চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে কালবিলম্বের কারণে জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটির উদ্যোগে অনির্দিষ্টকালীন গণঅবস্থান তিন সপ্তাহ অতিক্রম করেছে। ত্রিপুরার শিক্ষক কর্মচারী আন্দোলনের ইতিহাসে এই আন্দোলন নয়া ইতিহাস রচনা করেছে। বর্তমান সময়ের নিরিখে আজ এই আন্দোলনস্থল যেন শিক্ষকদের শাহীনবাগে পরিণত হয়েছে। পূর্বতন সরকারের ভুলের কারণে ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের চাকরিচ্যুতি রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে ও সমাজ জীবনে এক বিপর্যয় নামিয়ে নিয়ে আসে। তারপর এডহক ভিত্তিতে ২০২০-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষকেরা দায় দায়িত্ব পালনের পর সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে তাদের চাকরিচ্যুতি ঘটে। ইতিমধ্যে এত বড়ো সংখ্যায় শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতি স্বাভাবিক নিয়মে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে ওঠে। ২০১৮-র ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বর্তমান শাসক দল বিজেপি-র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নেতারা প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য বিকল্প সরকারি চাকুরির ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি রাখেন। ভিশন ডকুমেন্টে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি প্রকাশিত হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে সরকার নীরব। ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আইনের দরজা তাদের জন্য একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০-র ৩১ মার্চের পর থেকে এডহক চাকরি চলে যাওয়ায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। তাঁরা আর কোনও উপায় না দেখে আন্দোলনের পথ গ্রহণ করেন। রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করে দেখার জন্য সময় দেন। সর্বশেষ বিধানসভা অভিযানের পর মুখ্যমন্ত্রী দু’মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেই সময় অতিক্রান্ত। শিক্ষামন্ত্রী চার হাজার শূন্যপদে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা বললেও চাকরিচ্যুতদের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। এই পদ্ধতি তাদের জন্য বিকল্প চাকুরি কোনোভাবেই সুনিশ্চিত করে না। দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনীহা, দোদুল্যমানতা শিক্ষকদের জীবনে হতাশা ও অনিশ্চয়তাকে তীব্র করে তুলেছে। সরকারের অবহেলায় এবং অনীহার কারণে প্রয়াত ৭৭ জন শিক্ষকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন অনুষ্ঠান আজ অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও মর্মস্পর্শী হয়ে উঠেছে।
এই উদ্বেগপূর্ণ পরিস্থিতিতে এই প্রশ্নে আজ আইনের বিচার যেখানে অবরুদ্ধ, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা সেখানে শুরু। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় মানুষের মর্যাদাকে সামাজিক মৌলিক গুণাবলী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আমাদের সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায়। জীবনের অধিকার মৌলিক অধিকার, তাকে রক্ষা করা আজ রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
তাই চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের ও তাদের আপনজনের বিপন্ন জীবন বাঁচাতে, তাদের প্রতি ন্যায় ও স্বচ্ছতা দিতে সরকারকে আর কাল বিলম্ব না করে বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশান ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি। তেরো হাজার শূন্যপদ পুনরায় সৃষ্টি করে সহজভাবে তাদের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য দাবি জানাচ্ছে। রাজ্যে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও গণতন্ত্র প্রিয় নাগরিকদের তাদের জন্য বিকল্প চাকরির দাবিতে সোচ্চার হয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে সরকারকে বাধ্য করতে এগিয়ে আসার আহ্বান রাখছে।