লকডাউনের অন্যান্য বিধি মেনে বিভিন্ন রাজ্যেই কর্মসূচী পালন করা হয়। জনগণ দুয়োর ও চৌকাঠে দাঁড়িয়ে কর্মসূচীতে অংশ নেন। ঐ কর্মসূচীর অন্যতম বিষয় হিসাবে একদিন অনাহার পালনের আহ্বান জানানো হয়, উদ্দেশ্য সংহতি জ্ঞাপন। মোদী সরকারকে বলা হয় – সবার খালি থালায় খাবার দিতে হবে, ঘরে খাবার, রেশন ও জ্বালানি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কোনো মানুষই নিজেকে অবহেলিত ও অসুরক্ষিত না মনে করেন।

tn

 

তামিলনাডুতে পুলিশি নিপীড়ন : ১২ এপ্রিল তামিলনাড়ুর দিন্দিগুল জেলার বসন্ত কদিরপালায়াম গ্রামের জনগণ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে থালা বাজাতে লাগলেন। একটু পরেই পৌঁছে গেল তহশিলদার ও পুলিশ। কিন্তু গোটা গ্রামই কর্মসূচীতে শামিল হয়েছিল, আর তাই জনগণের কথা শোনা ছাড়া পুলিশ ও তহশিলদারের কাছে অন্য উপায় রইল না। জনগণ থালা বাজিয়েই তাঁদের প্রয়োজনগুলো তাঁদের কাছে রাখলেন।

মাদুরাইয়ে তামিলনাড়ুর পুলিশ ১২ এপ্রিলের আগের দিন আরওয়াইএ কর্মী কমরেড তামিল এবং এআইএসএ কর্মী কমরেড কলিস্বরমকে গ্রেপ্তার করে ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত আটকে রাখে। কমরেড তামিলের মোবাইল ফোনটিও পুলিশ নিয়ে নেয়। সিপিআই(এমএল) রাজ্য কমিটি সদস্য এবং বস্তিবাসী আন্দোলনের নেতা কমরেড ভেল মুরুগানকে কোয়েম্বাটুরে গ্রেপ্তার করে থানায় বেশ কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে রাতে ছাড়া হয়। সিপিআই(এমএল)-এর আর এক নেতা এবং ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী গোবিন্দরাজকে গ্ৰেপ্তার করে নিয়ে গিয়ে তাঁর হেনস্থা ঘটাতে ধরমপুরি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে জোরজবরদস্তি করোনা পরীক্ষা করানো হয়। আরো কয়েকজন কমরেডকেও ধরে নিয়ে গিয়ে হয়রানি করা হয়। কিন্তু পুলিশের এই সমস্ত পদক্ষেপ সত্ত্বেও কমরেডরা মনোবল না হারিয়ে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে এবং লকডাউনের বিধি মেনে কর্মসূচীকে সফল করার পথে অটল থাকেন।

উত্তরপ্রদেশেও সিপিআই(এমএল) কমরেডদের পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হয়। যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ সীতাপুরে সিপিআই(এমএল) নেতা অরুন লালকে ১১ এপ্রিল তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে, উদ্দেশ্য জনগণকে আতঙ্কিত করা যাতে তাঁরা ১২ এপ্রিলের কর্মসূচীতে যোগদান না করেন। তবে, সোনভদ্র, বারানসী, পিলভিট, মির্জাপুর, রায়বেরিলি, খিরি, বালিয়া, লক্ষ্ণৌ ও অন্যান্য জেলায় দরিদ্র জনগণ থালা বাজিয়ে তাঁদের দাবিগুলোকে তুলে ধরেন।

অন্ধ্রপ্রদেশে এবং কর্নাটকেও কিছু স্থানে জনগণ থালা বাজিয়ে তাঁদের দাবিগুলোকে তুলে ধরেন।

punj

 

পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরের বাটালায় পুলিশ পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালায় এবং নেতৃবৃন্দকে সারাদিন থানায় আটকে রাখে। কিছু জিনিসপত্র নষ্ট করা ছাড়াও পার্টি অফিসে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর-টাকেও বাজেয়াপ্ত করে এবং সিপিআই(এমএল)-এর পাঞ্জাব রাজ্য সম্পাদক গুরমিত সিং বখতপুরা এবং আইনজীবী অভিষেক হানিকে থানাতে বেশ কয়েক ঘন্টা আটক রাখে। ওরা হুমকি দেয়, লকডাউনের ফলে ক্ষতিগ্ৰস্ত শ্রমিকদের তালিকা প্রশাসনের  কাছে  পাঠিয়ে এবং মিডিয়ার কাছে প্রকৃত ঘটনা বিবৃত করে তাঁরা যেন “সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে প্ররোচিত না করেন”! কমরেড গুরমিত তাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, তিনি ও তাঁর কমরেডরা যা করছেন সেটা প্রতিটি নাগরিকেরই ন্যায়সঙ্গত কর্তব্য এবং গ্রেপ্তার করে তাঁদের ওপর মামলা চাপালেও তাঁরা এটা করা থেকে বিরত হবেন না। ভয় দেখানোর কৌশল কাজে না দেওয়ায় এসএসপি অবশেষে তাঁদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, অবশ্য তার আগে তাঁদের কারফিউ পাশ বাতিল করে দেন এবং স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দেন যে তাঁদের যেন বাড়ির বাইরে বেরোতে না দেওয়া হয়। এ সত্বেও সিপিআই(এমএল)-এর পাঞ্জাব শাখা ১২ এপ্রিলের কর্মসূচী চালিয়ে যায় এবং সাংরুর, ভাতিন্ডা, বারনালা, মানসা, অমৃতসর এবং গুরুদাসপুরের অনেক স্থানে থালা বাজিয়ে দাবি তুলে ধরার কর্মসূচী পালিত হয়। বাটালা, কলনৌর, ধারিওয়াল এবং অন্যান্য স্থানে শ্রমিক ও কৃষকরা ১৪ এপ্রিল পুলিশি নিপীড়ন এবং লকডাউন সৃষ্ট দুর্দশার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দিবস পালন করেন।

অনাহারের বিরুদ্ধে এবং খাদ্যের জন্য কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে একদিন অনাহারে থাকাটা পালন করেন উত্তরাখণ্ডের সমস্ত কমরেড এবং বিভিন্ন জেলার সমর্থকরা। বন সংলগ্ন প্রায় এক ডজন গ্রামের কৃষকরা এবং শিল্প শ্রমিক, ছাত্র ও যুবকরাও এই উদ্যোগে অংশ নেন।

jkh

 

ঝাড়খণ্ডের সুদূর গ্রামের আদিবাসীরা এবং শিল্প শহরাঞ্চলের কমরেডরাও এদিনের কর্মসূচীতে অংশ নেন।

উড়িষ্যার কোরাপুট ও রায়গড়া জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামাঞ্চলগুলি থেকেও এদিনের কর্মসূচী উদযাপনের খবর পাওয়া গেছে। ভুবনেশ্বর এবং অন্যান্য স্থানে পার্টি কর্মীরা অনাহার পালন করেন।

beg

 

বিহারের হাজার-হাজার গ্রামে জনগণ থালা বাজিয়ে জনগণের দুর্দশার প্রতি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রায় সমস্ত জেলার শহর ও গ্রামের দরিদ্ররা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে থালা বাজিয়ে এবং পোস্টার তুলে ধরে তাঁদের বক্তব্য পেশ করেন। বিহার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ভাষণ না দিয়ে রেশন দেওয়ার আবেদন জানিয়ে রাজ্য রাজধানী পাটনায় নজরকারা কর্মসূচী পালিত হয়। পার্টির সমস্ত নেতাই একদিনের অনশনে বসেন। ভোজপুর, আরোয়াল, সিওয়ান, জাহানাবাদ, গয়া, মুজাফফরপুর, এবং অন্যান্য জেলায় কর্মসূচী সংগঠিত হয়।

খণ্ড-27