দিল্লীর কৃষকদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় পালবাজার মোড়ে থালা বাজিয়ে, সেই বাজনার তালে তালে স্লোগান দিয়ে মোদীর মন কি বাত ভাষণের বিরুদ্ধে প্রচার করলেন যাদবপুরের সাথিরা। দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন ব্যাপক মানুষের। আগে থাকতেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো পথসভা। সভায় বক্তব্য রাখেন কিসান মহাসভার রাজ্য সম্পাদক জয়তু দেশমুখ, যাদবপুর পার্টি কমিটির তমাল চক্রবর্তী এবং দুই ছাত্র নেতা আকাশ দেশমুখ ও ঋতম মাজি। প্রায় দু ঘন্টা ধরে কৃষি ও কৃষকের প্রশ্নে, মোদী সরকারের কোম্পানিরাজ কায়েম করা, কালোবাজারি মজুতদারী বৈধ করা, খাদ্য সুরক্ষা নিরাপত্তা ধ্বংস করার বিরুদ্ধে বক্তব্য বহু মানুষ দাঁড়িয়ে শোনেন। চলমান কৃষক আন্দোলনের প্রতি ব্যাপক মানুষের সমর্থন-সহমর্মিতা রয়েছে তা বোঝা যায়। এর পাশাপাশি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে মোদী সরকারের ফ্যাসিস্ট রাজ কায়েমের বিরুদ্ধে নানান দিক থেকে বক্তারা সোচ্চার হন। এই কর্মসূচী সকলকেই উজ্জীবিত করেছে।
দার্জিলিং জেলার ফাঁসীদেওয়া ব্লকের রাঙাপানি অঞ্চলে এক মিছিল পরিক্রমা করে। মিছিল শেষে রাঙাপানি মোড়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য সদস্য বাসুদেব বসু। মিছিলের নেতৃত্ব দেন সারা ভারত কিসান মহাসভার জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ, গ্রামীণ মজুর সমিতির নেতা শরৎ সিংহ, শ্রমিক নেতা দীপক ঘোষ। শেষে নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল পোড়ানো হয়।
আন্দোলনরত কৃষকদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কোতরং ২ নং কলোনি বাজারে থালা বাজিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘মন কি বাত’ বয়কট করে বিক্ষোভ দেখায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন।কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে, শিক্ষা চাকরি স্বাস্থ্যের অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে আইসা ও আরওয়াইএ সহ বিভিন্ন গণসংগঠন বেহালার বকুলতলা থেকে মিছিল করে ও সরশুনায় পথসভা হয়।
পাণ্ডুয়ার বেড়েলা – কোচমালি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোচমালি রায়পাড়ায় কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে থালি বাজাও কর্মসূচী হয়।
দিল্লিতে অবস্থানরত কৃষকদের কৃষি আইন বাতিল এর দাবির সমর্থনে এবং আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর বজবজে মহিলা সমিতির কর্মসূচী পালিত হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদিকা কমরেড কাজল দত্ত, কমরেড দেবযানী গোস্বামী,কমরেড অনিন্দিতা মালিক সহ আরো অনেকে।
গত ২৬ ডিসেম্বর সারাভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির নেতৃত্বে বাখরাহাট বাজারে কৃষক আন্দোলনের শহীদ সাথীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।উপস্থিত ছিলেন সারাভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির দঃ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদিকা কমরেড কাজল দত্ত, কমরেড পূর্ণিমা হখলদার, কমরেড শিপ্রা সরদার সহ আরো অনেকে।
৩০ ডিসেম্বর নদীয়ার নাকাশীপাড়া বিধানসভার অন্তর্গত বেথুয়াডহরীতে দিল্লীতে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে দীর্ঘ সময় ধরে এক গণ অবস্থান সংগঠিত হলো। জনবহুল এই গঞ্জে স্থানীয় বহু মানুষ দাঁড়িয়ে বক্তাদের বক্তব্য শোনেন। দিল্লী আন্দোলনে প্রয়াত শহীদদের প্রতিকৃতি সম্মলিত শহীদ স্মারকে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পথ চলতি বহু মানুষ সহমর্মিতা জ্ঞ্যাপন করেন। গত ২৩ ডিসেম্বর ধুবুলিয়া নেতাজীপার্কে অনুরূপ অবস্থান কর্মসূচী সমগ্র এলাকায় ব্যাপক প্রচার পায়। এই দুটি কর্মসূচীতে গ্রামাঞ্চলের কৃষক কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। আগামীদিনে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক আন্দোলনের প্রচারকে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচীগুলিতে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) নদীয়া জেলা সম্পাদক সুবিমল সেনগুপ্ত, এআইকেএম রাজ্য সম্পাদক জয়তু দেশমুখ, আয়ারলার রাজ্য নেতা কাজল দত্তগুপ্ত, এআইসিসিটিইউ নেতা জীবন কবিরাজ, আরওয়াইএ নেতা সন্তু ভট্টাচার্য, জেলা পার্টির নেতা পরিক্ষিৎ পাল, এআইকেএম নেতা কৃষ্ণ প্রামানিক প্রমুখ।
গত ২৬ ডিসেম্বর চাকদা এলাকায় শহর এবং পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে এক প্রচার গাড়ি বিভিন্ন এলাকায় পরিক্রমা করে।
বর্ধমানের কালনা আগ্রাদহ বাজারে সভা হয়।
২৭ ডিসেম্বর পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা ২নং ব্লকের অকালপৌষ গ্রাম পঞ্চায়েতের আগ্রাদহ বাস স্ট্যান্ডে দিল্লীর কৃষক আন্দোলনের প্রয়াত কৃষক শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সভা অনুষ্ঠিত হয়। শহীদদের ছবির ব্যানার সামনে রেখে শহীদ বেদীতে মাল্যদান ও এক মিনিট নিরবতা পালন করা হল। তারপর কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন বাতিল ও বিদ্যুৎ বিল ২০২০ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা কমিটির সদস্য কমরেড কুনাল বক্সী, কমরেড অশোক চৌধুরী ও রফিকুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন কমরেড প্রদ্যুত ঘোষ।
পুর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর বিধানসভার কুসুমগ্রাম বাজারে ৩০ ডিসেম্বর এআইকেএম, আয়ারলা ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের মন্তেশ্বর লোকাল কমিটির উদ্যোগে অবস্থান বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ চলে। অবস্থান মঞ্চে দিল্লীর আন্দোলনের প্রয়াত কৃষক শহীদদের ছবির ব্যানার রাখা হয়। কমরেড অশোক চৌধুরীর গণসঙ্গীতের মাধ্যমে কর্মসূচীর সূচনা হয়। বক্তব্য রাখেন আয়ারলার জেলা সম্পাদক কমরেড আনসারুল আমান মন্ডল, এআইকেএম নেতা কমরেড মনসুর মন্ডল, যুব নেতা কমরেড মাহবুব মন্ডল ও কমরেড অশোক চৌধুরী। অবস্থানে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা সম্পাদক কমরেড সলিল দত্ত ও আয়ারলার রাজ্য সভাপতি কমরেড সজল পাল। দাবি ওঠে কেন্দ্রের কৃষক-বিরোধী নয়া কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। জনবিরোধী বিদ্যুৎ বিল ২০২০ বাতিল করতে হবে। গরিব মানুষের সমস্ত ধরনের ঋণ মকুব করতে হবে। বছরে ২০০ দিন কাজ ও ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। বক্তারা কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট নরেন্দ্র মোদী সরকারের জনবিরোধী কার্যকলাপ তুলে ধরেন। কৃষি আইনের বিভিন্ন কৃষকবিরোধী দিক তুলে ধরেন এবং কর্পোরেট নির্ভরতার দিকগুলো তুলে ধরেন। বিদ্যুৎ বিল গরিব মানুষের উপর যে অর্থনৈতিক চাপ নামিয়ে আনবে সে দিকগুলো তুলে ধরেন। কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল বাতিল করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান। শেষে জেলা কমিটির সদস্য কমরেড শিবু সাঁতরার জ্বালাময়ী শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
রবিবার ২৭ ডিসেম্বর পার্টির খড়দহ শাখার উদ্যোগে স্থানীয় রহড়া বাজারে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে প্রচার সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিব শংকর গুহ রায়, সুজিত ঘোষ, সুব্রত দাশগুপ্ত, অর্চনা ঘটক, শিক্ষক পার্থ রায় প্রমুখরা বক্তব্য রাখেন।
কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে যাদবপুর সান্ধ্য বাজারে এক প্রতিবাদী সংস্কৃতিক সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজক, পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ অন্তর্ভূক্ত “সংযোগ” সাংস্কৃতিক সংস্থা। সভায় বক্তা ছিলেন সুনীল মন্ডল ও বিরেন ব্যানার্জী। কবিতা পাঠ করেন স্বপ্না চক্রবর্তী ও পার্থ গুহ। স্বরচিত গণসংগীত পরিবেশন করেন প্রণব মুখার্জী, সুব্রত ভট্টাচার্য, নীতীশ রায়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কান্ডীর সাংস্কৃতিক সংস্থা।
৩০ ডিসেম্বর বাঘাযতীন বাসষ্ট্যান্ডে দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে এ্ক প্রতিবাদী সভার আয়োজন করা হয়। সভার উদ্যোক্তা ছিলেন বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিন সাংস্কৃতিক সংগঠন।এই” সংহতি সভা”য় বক্তব্য রাখেন সুপ্রতীপ দেবদাস, অধ্যাপক মানস ঘোষ, ধীরাজ বোস, দিল্লি আন্দোলনের প্রত্যক্ষদর্শি ফারুক ইসলাম প্রমুখ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শোভনা নাথ। সভায় প্রতিবাদী ছবি আঁকেন চিত্রশিল্পীরা। সভাটি সুপ্রতিপ দেবদাসের সুচারু পরিচালনায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে।
ইতোমধ্যেই নাট্যকর্মী জয়রাজ কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে শুরু করেছেন কোলকাতা থেকে দিল্লীব্যাপী পদযাত্রা ও প্রচার কর্মসূচী। সামাজিক মাধ্যমে জয়রাজ জানিয়েছেন নানা রাজ্যের ট্রাক ড্রাইভার সহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি সহমর্মিতা জানাচ্ছেন।
কৃষক স্বার্থ বিরোধী কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মাসাধিক কাল যাবৎ পথে নেমে আন্দোলনকারী কৃষকরা শুধু তাঁদের দাবিতেই থেমে থাকেননি। তাঁরা দেশের বিভিন্ন জেলে আটক থাকা রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে গত ২৩ ডিসেম্বর তালোজা জেলে ভীমা কোরেগাঁও এবং এলগার পরিষদ মামলায় কারাবন্দি লেখক শিল্পী বুদ্ধিজীবীরা আন্দোলনকারী কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে জেলের ভেতরেই একদিনের প্রতীকী অনশনে সামিল হয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করেছেন। এর চারদিন পর দমদম কেন্দ্রীয় জেলে বন্দি রাজনৈতিক বন্দিরা গত ২৭ ডিসেম্বর এই কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে একদিনের প্রতীকী অনশন করেছেন। পরেরদিন অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলের রাজনৈতিক বন্দিরাও এই কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে একদিনের অনশনে সামিল হয়েছেন। এভাবেই আমাদের দেশের কারারুদ্ধ রাজনৈতিক বন্দিরা সরকারের কৃষকস্বার্থ বিরোধী তিনটি বিল প্রত্যাহারের দাবির প্রতি নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপন করে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সারা ভারত কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটির ডাকে ২৯ ডিসেম্বর পাটনায় হাজারে হাজারে কৃষক রাজভবন অভিযানে সামিল হন। সিপিআই(এমএল)-এর রাজ্য সম্পাদক কুনাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি মারফত বিহারের কৃষকদের এই ঐতিহাসিক অভিযানকে অভিনন্দিত করে তিনটি কালা কৃষি আইনকে বাতিল, বিদ্যুৎ বিল ২০২০-র প্রত্যাহার, মান্ডি ব্যবস্থার পুনপ্রতিষ্ঠা এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ভিত্তিতে ধান সহ অন্যান্য ফসল ক্রয়ের ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা প্রদানের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে অব্যাহত রাখার আবেদন রাখেন। তিনি বলেন, “আজকের এই রাজভবন অভিযান প্রমাণ করলো, পাঞ্জাবের মতো বিহারের কৃষকেরাও মোদী সরকারের ওই তিনটি কৃষি বিরোধী আইনের পুরোপুরি বিরুদ্ধে। বিহারের কোথাও এমএসপি-র ভিত্তিতে ধান ক্রয় করা হয় না। বিহারে মান্ডি ব্যবস্থা গুটিয়ে ফেলা হয়েছে ২০০৬ সালেই। এর বিরুদ্ধেই বিহারের কৃষকেরা তাদের ক্রোধ ব্যক্ত করতে আজ রাজভবন অভিযানে পথে নামেন এবং বিজেপি জেডিইউর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। কৃষকদের এই দাবির সামনে সরকারকে মাথা নোয়াতেই হবে।
কৃষকদের শান্তিপূর্ণ রাজভবন অভিযানের উপর যে পুলিশী দমন নেমে আসে কমঃ কুনাল তার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভরত কৃষকদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হওয়ার বদলে সরকার তাদের উপর লাঠি গুলি চালিয়েছে। সরকারী এই নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পুলিশী দমনের দরুন বেশ কিছু কৃষকের গুরুতরভাবে আহত হওয়ার রিপোর্ট এসেছে।
বিধান সভার সংসদীয় দলের নেতা মেহবুব আলাম, এআইকেএম-এর জাতীয় পরিষদের নেতা সুদামা প্রসাদ, আরওয়াইএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি মনোজ মঞ্জিল, আইসার সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সৌরভ সহ সিপিআই(এমএল)-এর সমস্ত বিধায়ক, কৃষক, ছাত্র ও মহিলা সংগঠনের কর্মীরা এই রাজভবন অভিযানে সামিল হন। ভূতপূর্ব বিধায়ক এবং এআইএআরএলএ-র সাম্মানিক সভাপতি রামেশ্বর প্রসাদ-এর মতো প্রবীণ নেতাও নবীনদের সাথে পা মেলান কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে।