এআইসিসিটিইউ-র ১৮-১৯ এপ্রিলের কর্মসূচী
19a

দেশব্যাপী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিখরচায় ঘরে ফেরানো, ১০,০০০ টাকা লকডাউন ভাতা, তিন মাস রেশন এবং তাঁদের জন্য একপ্রস্থ অ্যাকশন প্ল্যান এর দাবিতে ১৮-১৯ এপ্রিল অবস্থান অনশনের ডাক দেওয়া হয়। বলা হয় – কর্মীদের গ্রেপ্তার ও পুলিশী হেনস্থাকে এআইসিসিটিইউ নিন্দা করছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের দিয়ে বাধ্যতামূলক শ্রম করানোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকাকে এআইসিসিটিইউ নিন্দা করছে। অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। এআইসিসিটিইউ-র পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনও ধরনের ছাঁটাই বা মজুরি হ্রাস চলবে না। শ্রমিকদের দোরে দোরে রেশন, খাদ্য দ্রব্য সরবরাহ করতে হবে, তাঁরা যে সমস্ত আশ্রয়স্থলে বর্তমানে রয়েছেন, সেগুলোকে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত করতে হবে। অসংগঠিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।

কর্মসূচী পালিত হয় কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে।

সকাল দশটায় বাঁশদ্রোণী তে সূর্য সেন মেট্রো স্টেশনের সামনে উল্লিখিত ওই সমস্ত দাবিতে প্রায় কুড়ি মিনিট পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচী চলে। পোস্টার প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শ্লোগান চলে। পথচলতি কিছু মানুষ, এবং অন্যান্য কিছু নাগরিক ঔৎসুক্যের সাথে গোটা প্রোগ্রামটা পর্যবেক্ষণ করে। পুলিশের সক্রিয়তা ক্রমে বেড়ে ওঠায়, বিশাল পুলিশবাহিনী এসে পড়ায় দাবি সনদ সম্বলিত পোস্টার দেওয়ালে টাঙিয়ে কর্মসূচী শেষ হয়। সৌরভ, গণেশ, রাজিব সহ নির্মাণ শ্রমিকরা এই কর্মসূচীতে অংশ নেন। বেহালার ১২১ নং ওয়ার্ডে এই কর্মসূচী পালিত হয়। পোস্টার প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কমরেডরা পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে, শ্লোগান দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বিক্ষোভ দেখান। মিথিলেশ, কমলেন্দু, সৈকত, রঞ্জিত সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। গাঙ্গুলিপুকুর পার্টি অফিসের সংলগ্ন রাস্তার ধারে এই কর্মসূচী পালিত হয়। একইরূপে, পোস্টার প্লাকার্ড সহ কমরেডরা জড়ো হয়ে শ্লোগান দেন। আইসার কয়েকজন কমরেড ও সামিল হয়। বাসুদেব বোস, প্রবীর দাস, জয়তু দেশমুখ, বাবুন চ্যাটার্জি, রণজয়, ঋতম, শ্যামল, সহ অন্যান্য কমরেডরা উপস্থিত ছিলেন। বাঘাযতীনের ১০২নং ওয়ার্ডে শীলা দে সরকার ও রামগড়-এর মিড-ডে-মিল কর্মীদের নিয়ে গতকাল ১৯ এপ্রিল বাহাদুর মাঠে ৫০ জন গরিব মানুষকে কিছু খাদ্য সামগ্রী যেমন চাল, আলু, সোয়াবিন, বিস্কুট, মুড়ি বিতরণ করা হয়। পার্টির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমরেড ভরত দাস ও কমরেড  মন্টু ঘোষ। এছাড়া  এলাকার কিছু স্থানীয় যুবক ও ত্রাণ বিলিতে অংশ গ্রহণ করেন।

gf

 

উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচী পালিত হয়। অশোকনগরে এআইসিসিটিইউ নির্মাণ শ্রমিকদের সামিল করে পরিযায়ী শ্রমিকদের খাদ্য ভাতা নিরাপত্তার দাবিতে স্টেডিয়াম মোড়ে ব্যানার প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। নৈহাটির শিবদাসপুর গ্রামে নির্মাণ ও কৃষিমজুর সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দিন গ্রামে ত্রাণ বিলি করার পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর দাবিতেও সোচ্চার হয়। এই দিন দুপুরে সিপিআই, সিপিআই(এম) ও সিপিআই(এম‌এল) লিবারেশন পার্টির পক্ষ থেকে বসিরহাট এসডিও-র কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয় এবং গতকাল বামপন্থী নেতাদের গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করা হয়। আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলে ছিলেন বসিরহাট আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস। তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। ১৯ এপ্রিল বেলঘরিয়ার শহীদ বেদী মোরে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও সিপিআই(এম) যৌথভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে। এই প্রতিবাদী কর্মসূচী থেকেও সার্বজনীন রেশন ও আরো বেশি টেস্ট কিটের ব্যবহারের পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের দাবিগুলোও তুলে ধরা হয়। এই জেলার ছাত্র কমরেডরা এই দিন আইসার ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্র ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজের দাবিতে সকাল থেকেই লকডাউনের মধ্যেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রতীকী অনশনে সামিল হয়। ২০ এপ্রিল মধ্যমগ্রামে লিবারেশন সহ বাম দলসমূহের রাস্তায় নেমে যৌথ কর্মসূচী গ্রহণ করে। খাদ্য, ভাতা, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রভৃতি দাবিতে দীর্ঘক্ষণ প্রতিবাদ জানানো হয়।

nad

 

এই রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশজুড়েই পরিযায়ী শ্রমিকদের সংহতিতে প্রতিবাদ দিবস পালিত হল। লকডাউনের বিধি নিষেধ মেনেই, বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা, অনশন ধর্মঘট, প্ল্যাকার্ড হাতে প্রদর্শন করে বিভিন্ন দাবি সামনে আনা হয়। এই সমস্ত প্রতিবাদী কর্মসূচীগুলোতে পরিযায়ী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ভালই ছিল। এমনকি, বহু জায়গায় আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের সদস্যরাও সামিল হন। তামিলনাড়ুর বেশ কয়েকটা জায়গায় ঘরের মধ্যে অনশনরত কর্মীদের পুলিশী হেনস্থা ও হুমকির মুখে পড়তে হয়। সিপিআই(এমএল)-এর নেতা অতিখ অহমেদ ও চারজন কর্মীকে অযোধ্যা জেলার পুলিশ গ্রেফতার করে ঘরের মধ্যে অনশন চালানোর ‘অপরাধে’। পরে অবশ্য তিনজন ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পায়।

দেশজুড়ে এআইসিসিটিইউ ও আয়রালার কয়েক হাজার কর্মী অনশনে অংশ নেন। সিপিআই(এমএল)-এর নেতা ও বিধায়কবৃন্দ, নাগরিক সমাজের ব্যক্তিবর্গ এবং ছাত্ররাও পরিযায়ী শ্রমিকদের সংহতিতে অনশনে সামিল হন।

নির্মাণ, গ্রামীণ ও কৃষি শ্রমিক, পাওয়ার লুম, বিড়ি, পরিবহন, স্বাস্থ্য কর্মী ও কারখানার শ্রমিক, হকার, বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক এই কর্মসূচীতে যোগ দেন। নানান রাজ্য ও রাজ্য রাজধানীতে এই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।

খণ্ড-27